সীতাকুন্ডের বিস্ফোরণ ঘটনায় সরকারের ব্যর্থতা দায়ী: মির্জা ফখরুল
আজ মঙ্গলবার দুপুরে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানাতে গিয়ে তিনি এই মন্তব্য করেন।
প্রথম নিউজ, ঢাকা: সীতাকুন্ডের বিস্ফোরণ ঘটনায় সরকারের ব্যর্থতাকে দায়ী করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানাতে গিয়ে তিনি এই মন্তব্য করেন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সীতাকুন্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোতে ভয়াবহ দূর্ঘটনার জন্য সরকারের অবহেলা, সমন্বয়হীনতা ও অযোগ্যতা দায়ী। সর্বক্ষেত্রে দুর্নীতি, অযোগ্যতা, জবাবদিহি হীনতার কারণেই এতোগুলো প্রাণ চলে গেলো এবং সামগ্রিক ক্ষতি হলো। কনটেইনার ডিপো যেটা তৈরি করা হয়েছে তার কিছু রুলস-রেগুলেশন আছে, সরকারের কনট্রোলিং অথোরিটি আছে যারা এসব নিয়ন্ত্রণ করবে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে এগুলো কেউ মনিটরিং করে না। যাদের দায়িত্ব আছে সমন্বয় করা, ঠিক মতো পালিত হচ্ছে কিনা সেগুলো করে না। যে করণেই এসব দূর্ঘটনা ঘটছে।
সরকারের কোনো জবাবদিহিতা নেই- অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, এই সরকারের কোনো জবাবদিহিতা করতে হয় না, পার্লামেন্টে তাদের জবাব দিতে হয় না। যেকারণে ব্লগাহীনভাবে যা ইচ্ছা করে চলেছে এবং তাদের সাথে যারা আছে, মদদপুষ্ট যারা আছে যাদেরকে দায়িত্ব দিয়েছে তারাও কিন্তু সরকারের কাছে কোনো জবাব দেয় না। এটাই মূল কথাটা। রাষ্ট্র কাজ করছে না, রাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান কাজ করছে না। আমি এটা প্রায়ই বলি এটা একটা ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। বিকজ দ্যা স্টেট ইজ নট ফানশানিং দ্যা মিশিনারী ইজ নট ফানশানিং এবং কেউ কারো কাছে জবাবদিহি নাই তো, যা যা কিছু করে চলেছে। তাই আজকে এই অবস্থা তৈরি হয়েছে। এখন জবাবদিহিমূলক সরকার’ প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন তিনি।
গত ৬ জুন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে স্থায়ী কমিটির সভায় সীতাকুন্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোতে অগ্নিকান্ডে ও বিস্ফোরণের ঘটনা, গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের প্রকাশিত ২০২১ সালের আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা বিষয়ক প্রতিবেদনসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। এই সভায় অবিলম্বে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে নিরপেক্ষ বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করে দূর্ঘটনার মূল কারণ উদঘাটন এবং দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে দ্রুত তাদের আইনের আওতায় আনা এবং আহতদের পর্যাপ্ত ক্ষতিপুরনের দাবিও জানানো হয় বলে জানান বিএনপি মহাসচিব।
সীতাকুন্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোর লাইসেন্স নবায়ন না হওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, এদের তো আসলে অত্যন্ত সত্য কথা বলেছেন ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা গতকাল পার্লামেন্টে। আসলে হত্যার অভিযোগ নিয়ে আসা উচিত তাদের বিরুদ্ধে, দেশের মানুষ চায় যে, হত্যার অভিযোগ তাদের ট্রায়াল হওয়া উচিত। বিস্ফোরণে নিহতের পরিবার ও অগ্নিদগ্ধ আহতের পাশে দাড়ানোর জন্য দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে বলে জানান বিএনপি মহাসচিব।
‘সরকার দুঃস্বপ্ন দেখছে বলে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার প্রতিমুহুর্তে দুঃস্বপ্ন দেখছে। দুঃস্বপ্ন দেখছে যে, প্রতিমুহুর্তে তাদের ক্ষমতা চলে যাচ্ছে, জনগন তাদের কাছ থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। সেজন্য তারা নানা মিথ্যাচার করছে।
‘সরকারের মিথ্যাচার করছে বলে অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, বাংলাদেশে সাবেক প্রেসিডেন্ট আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েমের লেখা একটি বইকে উদধৃত করে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে নিয়ে উদ্দেশ্যে প্রণোতিতভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মিথ্যাচার ছড়িয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর পুত্র এবং তার আইসিটি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়।কিন্তু বাস্তব সত্য হলো যে, প্রেসিডেন্ট আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম ‘অ্যাট বঙ্গভবন: লাস্ট ফেজ’ নামে ইংরেজীতে লেখা বইটির কোথাও ‘অস্ত্রের মুখে জিয়া রাষ্ট্রপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েমকে পদত্যাগে বাধ্য করেছিলেন’ এমন কথা উল্লেখ নেই। অথচ একরম মিথ্যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং কিছু গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রচার করেছেন প্রধানমন্ত্রীর পুত্রসহ আওয়ামী লীগের অনেকেই।”
‘‘ আন্তর্জাতিক প্রভাবশালী গণমাধ্যম এএফপি বিষয়টির ফ্যাক্ট চেক করে সোমবার একটি অনুসন্ধানি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সেখানে তথ্যপ্রমাণসহ উঠে এসেছে যে, শহীদ জিয়াকে নিয়ে খবর প্রকাশের বিষয়টি ছিলো উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মিথ্যাচার আর ইতিহাস বিকৃতির প্রচেষ্টা। এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েমকে তার উত্তরসূরি জিয়াউর রহমান জোরপূর্বক পদত্যাগে বাধ্য করেছিলেন এমন একটি তথ্য বিকৃত করে অবাধে ফেসবুকে ছড়ানো হয়। মূল ইংরেজী বইতে জিয়া সম্পর্কে এরকম কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।অভিযোগের বিষয়টি সাজানো বিলে তথ্য পেয়েছে এএফপি। বইটির বাংলা অনুবাধক নিজেও এএফপিকে জানিয়েছে ফেসবুকে এনিয়ে যা ছড়ানো হয়েছে তা বিভ্রান্তিকর। আমরা এহেন বিকৃতি তথ্য ছড়ানোর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং প্রকৃত সত্য উদঘাটনের জন্য এএফপিকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।”
‘অধিকারের নিবন্ধন বাতিলের নিন্দা জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, বাংলাদেশের প্রখ্যাত মানবাধিকার সংগঠন বেসরকারী স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান ‘অধিকার’ এর নিবন্ধণ প্রধানমন্ত্রীর এনজিও বিষয়ক ব্যুরো কর্তৃক বাতিল করায় আমরা তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। স্থায়ী কমিটির সভায় বিষয়টি আলোচনা হয়েছে। সভা মনে করে সরকারের এই পদক্ষেপ মানবাধিকার রক্ষার ক্ষেত্রে বেসরকারী প্রতিষ্ঠান গুলোর উদ্যোগকে ব্যাহত করবে।সরকারের মানবাধিকারের লংঘনের প্রবনতা ও বৃদ্ধি পাবে। গুম, বেআইনীভাবে আটক, বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ড, নারী ও শিশু নির্যাতন এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানবাধিকার লংঘনের ঘটনা আরও বৃদ্ধি পাবে। অবিলম্বে অধিকারের নিবন্ধন বাতিলের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানান বিএনপি মহাসচিব।
Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:
https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews