শিশু ডাইনোসরের ভ্রুণ জীবাশ্মের ভিতর
বিজ্ঞানীরা বলছেন আবিষ্কৃত এই ভ্রুণ ডাইনোসর এবং পাখির মধ্যে যোগসাজশের ওপর আরও আলোকপাত করতে পারে ।
প্রথম নিউজ, ডেস্ক: এটি একটি জীবাশ্ম। তার মধ্যে শিশু ডাইনোসরের একটি অবিকৃত ভ্রুণ। বিজ্ঞানীরা বলছেন আবিষ্কৃত এই ভ্রুণ ডাইনোসর এবং পাখির মধ্যে যোগসাজশের ওপর আরও আলোকপাত করতে পারে । ৭০-মিলিয়ন বছরের পুরানো জীবাশ্মটি একটি ওভিরাপটোরিড ডাইনোসরের ভ্রূণের কঙ্কাল বলে মনে করা হচ্ছে। চীনা জাদুঘরের নাম অনুসারে এই ছোট্ট ভ্রুনকে বেবি ইংলিয়াং নামে ডাকা হচ্ছে। আর সেখানেই রাখা হয়েছে এই fossilised embryo বা জীবাশ্ম ভ্রূণটিকে। শিশু ডাইনোসরের হাড়গুলি ছোট এবং ভঙ্গুর হয় তাই এদের সংরক্ষণ করা বেশ মুশকিল। কানাডার ক্যালগারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডার্লা জেলেনিতস্কি বলেছেন, ডাইনোসরের এই ভ্রুনটিকে অবিকৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে।
আইসায়েন্স জার্নালে জেলেনিতস্কি বলেছেন , 'আমি ২৫ বছর ধরে ডাইনোসরের ডিম নিয়ে কাজ করছি এবং কখনো এটির মতো কিছু দেখতে পাইনি''। এই গবেষণার পুরোধা ওয়াইসুম মা জানিয়েছেন, ডায়নোসরের ডিমের ভিতর এভাবে সুসজ্জতি অবস্থায় ভ্রূণ থাকতে দেখে অবাক হয়েছেন তাঁরা। পাখির মতো ভঙ্গিতে এই ভ্রূণ আবিষ্কার হয়েছে বলে আরও অবাক হয়েছেন জীবাশ্মবিদরা।
নন-এভিয়ান ডায়নোসরদের ক্ষেত্রে এমন ভঙ্গি আগে লক্ষ্য করা যায়নি বলেও জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। ডায়নোসরের ডিমের যে জীবাশ্মের হদিশ পাওয়া গেছে সেটি ১৭ সেন্টিমিটার লম্বা। আর তার ভিতরে কুঁকড়ে যাওয়া অবস্থায় ছিল ডায়নোসরের ভ্রূণটি । এই ডায়নোসরটি মাথা থেকে লেজ পর্যন্ত মোট ২৭ সেন্টিমিটার লম্বা। এমনটাই জানিয়েছেন গবেষকরা। পূর্ণবয়স্ক হলে এই ডায়নোসর ২ থেকে ৩ মিটার লম্বা হতো বলে আন্দাজ করছেন জীবাশ্মবিদরা।
বিজ্ঞনীরা বলেছেন, এভাবে ডায়নোসরের ভ্রূণের জীবাশ্ম খুঁজে পাওয়া অত্যন্ত বিরল ঘটনা। চীন, যুক্তরাজ্য এবং কানাডার গবেষকরা বেবি ইংলিয়াং এবং পূর্বে পাওয়া ওভিরাপটরিড ভ্রূণের অবস্থান অধ্যয়ন করেছেন। ডায়নোসরের যে ডিমটি খুঁজে পাওয়া গিয়েছে তার খোলসের ভিতরের ৬ ইঞ্চি জায়গায় কুঁকুড়ে যাওয়া অবস্থায় ছিল এই জীবাশ্ম ভ্রূণ। এই পর্যায়ে ভ্রূণ দেখতে অনেকটা বর্তমানে পাখিদের মতো লাগে। কিন্তু পাখিদের মতো কিছুটা গড়ন হলেও এই ভ্রূণে ছোট ছোট হাত এবং থাবা দেখা গিয়েছে। বরং ডানা দেখা যায়নি। সমস্ত পাখি সরাসরি থেরোপড নামে পরিচিত দুই পায়ের ডাইনোসরের একটি দল থেকে বিবর্তিত হয়েছে, যাদের সদস্যদের মধ্যে রয়েছে সুউচ্চ টাইরানোসরাস রেক্স এবং ছোট ভেলোসিরাপ্টর।
বিজ্ঞানীরা বলছেন , প্রাক-হ্যাচিং আচরণই একমাত্র আচরণ নয় যা আধুনিক পাখিরা তাদের ডাইনোসর পূর্বপুরুষদের কাছ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছে, একইরকমভাবে সেইযুগের ডাইনোসররাও তাদের ডিমের উপরে বসত পাখির মতোই। জীবাশ্মটি চীনের জিয়াংসি প্রদেশে পাওয়া গিয়েছিল এবং২০০০ সালে ইংলিয়াং গ্রুপ নামে একটি চীনা পাথর কোম্পানির পরিচালক লিয়াং লিউ এটির দাবিদার ছিলেন । প্রায় ১০ বছর পরে, জাদুঘরের কর্মীরা ইংলিয়াং স্টোন নেচার হিস্ট্রি মিউজিয়াম নির্মাণের সময় একটি বাক্সের মধ্যে থেকে জীবাশ্মটি বের করে আনেন , তার আগে পর্যন্ত এর কথা কারোর মনেই ছিল না। জাদুঘরটি লিয়াং লিউ- এর কোম্পানির অর্থায়নে পরিচালিত।
সূত্র : সিএনএন
Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel: