অবরোধে শুরু মাস, কপালে ভাঁজ নিউমার্কেটের ব্যবসায়ীদের

অবরোধে শুরু মাস, কপালে ভাঁজ নিউমার্কেটের ব্যবসায়ীদের

প্রথম নিউজ, ঢাকা : বিএনপি ও জামায়াতের ডাকা তিন দিনের সর্বাত্মক অবরোধের দ্বিতীয় দিনে সকাল থেকেই ক্রেতাশূন্য সময় পার করছেন নিউমার্কেটের ব্যবসায়ী ও দোকানিরা। অবরোধের প্রথম দিন (মঙ্গলবার) সাপ্তাহিক ছুটি হওয়ায় বন্ধ ছিলো পুরো এলাকার সব দোকানপাট। তবে বুধবার (১ নভেম্বর) সকাল থেকেই বিক্রেতারা দোকান খুলেছেন। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত ক্রেতার দেখা না মেলায় অবসর সময় কাটাচ্ছেন দোকান কর্মচারী ও বিক্রয় কর্মীরা। আর মাসের শুরুতেই এ ধরনের ক্রেতা শূন্যতা এবং পরিবেশের অস্থিতিশীলতা পুরো মাসের আয়ের ওপর প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।

বুধবার দুপুরে নিউমার্কেট, সায়েন্স ল্যাবরেটরি ও আশপাশের এলাকার মার্কেটগুলোতে এমন চিত্র দেখা যায়। সরেজমিন সায়েন্স ল্যাবরেটরি থেকে নীলক্ষেত পর্যন্ত নিউমার্কেট, গাউছিয়া মার্কেট, নূর ম্যানশন মার্কেট, ধানমন্ডি হকার্স মার্কেট, ঢাকা নিউ সুপার মার্কেট, চন্দ্রিমা সুপার মার্কেট, নুরজাহান সুপার মার্কেট, গ্লোব শপিং সেন্টার, এলিফ্যান্ট রোড ঘুরে দেখা যায়, মার্কেটগুলোতে ক্রেতার তেমন একটা সমাগম নেই। অবরোধ, মিরপুরে গার্মেন্টস শ্রমিকদের আন্দোলন ও সকাল থেকেই গরম বেশি হওয়ার কারণে ক্রেতাসমাগম কম বলেও ধারণা করছেন ব্যবসায়ীরা।

শুধু নিউমার্কেট নয়, আশপাশের অন্যান্য মার্কেটগুলোতেও অন্যসময়ের তুলনায় লোকসংখ্যা একেবারেই কম দেখা যায়। নীলক্ষেত মিউনিসিপ্যাল মার্কেট ও বইয়ের দোকানেও দেখা যায়নি ভিড়।

সায়েন্স ল্যাবরেটরি বাইতুল মামুর জামে মসজিদ মার্কেটের রাতুল ফ্যাশনের বিক্রয় কর্মী হাফিজ বলেন, রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে মানুষ ভয়ে ঘর থেকে বের হতে চান না। একান্তই কাজকর্ম না থাকলে বের হন না। সেজন্য এর পুরোপুরি প্রভাব আমাদের ওপর পড়েছে। অন্যান্য দিন এমন সময় কাস্টমারের দেখা পেলেও দুপুর পর্যন্ত একজন কাস্টমারের দেখাও পাইনি। এই এলাকা পুরোটাই কেমন ফাঁকা দেখতেই পাচ্ছেন।

ধানমন্ডি হকার্স মার্কেটে শাড়ি বিতানের স্বত্বাধিকারী সিরাজুল ইসলাম বলেন, এমনিতেই মানুষের হাতে টাকা-পয়সা না থাকার কারণে কেনাকাটা কম করে। তার ওপর যদি আবার রাজনৈতিক অস্থিরতা হয় তাহলে তো কথাই নেই। যে শূন্যস্থান তৈরি হচ্ছে আগামী সপ্তাহ পুরোটা সময় যাবে এই মার্কেটে লোক ফিরতে। আর যদি স্বাভাবিক অবস্থা বজায় না থাকে তাহলে হয়তো এখন থেকেই বেচাকেনায় ভাটা পড়বে।

মিরপুরে গার্মেন্টস শ্রমিকদের অসন্তোষের ফলে চলমান আন্দোলনের কারণেও ক্রেতা সংকট তৈরি হচ্ছে বলে মনে করছেন অনেক ব্যবসায়ী। ক্রেতা না থাকায় সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে ফুটপাতের দোকানিদের। তারা আশঙ্কা করছেন এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে আসন্ন শীতকে সামনে রেখে যে ব্যবসার প্রস্তুতি তারা নিয়েছেন সেটি ভেস্তে যাবে।

বেলাল হোসেন নামের ফুটপাতের এক ভাসমান ব্যবসায়ী বলেন, আমাদের মূল জীবন জীবিকা এই ফুটপাতের বেচাবিক্রির ওপর নির্ভর করে। এখন রাজনৈতিক অস্থিরতা, অবরোধ-হরতাল এবং শ্রমিকদের আন্দোলনের কারণে মানুষজন আসছে না। আর আমাদের বেচাকেনাও বন্ধ। এমন চলতে থাকলে আবারো খারাপ অবস্থার মধ্যে পড়তে হবে।

তবে ব্যবসার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন বলে মনে করছেন নিউমার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ডা. দেওয়ান আমিনুল ইসলাম শাহীন। তিনি বলেন, আমরা সব সময় শান্তি চাই। এই অঞ্চলে অসংখ্য মানুষ তাদের পরিবারের একমাত্র ভরসা হয়ে কাজ করেন। মাসের শুরুতে এ ধরনের হোঁচট আমাদের জন্য বড় বিপর্যয় বয়ে আনবে।

দোকানের কর্মচারীরাও কর্মস্থলে আসতে এবং রাতে আবার বাসায় ফিরে যাওয়ার ক্ষেত্রে আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, আগামীকালও অবরোধ আছে। অর্থাৎ মাসের প্রথম দুটি দিনই আমরা ক্রেতার দেখা পাচ্ছি না। আবার নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে দ্রুত দোকান বন্ধ করতে হচ্ছে। এগুলো আমাদের জন্য লোকসান বয়ে আনবে। এভাবে চলতে পারে না। সেজন্য আমরা ব্যবসায়ীরা সবসময় সুন্দর পরিবেশ প্রত্যাশা করি।