সিংড়ায় নৌকায় সিল মেরে এজেন্টকে দেখানোর নির্দেশ
গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় শুকাস বাজারে নৌকার উঠান বৈঠকে তিনি এ বক্তব্য দেন। শুক্রবার রাতে বক্তব্যের একটি অডিও রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পাওয়া যায়।
প্রথম নিউজ, নাটোর: ‘বুথের মধ্যে নৌকায় সিল মেরে বাক্সে ফেলার আগে এমনভাবে ভাঁজ দিতে হবে, যাতে এজেন্ট বুঝতে পারে যে সে নৌকায় ভোট দিয়েছে। নইলে ৭ তারিখের পর কিন্তু ৮ তারিখ সকাল হবে।’ এ বিষয়টি মাথায় রাখার জন্য প্রকাশ্যে হুশিয়ারি দিয়েছেন নৌকার এজেন্ট নাটোরের সিংড়া উপজেলার সুকাশ ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড সদস্য মাহাবুর রহমান। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় শুকাস বাজারে নৌকার উঠান বৈঠকে তিনি এ বক্তব্য দেন। শুক্রবার রাতে বক্তব্যের একটি অডিও রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পাওয়া যায়। তিনি সুকাশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভোটারদের উদ্দেশ্যে এ কথাগুলো বলেন। এ আসনে নৌকার প্রার্থী আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। আর প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র ঈগল প্রতীকের প্রার্থী সাবেক দুই বারের উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম।
ভোটারের উদ্দেশ্যে মাহাবুর রহমান আরও বলেন, আজকের পথসভার মধ্য দিয়ে একটি জিনিস পরিষ্কারভাবে জানাতে চাই সবাই এক মাস ধরে তো সকাল থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত নৌকার জন্য কাজ করেছ। যদি আমরা বিজয় লাভ করতে চাই, আগামী রোববার আমরা যারা নৌকাপ্রেমী, বাড়িতে গিয়ে মা-বোনদের বলব। ভোট কিন্তু রুমের মধ্যে সুন্দর-সুষ্ঠু হবে। কাপড় টাঙানোর মধ্যে সিল মারবেন। কিন্তু ব্যালট না ভাঁজিয়ে এজেন্ট যাতে বুঝতে পারে যে আপনি কাকে ভোট দিলেন।
বাক্সের কাছে এনে কিন্তু ব্যালট ভাঁজাতে হবে। এই কাজটি করলে নৌকার বিজয় নিশ্চিত। আরেকটি কথা বলতে চাই, এই এলাকায় তো আমরা বসবাস করব। আগামী রোববার যেন কোনো চিল পাখির এজেন্ট সেন্টারে না আসে। আরও বলে দেবেন, ৭ তারিখের পর কিন্তু ৮ তারিখ সকাল হবে। এই জিনিসটা মাথায় রাখবেন। আমি পরিষ্কারভাবে আপনাদের বুঝাতে পারছি কিনা আমি জানি না। সিল আমরা কাপড়ের রুমেই মারব। কিন্তু ব্যালটটি বাক্সের কাছে এনে এজেন্টকে দেখিয়ে ভাঁজ করে বাক্সের ভেতরে দেবেন।
তিনি আরও বলেন, এই মাইকে সাউন্ড বাজার পেরিয়ে যাচ্ছে না। এখানে ভোটার আছি এক-দুইশ’ জন। কাল সকাল থেকেই তেইশ ভোটারের কাছে আমার এই মেসেজ পৌঁছে দেবেন। যারা নৌকায় ভোট দিতে দ্বিধাবোধ করবেন অনুরোধ, সেন্টারে আইসেন না। যারা কাউয়া-চিলের এজেন্ট ঠিক করবেন তারা সেন্টারে আইসেন না। ব্যালটে কাকে সিল মারবেন এটা যেন এজেন্ট বুঝতে পারে কাকে সিল মারলেন। এটা নিয়ে কিন্তু মিন্টু থাকবে এক রুমে আর আমি থাকব আরেক রুমে। আর মহিলা রুমে আমার বউ ও ভাগিনী থাকবে। কে কোথায় ভোট দিচ্ছে ব্যালটটা বাক্সের কাছে ভাঁজাবে তোমরা দেখে নিবে। এটা কিন্তু করতে হবে নৌকাকে বিজয় লাভ করাতে হলে। নয়তো আমরা পরিশ্রমই করলাম কিন্তু কাজের বেলায় গিয়ে লন ঠনাঠন। এই রেজাল্ট আমরা নিব না নিব না। আমি আপনাদের কাছে শেষবারের মতো অনুরোধ করে বলব, পলক ভাই সারা বাংলাদেশের কাছে একটা আইকন নামে পরিচিত।’
তবে মাহাবুর রহমান এ ধরনের বক্তব্যের বিষয়টি অস্বীকার করেন। সিংড়ায় দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটির চেয়ারম্যান ও পাবনার সহকারী জজ মোস্তফা কামাল জানান, এ ধরনের একটি অডিও রেকর্ড তিনি শুনেছেন। বিষয়টির যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।