শাহজাহান-ইবরাহিমের আসনে নৌকার প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল

শাহজাহান-ইবরাহিমের আসনে নৌকার প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল

প্রথম নিউজ, অনলাইন : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঝালকাঠি-১ আসনে আওয়ামী লীগের আলোচিত প্রার্থী বিএনপি’র সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান শাহজাহান ওমরের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। নৌকার প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করলেও এই আসনের তিনবারের সংসদ সদস্য বজলুল হক হারুনের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়ে গেছে। অন্যদিকে কক্সবাজার-১ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী সালাহউদ্দিন আহমদের মনোনয়নপত্র বাতিল করেছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। এই আসনে বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিমের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। এ ছাড়া বিকল্পধারার মহাসচিব মেজর (অব.) আবদুল মান্নান ও যুগ্ম মহাসচিব মাহি বি চৌধুরীর মনোনয়ন বাতিল করেছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। নিজের স্বাক্ষরে মনোনয়নপত্র জমা দেয়া গণফোরাম নেতা মোকাব্বির খানের মনোনয়নও বাতিল হয়েছে। এ ছাড়া চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি, গায়িকা ডলি সায়ন্তনী, বিএনপি’র বহিষ্কৃত নেতা আখতারুজ্জামান ও আলোচিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর হিরো আলমের মনোনয়নপত্রও বাতিল করেছেন সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তা। 

ঝালকাঠি প্রতিনিধি জানান, ঝালকাঠি জেলার দুটি সংসদীয় আসনে ৭ জনের মনোনয়ন বাতিল ও ৮ জনের বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। গতকাল ঝালকাঠির জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ফারাহ্ গুল নিঝুম এই তথ্য জানান। তথ্য অনুযায়ী, ঝালকাঠি-১ আসনে মনোনয়ন বাতিল হওয়া প্রার্থীর মধ্যে আছেন, বর্তমান সংসদ সদস্য মো. বজলুল হক হারুন, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী কেন্দ্রীয় মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য এম মনিরুজ্জামান মনির ও ব্যারিস্টার একেএম ফকরুল ইসলাম। এই আসনে আওয়ামী লীগ চূড়ান্তভাবে মনোনীত করলে বিএনপি’র সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান শাহজাহান ওমরের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। 

অপরদিকে ঝালকাঠি-২ আসনের প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য আমির হোসেন আমুর মনোনয়নপত্র বৈধ বলে ঘোষণা করা হয়েছে। এই আসনের জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী নাসির উদ্দীন ইমরানের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে।  

স্টাফ রিপোর্টার, কক্সবাজার থেকে জানান,  কক্সবাজার-১ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী সালাহউদ্দিন আহমেদ সিআইপি’র মনোনয়ন বাতিল করেছে নির্বাচন কমিশন। কক্সবাজারের রিটার্নিং কর্মকর্তা মুহম্মদ শাহীন ইমরান বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, ঋণখেলাপির অভিযোগে তার মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী সালাহউদ্দিন আহমেদ সিআইপি বলেন, মনোনয়ন বাতিল করার কারণ আমি জানি না। বিষয়টি নিয়ে নির্বাচন কমিশনে আপিল করা হবে। এদিকে এই আসনে ৮ প্রার্থীর মনোনয়ন বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। বৈধ প্রার্থীর তালিকায় বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম ও বর্তমান এমপি জাফর আলমসহ আরও ৬ প্রার্থী রয়েছে।

স্টাফ রিপোর্টার, সিলেট থেকে জানান, সিলেট-২ আসনের গণফোরামের সংসদ সদস্য মোকাব্বির খানের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। মোকাব্বির খানের মনোনয়নপত্র বাতিল প্রসঙ্গে রিটার্নিং কর্মকর্তা বলেন, প্রার্থী মোকাব্বির খান গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি হিসেবে তার মনোনয়নপত্রে নিজেই সই করেন। কিন্তু তিনি যে দলের নির্বাহী সভাপতির দায়িত্ব পেয়েছেন তার কোনো প্রমাণ রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে উপস্থাপন করতে পারেননি। যে কারণে তার মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে। এই আসনে মোকাব্বির খান ছাড়া আরও ছয়জনের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ নেতা ও স্বতন্ত্র প্রার্থী বিশ্বনাথ পৌরসভার মেয়র মুহিবুর রহমানের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। সিলেট-২ আসনে মনোনয়ন বৈধ ঘোষণা হয়েছে-আওয়ামী লীগের শফিকুর রহমান চৌধুরী, জাতীয় পার্টির ইয়াহইয়া চৌধুরী, তৃণমূল বিএনপি’র মো. আবদুল মান্নান খানের। সিলেট-৬ আসনে সবার মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। এই আসনের আওয়ামী লীগের নুরুল ইসলাম নাহিদ, জাতীয় পার্টির সেলিম উদ্দিন, তৃণমূল বিএনপি’র শমসের মবিন চৌধুরী প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন। 

মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মুন্সীগঞ্জ-১ আসন থেকে মনোনয়ন যাচাই-বাছাইয়ে বর্তমান এমপি মাহী বদরুদ্দোজা চৌধুরীসহ ৩ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে। মুন্সীগঞ্জ জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আবু জাফর রিপন এই ঘোষণা দিয়ে বলেন, মাহী বদরুদ্দোজা চৌধুরী একটি প্রতিষ্ঠানের ঋণের জামিনদার ছিলেন। ওই প্রতিষ্ঠানের ঋণখেলাপি হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে তথ্য দেয়া হয়েছে। এক ভাগ ভোটার তালিকায় সমস্যা থাকায় এই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী ঢাকা দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম সারোয়ার কবিরের মনোনয়নও বাতিল হয়েছে। এই আসনের বৈধতা পাওয়া প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন, তৃণমূল বিএনপি প্রার্থী অন্তরা হুদা, আওয়ামী লীগের প্রার্থী আলহাজ মো. মহিউদ্দিন আহমেদসহ আরও ৬ জন। 
স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল থেকে জানান, ৮৮ লাখ ৬৯ হাজার ৮১১ টাকা বকেয়া কর পরিশোধ না করায় জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান ও পটুয়াখালী-১ আসনে জাপা মনোনীত প্রার্থী এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদারের মনোনয়নপত্র স্থগিত করা হয়েছে। একইসঙ্গে আরও ২ প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল ও একজনের মনোনয়ন স্থগিত রাখা হয়। 

স্টাফ রিপোর্টার কিশোরগঞ্জ থেকে জানান, কিশোরগঞ্জের ছয়টি সংসদীয় আসনের মধ্যে তিনটিতে যাচাই-বাছাইয়ে আলোচিত বেশ কয়েকজন প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল হয়েছে। একটি আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর মনোনয়নপত্রের বৈধতা নিয়ে সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখা হয়েছে। মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে তাদের মধ্যে আছেন- মুক্তিযুদ্ধকালীন বাংলাদেশ সরকারের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামের ছেলে সৈয়দ শাফায়েতুল ইসলাম, সাবেক সংসদ সদস্য আশরাফ উদ্দিনের ছেলে শরীফ আহাম্মদ সাদী ও বিএনপি থেকে নির্বাচিত তিনবারের সংসদ সদস্য আখতারুজ্জামান। বিএনপি’র ভোট বর্জন ভুল, উল্লেখ করে আখতারুজ্জামান এবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন।

স্টাফ রিপোর্টার, মানিকগঞ্জ থেকে জানান, মানিকগঞ্জের তিনটি আসনে জাতীয় পার্টির তিন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল করেছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। মানিকগঞ্জ-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জাতীয় পার্টির (জাপা) সভাপতিম-লীর সদস্য এস এম আব্দুল মান্নান এবং মানিকগঞ্জ-৩ আসনে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা জহিরুল আলম রুবেলের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে ঋণখেলাপির দায়ে। বাড়ির গ্যাস বিল বকেয়া থাকায় মনোনয়ন বাতিল হয়েছে মানিকগঞ্জ-১ আসনের প্রার্থী জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক হাসান সাঈদের। স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল আলী বেপারী, জাতীয় পার্টির প্রার্থী জহিরুল আলম রুবেল ও হাসান সাঈদ, জাতীয় পার্টির (মঞ্জু) প্রার্থী মো. আফজাল, গণফ্রন্টের মোহাম্মদ শাহজাহান খান ও বিএনএম’র মোনায়েম খানের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে।

নেত্রকোনো প্রতিনিধি জানান, স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দেয়া জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন, নব্বইয়ের গণআন্দোলনের নেতা শফী আহমেদসহ ১৩ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। ১ শতাংশ ভোটারের স্বাক্ষর ত্রুটিপূর্ণ, খেলাপি ঋণসহ নানা কারণে তাদের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়। মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়া অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন, শফী আহমেদ, আবদুল মতিন, মাজহারুল ইসলামসহ অন্তত ছয়জন বলেছেন, তারা রিটার্নিং কর্মকর্তার মনোনয়নপত্র বাতিলের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনে আপিল করবেন।

স্টাফ রিপোর্টার বরিশাল থেকে জানান, বিভিন্ন অভিযোগের প্রেক্ষিতে বরিশালের ৬টি আসনের ছয় প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে; স্থগিত রাখা হয়েছে আরও চারজনের। রিটার্নিং কর্মকর্তা বলেন, বরিশাল-৪ আসনের আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী শাম্মী আহমেদ ও স্বতন্ত্র প্রার্থী সংসদ সদস্য পঙ্কজ দেবনাথের বিষয়ে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ থাকায় তাদের মনোনয়ন স্থগিত করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের সব পদ থেকে অব্যাহতি পাওয়া বরিশাল-৪ আসনের সংসদ সদস্য পঙ্কজ দেবনাথের আসনে প্রথমবারের মতো মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন দলের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক শাম্মী আহম্মেদ। মনোনয়ন বাতিল হওয়া প্রার্থীরা হলেন- বরিশাল-১ আসনের জাকের পার্টির মনোনীত প্রার্থী মোহাম্মদ রিয়াজ মোরশেদ, বরিশাল-২ আসনের বাংলাদেশ কংগ্রেস পার্টির প্রার্থী মোহাম্মদ মিরাজ হোসেন ও জাতীয় পার্টির প্রার্থী আলবার্ট বাড়ৈ এবং বরিশাল-৬ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী জাকির খান সাগর, মোহাম্মদ শাহরিয়ার মিয়া ও নূরে আলম শিকদার। আর বরিশাল-৫ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর।