হকার আর বহিরাগতদের উৎপাত ঢাবিতে

অস্বস্তি ও নিরাপত্তা শঙ্কায় শিক্ষার্থীরা

হকার আর বহিরাগতদের উৎপাত ঢাবিতে

প্রথম নিউজ, ঢাকা: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সম্প্রতি হকারদের আনাগোনা বেড়ে গেছে। একইসঙ্গে বেড়েছে বহিরাগতদের প্রবেশও। এতে ক্যাম্পাসে নিরাপত্তাজনিত শঙ্কা তৈরি হয়েছে। শিক্ষার্থীদের দাবি, প্রক্টরিয়াল টিমের তদারকির অভাবে হকারের উৎপাত ও ভ্রাম্যমাণ দোকান বেড়েছে।

সরেজমিনে ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি, সেন্ট্রাল লাইব্রেরি, হাকিম চত্বর ও আশপাশের এলাকায় প্রায় শতাধিক হকার অস্থায়ী দোকান সাজিয়ে বসেছেন। হাতে চিপস, চানাচুর, চা-কফি নিয়েও অসংখ্য হকার ফেরি করে বেড়াচ্ছেন। আবার অনেক শিশু-কিশোর হকার পানি বিক্রি করছে হেঁটে হেঁটে। এছাড়া টিএসসি ও ডাস চত্বরে একদল শিশু ফুলের মালা বিক্রি করছে, যাদের সংখ্যাও বেড়ে গেছে।

শুক্রবার ও শনিবার বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ক্যাম্পাসের বর্তমান-সাবেক শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি অনেক বহিরাগত ব্যক্তির আগমন ঘটে। বহিরাগত আর হকারের ভিড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি, কার্জন হল এলাকা, কলা ভবন এলাকা, হাকিম চত্বরে নির্বিঘ্নে হাঁটাচলাও কঠিন হয়ে পড়ে।

এদিকে, ক্যাম্পাস লাগোয়া বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বসেছে অমর একুশে বইমেলা। এতে গোটা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় মানুষের স্রোত বেড়েছে কয়েকগুণ। বই কেনার আগে বা পরে অনেকে বিশ্ববিদ্যালয় ঘুরে দেখছেন। বেশি মানুষ দেখে হকাররাও বেশি বেশি ক্যাম্পাসে ঢুকে পড়ছে।

কিছুদিন আগে এসব হকার ক্যাম্পাসে প্রবেশের সাহস পেত না। তখন প্রক্টরিয়াল টিমের তদারকিতে সাময়িক বন্ধ ছিল হকার ও অবৈধ দোকান বসানো। কোনো হকার ক্যাম্পাসে প্রবেশ করলে তাদের চায়ের ফ্লাস্ক, ঝালমুড়ি, সিগারেট ইত্যাদি জব্দ করে প্রক্টর অফিসে রেখে দেওয়া হতো। এখন এ তৎপরতা নেই।

হকারদের অনেকে শিশু-কিশোর: টিএসসির সামনে চা-কফি বিক্রি করছিল ১২ বছরের এক কিশোর। সে জানায়, তার বাসা কামরাঙ্গীরচর। সে এখানে প্রতিদিন চা-কফি বিক্রি করে। দুবার প্রক্টরিয়াল টিম তার চায়ের ফ্লাস্ক নিয়ে গেছে। বিক্রি ভালো হওয়ায় পুনরায় ফ্লাস্ক কিনে চা-কফি বিক্রি করছে।

‘ফুল কেনেন, না কিনলেও টাকা দেন’: ক্যাম্পাসের বাইরে থেকে ফুল কিনে এনে কিছু নারী ডাস চত্বর এবং রাজু ভাস্কর্যের সামনের যাত্রী ছাউনির পাশে বসে মালা গাঁথেন। পরে তারা মালাগুলো ছোট বাচ্চাদের দিয়ে ক্যাম্পাসে বিক্রি করান। অনেক সময় ছোট বাচ্চারা জোর করে ফুল হাতে ধরিয়ে দিয়ে ফেরত নিতে অস্বীকার করে এবং টাকা দাবি করে। এসব বাচ্চার কাছ থেকে কেউ ফুল না কিনলেও ‘কিছু খেতে চায়’ বলে টাকা দাবি করে। এসব ঘটনা শিক্ষার্থীদের অস্বস্তিতে ফেলে।

অসন্তুষ্ট অনুমোদিত দোকানিরা: বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের সামনে বসা একজন স্থায়ী দোকানি বলেন, হকারদের আনাগোনা বাড়ায় আমাদের বিক্রি কমে গেছে। আমরা প্রশাসনকে ভাড়া দিয়ে ব্যবসা করছি কিন্তু তারা প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে টাকা কামিয়ে যাচ্ছে। আবার আমাদের দোকানে মাঝেমধ্যে কিছু শিক্ষার্থী টাকা না দিয়ে ‘ফাও’ খেয়ে চলে যায়। তাদের চিনিও না আবার কিছু বলতেও পারি না।

ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, একসময় ক্যাম্পাসে কয়েকশ দোকান ছিল। গত বছর সাবেক উপাচার্য সব তুলে দিলে ক্যাম্পাস শান্ত ও সুন্দর হয়। বহিরাগতদের প্রবেশও লক্ষণীয় হারে কমে যায়। কিন্তু ইদানীং ক্যাম্পাসে আবারও সেই অবৈধ দোকানপাট ও হকারদের দেখতে পারছি। এগুলো ক্যাম্পাসের স্বাভাবিক পরিবেশ নষ্ট করছে। প্রশাসনের উচিত আবারও কঠোর পদক্ষেপ নিয়ে এগুলো উচ্ছেদ করা।

তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী হাসান তারিক বলেন, ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের প্রবেশের পাশাপাশি হকার ও অবৈধ দোকানের সংখ্যা বেড়ে গেছে। ক্যাম্পাসের সুন্দর পরিবেশ নষ্ট করছে এসব হকার। তাছাড়া সার্বিক নিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন থেকে যায়।

যা বলছে প্রক্টরিয়াল টিম: এ বিষয়ে প্রক্টরিয়াল টিমের ৫ সদস্যের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তারা বলেন, প্রক্টরিয়াল টিমে সদস্য কম। তারা একদিকে গেলে হকাররা অন্যদিকে চলে যায়। টিএসসিতে গেলে হলপাড়ায় চলে যায়, কার্জনে গেলে হকাররা টিএসসি চলে যায়। আবার যখন কোনো হকার বা অস্থায়ী দোকানিকে ধরতে যাওয়া হয় তখন মানবিক দিকের কথা বলে অনেক শিক্ষার্থী আটকানোর চেষ্টা করে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. মাকসুদুর রহমান বলেন, আমাদের টিম ক্যাম্পাসের সার্বিক নিরাপত্তা রক্ষায় সবসময় সতর্ক থেকে কাজ করে যাচ্ছে। আমাদের ছোট মোবাইল টিম, হকারদের একদিকে তাড়া করলে তারা অন্যদিকে চলে যায়। আমার অফিসে এখনো দুই ব্যাগ সিগারেট জব্দ করা আছে। কয়েক বস্তা খাবার ও শতাধিক চায়ের ফ্লাস্ক জব্দ করেছি আমরা। কিন্তু তাদের ব্যবসা লাভজনক হওয়ায় সকালে জব্দ করা হলে বিকেলে আবার হকারি শুরু করে।

তিনি বলেন, বইমেলা শুরু হওয়ায় মানুষের সমাগম বেড়েছে, তাই কিছু হকার তাদের ভিড়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে ব্যাবসা চালিয়ে যাচ্ছে। আশা করি বইমেলা শেষ হলে হকারদের পরিমাণ কমে যাবে। তবে ক্যাম্পাসে কোনো স্থায়ী দোকান নেই। তাদের বিরুদ্ধে আমরা কঠিন পদক্ষেপ গ্রহণ করে থাকি।

এসময় তিনি ক্যাম্পাসে কাউকে স্থায়ী দোকান বসাতে দেখা গেলে প্রক্টর অফিসে জানানোর অনুরোধ করেন।

উপাচার্যের বক্তব্য: এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, এ বিষয়ে আমি বিস্তারিত জানি না। বিষয়টি প্রক্টরের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। অবৈধ দোকানপাট থাকলে প্রক্টরিয়াল টিমের মাধ্যমে সেগুলোকে তুলে দেবেন বলে জানান তিনি।