স্কুলে ঢুকে ছাত্রীকে মারলো বখাটেরা

প্রেমের প্রস্তাবে সাড়া না দেয়ায় করিমগঞ্জে বিদ্যালয়ে ঢুকে এসএসসি পরীক্ষার্থী এক ছাত্রীকে মারধর করেছে কয়েক বখাটে

স্কুলে ঢুকে ছাত্রীকে মারলো বখাটেরা
প্রেমের প্রস্তাবে সাড়া না দেয়ায় স্কুলে ঢুকে এক ছাত্রীকে মারধর

প্রথম নিউজ, কিশোরগঞ্জ : প্রেমের প্রস্তাবে সাড়া না দেয়ায় করিমগঞ্জে বিদ্যালয়ে ঢুকে এসএসসি পরীক্ষার্থী এক ছাত্রীকে মারধর করেছে কয়েক বখাটে। এ সময় ওই ছাত্রীকে টানা হেচড়া করে তার মুঠোফোন, স্কুল ব্যাগ ছিনিয়ে নেয় তারা। খবর পেয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিরা স্কুলে ছুটে যান। বুধবার করিমগঞ্জ উপজেলার গুনধর ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। ওই বিদ্যালয় ও কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, বুধবার সকাল সাড়ে দশটার দিকে ওই ছাত্রী দৌড়ে বিদ্যালয়ে এসে ঢোকেন। এ সময় তার পিছু পিছু ধাওয়া করে উপজেলার জয়কা গ্রামের প্রবাসী দেলোয়ার হোসেনের বখাটে ছেলে মো: সাগর মিয়া ও আরো দুই থেকে তিনজন তরুণ বিদ্যালয়ে এসে ঢোকেন। মেয়েটি ভয় পেয়ে বিদ্যালয়ের ওয়াশ রুমে চলে যান। পরে শ্রেণিকক্ষে যান।

বখাটে সাগর সেখান থেকে তাকে টেনেহেচড়ে মাঠে নিয়ে এসে কিল-ঘুষি ও থাপ্পর মারতে থাকেন। অন্য বখাটেরা মেয়েটিকে ঘিরে রাখেন। এ সময় বিদ্যালয়ের মেয়েরা চিৎকার চেচামেচি করতে থাকে, তাদের মধ্যে ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ছেলে শিক্ষার্থীরা এসে ধাওয়া করলে মেয়েটির মুঠোফোন ও স্কুল ব্যাগ ছিনিয়ে নিয়ে বখাটেরা পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় আশপাশের লোকজন ছুটে গিয়ে এক বখাটেকে ধরে স্কুলের ভেতর নিয়ে আটকে রাখেন। পরে বখাটেরা স্কুলগেটে এসে আবার হামলাসহ শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে গালিগালাজ করতে থাকেন। ঘটনার খবরে গুনধর ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান আবু ছায়েম ভূঞা রাসেল ও সাবেক চেয়ারম্যান নূরু শিকদার বিদ্যালয়ে যান। পরে ঘটনাটি সমঝোতার উদ্যোগ নেন তারা দু’জন।

ভুক্তভোগী ওই ছাত্রী অভিযোগ করে বলেন, উপজেলার জয়কা গ্রামের প্রবাসী দেলোয়ার হোসেনের বখাটে ছেলে মো: সাগর প্রেম নিবেদনসহ প্রায়ই আমাকে উত্ত্যক্ত করতো। আমি রাজি হইনি। বুধবার সকালে আমি বাড়ি থেকে স্কুলে আসার পথে উত্ত্যক্ত করতে থাকেন। একপর্যায়ে সাগর তার চার থেকে পাঁচ বন্ধুকে সাথে নিয়ে স্কুলে ঢুকে আমাকে কিল-ঘুষি ও থাপ্পর মারতে থাকেন। আমি এর বিচার চাই। বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক কামাল উদ্দিন জানান, ঘটনার সময় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাসুদ ইকবাল প্রশাসনিক কাজে উপজেলায় অবস্থান করছিলেন। আমি ছিলাম শিক্ষকরুম বিদ্যালয়ে বখাটেদের হামলার খবর শুনে গিয়ে দেখি শিক্ষার্থীরা ও স্থানীয়রা এক বখাটেকে আটক করেন।

ভুক্তভোগী মেয়ের মামাতো ভাই বিল্লাল হোসেন জানান, প্রকাশ্যে এভাবে কোনো মেয়েকে উত্ত্যক্ত করে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করবে এটা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার আগেই বিষয়টি স্থানীয়ভাবে প্রভাব বিস্তার করে মীমাংসার চেষ্টা করা হয়।

গুনধর ইউপি চেয়ারম্যান আবু ছায়েম ভূঞা রাসেল উপজেলা নির্বাহী অফিসারের মাধ্যমে বিষয়টি শুনে ঘটনাস্থলে যান উল্লেখ করে বলেন, ঘটনার বিষয়ে স্কুলের ভেতরে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যানসহ দুই পরিবারের লোকজন ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে সালিশ বৈঠক হয়। এ সময় দুই পরিবারের লোকজন ভবিষ্যতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে না মর্মে লিখিত অঙ্গীকার করলে বিষয়টি সেখানেই মীমাংসা করে দেয়া হয়।

কিশোরগঞ্জ মহিলা পরিষদের সভাপতি ও সনাকের নারী বিষয়ক উপ-কমিটির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট মায়া ভৌমিক বলেন, ঘটনাটি নারী ও শিশু নির্যাতন আইন এবং ফৌজদারি কার্যবিধির অজামিনযোগ্য অপরাধ। বিষয়টি এভাবে মিমাংসা করা আইনের সম্পূর্ণ পরিপন্থি। আমরা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই এবং শাস্তি দাবি করছি।

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:

news.google.com

https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews

https://youtube.com/prothom