৯৮ শতাংশ সড়কই হাইওয়ে পুলিশের তত্ত্বাবধায়নের বাইরে
বরিশাল মহাসড়ক
প্রথম নিউজ, বরিশাল: বরিশাল জোনের আওতায় রয়েছে ১ হাজার ৬০৩ দশমিক ৯৪ কিলোমিটার সড়ক। যার মধ্যে রয়েছে তিনটি জাতীয় মহাসড়ক, ৭টি আঞ্চলিক মহাসড়ক ও ৬১টি জেলা মহাসড়ক। এই বিশাল দৈর্ঘ্যের সড়কের মধ্যে মাত্র ৩২ কিলোমিটারের একটু বেশি মহাসড়ক দেখভাল করছে হাইওয়ে পুলিশ। সেই ৩২ কিলোমিটারেও নেই দায়িত্ব পালনের জন্য প্রয়োজনীয় গাড়ি, সরঞ্জাম ও রেকার।
এমনকি দুর্ঘটনাস্থলে দ্রুত পৌঁছার জন্য পুলিশের নিজেদের যাতায়াতের গাড়িটিরও বেহাল দশা। ফলে দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় ৯৮ শতাংশ সড়ক নেই হাইওয়ে পুলিশের তত্ত্বাবধায়নে। আর এসব সংকটের কথা স্বীকার করছে হাইওয়ে পুলিশ হেডকোয়াটার্স।
জানা গেছে, বরিশাল বিভাগ বরিশাল ও পটুয়াখালী দুটি সড়ক সার্কেলে বিভক্ত। এর মধ্যে বরিশাল, ঝালকাঠি, পিরোজপুর ও ভোলা জেলার সড়ক মিলিয়ে বরিশাল সড়ক সার্কেল এবং পটুয়াখালী ও বরগুনা জেলার সড়ক মিলিয়ে পটুয়াখালী সড়ক সার্কেল গঠিত। দুই সার্কেলের মোট দৈর্ঘ্য ১ হাজার ৬০৩ দশমিক ৯৪ কিলোমিটারের মধ্যে বরগুনা ও পিরোজপুর ব্যতীত ৪ জেলায় মোট জাতীয় মহাসড়ক রয়েছে ১২৭ দশমিক ৯৮ কিলোমিটার। এছাড়া ৬ জেলায় আঞ্চলিক মহাসড়ক রয়েছে ২৯০ দশমিক ৯ কিলোমিটার এবং জেলা মহাসড়ক রয়েছে ১ হাজার ১৮৫ দশমিক ৯১ কিলোমিটার।
এর মধ্যে হাইওয়ে পুলিশ মাদারীপুর জোনের আওতায় রয়েছে বরিশাল জেলার গৌরনদী উপজেলার ভুরঘাটা থেকে বাবুগঞ্জ উপজেলার রাকুদিয়া নতুনহাট পর্যন্ত ৩২ কিলোমিটারের বেশি কিছু অংশ সড়ক। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর বরিশাল বিভাগে গাড়ির চাপ কয়েক গুণ বাড়ায় একমাত্র গৌরনদী হাইওয়ে থানা পুলিশ তা সামলাতে পারছে না। আওতায় থাকা ৩২ কিলোমিটারে দায়িত্ব পালনেই হিমশিম খেতে হয় তাদের।
নিরাপদ সড়ক চাই বরিশাল জেলার আহ্বায়ক রুহুল আমিন বলেন, দক্ষিণাঞ্চলের সড়ক-মহাসড়কে বিশৃঙ্খল অবস্থা। হাইওয়ে পুলিশের নজরদারি না থাকায় তা বহুগুণে বেড়েছে। দুর্ঘটনা, বেপরোয়া গতি সামলাতে হলে হাইওয়ে পুলিশের গুরুত্ব অপরিসীম। কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে বরিশাল জেলা ও বিভাগে প্রয়োজনীয় সংখ্যক হাইওয়ে পুলিশ স্টেশন নেই। আমি মনে করি হাইওয়ে পুলিশ ও স্টেশন বাড়িয়ে সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানো উচিত।
বরিশালের সাধারণ নাগরিক সমাজের (বসানাস) আহ্বায়ক কাজী ফিরোজ বলেন, ২০২৩ সালে এসেও সড়ক মনিটরিং হচ্ছে না। এখনো যদি সড়কে সিসি ক্যামেরার আওতায় নিয়ে না আসা যায়, সড়কে যদি হাইওয়ে পুলিশের সার্বক্ষণিক টহল নিশ্চিত না করা যায় তাহলে সরকারের ভিশন কখনোই পূরণ হবে বলে মনে হয় না। সার্বিকভাবে বরিশাল বিভাগের সড়ক অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে। আমার দাবি গুরুত্বপূর্ণ সড়কে হাইওয়ে পুলিশ যেন দায়িত্ব পালন করতে পারে।
গৌরনদী হাইওয়ে থানার মাত্র একটি পিকআপ ভ্যান ও দুটি মোটরসাইকেল রয়েছে। তবে নেই কোনো রেকার। আর যে পিকআপটি রয়েছে সেটিও লক্কর-ঝক্কর অবস্থা। গাড়িটির গতিসীমা ৪০ কিলোমিটারের ওপরে নিলেই ত্রুটি দেখা দেয়। পুরাতন এই গাড়িটি দিয়েই অধিক ও বেপরোয়া গতির যানবাহনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হয় তাদের। কেউ অমান্য করলে ধাওয়া দিয়ে তাদের ধরে আইনের আওতায় আনা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অসম্ভব। তাছাড়া দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছতেও বেশি সময় লাগে তাদের। আবার নিজেদের অধীনে রেকার না থাকায় সড়কের ওপর আটকেপড়া যানবাহন সরিয়ে নিতে অন্যের সময় ও সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করতে হয়।
গৌরনদী হাইওয়ে থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম রসুল মোল্লা বলেন, একটি পিকআপ ও দুটি মোটরসাইকেল দিয়ে দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। তাছাড়া আমাদের রেকারও নেই। রেকার রাখার মতো জায়গাও নেই। সংকট থাকলেও আমরা সাধ্যমত সর্বোচ্চ সেবা দিয়ে যাচ্ছি।
হাইওয়ে মাদারীপুর জোনের পুলিশ সুপার শাহিনুর আলম খান জানান, বরিশাল ও পটুয়াখালী সড়ক জোনে হাইওয়ে পুলিশ স্টেশন স্থাপনের পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে। প্রাথমিকভাবে হলে কোনো ভাড়া বাসায় হলেও আমরা চাইছি কার্যক্রম চালু করতে। যেহেতু পটুয়াখালী-কুয়াকাটাতে প্রচুর পর্যটক যাতায়াত রয়েছে। তাছাড়া বরিশাল বিভাগের প্রতিটি সড়কের ব্যস্ততা বহুগুনে বেড়েছে। আমি অল্প দিনেই বরিশাল থেকে কুয়াকাটা মহাসড়ক পরিদর্শনে যাব। বিশেষ করে পটুয়াখালী জোনে দ্রুতই কাজ শুরু করতে চাই।
বাংলাদেশ হাইওয়ে পুলিশের প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মো. শাহাবুদ্দিন খান বলেন, সমগ্র বাংলাদেশে প্রায় ৯ হাজার কিলোমিটার সড়ক-মহাসড়ক রয়েছে। এরমধ্যে এক তৃতীয়াংশ সড়ক হাইওয়ে পুলিশের তত্ত্বাবধায়নে রয়েছে। বাকি প্রায় ৬ হাজার কিলোমিটার এখনো জেলা ও মেট্রোপলিটন পুলিশ তত্ত্বাবধায়ন করে। মূলত জনবল সংকট ও প্রয়োজনীয় ইউনিট না থাকায় শতভাগ সড়কপথ হাইওয়ে পুলিশ দেখভাল করতে পারে না।
হাইওয়ে পুলিশের এই শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, সরকারের পরিকল্পনা রয়েছে জনবল সংকট নিরসন ও ইউনিট বৃদ্ধি করার। জনবল ও ইউনিট বাড়লে বরিশাল বিভাগেও সকল সড়ক হাইওয়ে পুলিশের আওতায় থাকবে। তবে তার আগে মহাসড়কের যেকোনো বিষয় স্থানীয় জেলা ও মেট্রোপলিটন পুলিশকে অবহিত করা যাবে।