অ্যামচ্যামের সভায় এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর আর্থিক খাতের সংস্কারসহ অর্থনীতিতে ৫ চ্যালেঞ্জ

বর্তমান প্রেক্ষাপটে অর্থনীতির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সামনে ৫টি চ্যালেঞ্জ রয়েছে

অ্যামচ্যামের সভায় এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর আর্থিক খাতের সংস্কারসহ অর্থনীতিতে ৫ চ্যালেঞ্জ
অ্যামচ্যামের সভায় এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর আর্থিক খাতের সংস্কারসহ অর্থনীতিতে ৫ চ্যালেঞ্জ

প্রথম নিউজ, ঢাকা : বর্তমান প্রেক্ষাপটে অর্থনীতির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সামনে ৫টি চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এগুলো হলো-আর্থিক খাতের সংস্কার, উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবিলা, মানবসম্পদ উন্নয়ন এবং বেসরকারি খাতের সম্প্রসারণ অর্থাৎ বিনিয়োগ বাড়ানো। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি। রোববার আমেরিকান চেম্বার অব কমার্স ইন বাংলাদেশ (অ্যামচ্যাম) আয়োজিত আলোচনাসভায় এসব বিষয় উঠে এসেছে। সভায় ‘বাংলাদেশ ম্যাক্রো-ইকোনমিক আউটলুক ইন দ্য ইভলভিং গ্লোবাল ফ্যানোমেনা’ শীর্ষক প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) কান্ট্রি ডিরেক্টর এডিমন গিন্টিং। এতে সভাপতিত্ব করেন অ্যামচ্যামের প্রেসিডেন্ট সৈয়দ এরশাদ আহমেদ। বক্তব্য দেন সংগঠনের ভাইস প্রেসিডেন্ট সৈয়দ মাহমুদ কামাল এবং ইউএস অ্যাম্বাসির পলিটিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কাউন্সিলর স্কট ব্রান্ডন।

এডিমন গিন্টিং বলেন, বাংলাদেশ অনেক অগ্রগতি করলেও করোনা মহামারি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে তা ঝুঁকির মুখে পড়েছে। এ অবস্থায় সামনে থাকা চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলার জন্য এখন থেকেই গুরুত্ব দিতে হবে। এক্ষেত্রে ব্যাংকিং খাতের সংস্কার জরুরি। এ খাতে অপারেশনাল দক্ষতা, দুর্বল অভ্যন্তরীণ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা এবং উচ্চ খেলাপি ঋণ রয়েছে। উচ্চ অর্থনীতির দেশে যেতে হলে এখানে শক্তিশালী সংস্কার প্রয়োজন। সেই সঙ্গে আর্থিক খাতে সুশাসন প্রয়োজন। এছাড়া সংকট কাটাতে বেসরকারি খাত ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারে। যেমন: এরই মধ্যে বেসরকারি খাত জিডিপি প্রবৃদ্ধির চালিকাশক্তি হিসাবে নেতৃত্ব দিয়েছে। এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে হবে। এক্ষেত্রে একটি ক্রমবর্ধমান মধ্যবিত্ত ভোক্তা গোষ্ঠী এবং সহায়ক সরকারি নীতি বেসরকারি খাতের বিকাশের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে পারে। এছাড়া বেসরকারি খাত উদ্ভাবন এবং উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিতে নেতৃত্ব দিতে পারে। সুগঠিত উদ্যোগের সঙ্গে ক্রমবর্ধমান ডিজিটাল ল্যান্ডস্কেপ ব্যবহার করতে পারে বেসরকারি খাত। পাশাপাশি বাংলাদেশের বেসরকারি খাতের জন্য নতুন নতুন খাতে সম্প্রসারণ এবং বিদ্যমান খাতে উন্নতি করার উল্লেখযোগ্য সুযোগ রয়েছে। সেই সুযোগ কাজে লাগাতে হবে। বেসরকারি খাতকে অবকাঠামোর জন্য বিশাল চাহিদা মেটাতে অবকাঠামো অর্থায়নে সরকারের পাশাপাশি ভূমিকা রাখতে হবে। সেই সঙ্গে জলবায়ু অর্থায়ন হলো আরেকটি ক্ষেত্র, যেখানে বেসরকারি খাত একটি প্রধান ভূমিকা নিতে পারে। এক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত সমাধান প্রবর্তন করতে হবে।

জলবায়ু ঝুঁকি বিষয়ে তিনি বলেন, সরকার ইতোমধ্যেই ডেল্টা প্ল্যান-২১০০ বাস্তবায়ন করছে। কিন্তু আরও অনেক চ্যালেঞ্জ আসবে। সেগুলো মোকাবিলায় কার্যকর উদ্যোগ প্রয়োজন। অবকাঠামোর ক্ষেত্রে যথেষ্ট চ্যালেঞ্জ রয়েছে বলে মনে করেন তিনি। বাংলাদেশে উচ্চ পরিবহণ ও লজিস্টিক খরচ এবং কম দক্ষতা রপ্তানির ক্ষেত্রে অন্যতম বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। চার লেন সড়কের কাজ শুরু হলেও সেগুলোয় ধীরগতি থাকছে। সমুদ্রবন্দর, স্থলবন্দরসহ অন্যান্য অবকাঠামোগত বাধা দূর করতে উদ্যেগ অব্যাহত রাখতে হবে। এক্ষেত্রে একটি জাতীয় লজিস্টিক নীতিমালা ও মাস্টার প্ল্যান প্রয়োজন।

সৈয়দ এরশাদ আহমেদ বলেন, আমরা প্রায়ই অন্যান্য উন্নত দেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতামূলক বৈশ্বিক র‌্যাংকিংয়ে আমাদের দেশের নাম দেখতে পাই। সামষ্টিক অর্থনৈতিক সাফল্যের এমন অনেক অসাধারণ গল্প রয়েছে, যা বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের তুলনায় উপরে নিয়ে গেছে। কিন্তু যখন আমাদের অর্থনীতি এগিয়ে যাচ্ছিল এবং উচ্চ আয়ের দেশে যাওয়ার পথে হাঁটছিল, তখনই কোভিডের মতো ঝড় এসেছে। এ অবস্থা থেকে পুনরুদ্ধারের সময়ই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ আরেকটি ধাক্কা দেয়। ফলে বিশ্বব্যাপী সরবরাহ চেইন বাধাগ্রস্ত হয়েছিল। জ্বালানি তেলসহ নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় মূল্যস্ফীতির চাপ সৃষ্টি হয়েছে। পাশাপাশি বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় আমরা লোডশেডিংয়ের মতো পুরোনো পরিস্থিতিতে ফিরে গিয়েছিলাম।

তিনি আরও বলেন, বৈদেশিক প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ এবং দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় বাংলাদেশের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি এখনো ইতিবাচক প্রবণতায় রয়েছে। রেমিট্যান্স আয় ফিরে এসেছে। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। নিঃসন্দেহে বাংলাদেশ গত এক দশকে দারিদ্র্য বিমোচনে একটি অসাধারণ এবং উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। সরকারের একনিষ্ঠ প্রচেষ্টা এবং অসংখ্য সরকারি-বেসরকারি উন্নয়ন কর্র্মকাণ্ডের যথাযথ ও সফল বাস্তবায়নের ফলে এটি সম্ভব হয়েছে। অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের মতো জীববৈচিত্র্যসমৃদ্ধ বাংলাদেশ পরিবেশগত অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে লড়াই করছে, যা দেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং পরিবেশগত টেকসই অবস্থা নিশ্চিত করতে মূলধারার উন্নয়ন নীতির সঙ্গে পরিবেশ সম্পর্কিত বিষয়গুলোকে একীভূত করতে হবে।

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel: