রাষ্ট্রীয় পদক, জাতীয় পুরস্কার প্রদানে রাজনৈতিক পরিচয় দেখা উচিত নয়: সেলিনা হোসেন

রাষ্ট্রীয় পদক, জাতীয় পুরস্কার প্রদানে রাজনৈতিক পরিচয় দেখা উচিত নয়: সেলিনা হোসেন

প্রথম নিউজ, ঢাকা: রবীন্দ্রনাথ তার সমস্ত সৃষ্টির মধ্যে অসাম্প্রয়িক ও অহিংস সমাজ গঠনের কথা বলেছেন। বর্তমানে আমাদের সস্কৃতি ও রাজনীতিতে যে হিংসা-বিদ্বেষ ও বিভাজন রয়েছে তা দূর হওয়া প্রয়োজন। সংস্কৃতিচর্চার ক্ষেত্রে সংস্কৃতি কর্মীদের অবশ্যই রাজনৈতিক বিভাজনের ঊর্ধ্বে থাকা আবশ্যক।  রাষ্ট্রীয় পদক ও জাতীয় পুরস্কার প্রদানের ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত প্রভাব ও দলীয় পরিচয় মোটেই কাম্য নয়। এতে গুণীজনেরা অসম্মানিত হন। এক্ষেত্রে দলীয় বা রাজনৈতিক পরিচয়ের ঊর্ধ্বে যোগ্য ব্যক্তিকে উপযুক্ত পদক প্রদান করা উচিৎ। গত বইমেলায় রবীন্দ্রনাথের ভাস্কর্য নিয়ে যে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে তা অন্ত্যন্ত দুঃখজনক। এ ব্যপারে আরো সতর্ক থাকার প্রয়োজন ছিল। সরকারিভাবে রবীন্দ্রচর্চার প্রচার ও প্রসার যথাযথ হচ্ছে বলে মনে হয় না। শনিবার  (১৩ মে) বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশনে (এফডিসি) ১৬২তম রবীন্দ্রজয়ন্তী উপলক্ষে এক ছায়া সংসদ বিতর্ক প্রতিযোগিতার প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলা একাডেমীর সভাপতি সেলিনা হোসেন এসব কথা বলেন।

প্রতিযোগিতাটি আয়োজন করে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি। সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।
সভাপতির বক্তব্যে হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, রবীন্দ্রনাথের নানা কাব্য ও সংগীত বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন ও একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে আমাদের অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে। তার লেখনিতে ছিল মানবতার জয়গান। তিনি মানুষকে নিয়ে আরাধনা করতেন। ধর্ম নিয়ে কখনোই তিনি বাড়াবাড়ি করতেন না। রবীন্দ্রনাথ ছিলেন শান্তির পক্ষে এক অতুলনীয় শক্তি। বর্তমান সময়ে মানুষে মানুষে যে হানাহানি, রাজনীতির যে প্রতিহিংসা তিনি ছিলেন তার বিপক্ষে। পাঞ্জাবের জালিয়ান ওয়ালাবাগ হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে ব্রিটিশ সরকারের 'নাইটহুড' উপাধি প্রত্যাখ্যান করেন রবীন্দ্রনাথ। অথচ এখন আমরা দেখি পদ, পদবী, পুরস্কারের জন্য মানুষ তার ব্যক্তিসত্তাকে বিসর্জন দিচ্ছে। ন্যায়নীতিকে তোয়াক্কা করছে না। রাজনৈতিক লেজুরবৃত্তির মাধ্যমে অযোগ্য ব্যক্তিরা নানা জাতীয় ও রাষ্ট্রীয় পুরস্কার পাচ্ছে। দেশের সত্যিকারের গুণী ব্যক্তিদের রাষ্ট্রীয় সম্মাননা দেয়ার ক্ষেত্রে কেবল জ্ঞান ও যোগ্যতাকের প্রাধান্য দেয়া উচিত।  তিনি আরো বলেন, রবীন্দ্রনাথ তার উপন্যাসগুলোর মধ্যে বিভিন্ন চরিত্রের যে চিত্রায়ন করেছেন, তা পড়ে অনুভব করলে মনে হবে প্রত্যেকটি চরিত্রই স্ব-স্ব মহিমায় শ্রেষ্ঠ। শেষের কবিতায় অমিত-লাবন্য, নৌকাডুবিতে রমেশ-হেমনলিনী, চোখের বালি উপন্যাসে মহেন্দ্র-বিনোদনী সহ প্রত্যেকটি উপন্যাসের চরিত্রগুলো খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। রবীন্দ্রনাথকে বুঝতে হলে তার সৃষ্টিকে বুঝতে হবে। রবীন্দ্রনাথ তার সৃষ্টির মাধ্যমেই অনন্তকাল বেঁচে থাকবেন।

“রবীন্দ্রনাথ গদ্য ও কবিতার চেয়ে সংগীতে বেশি জনপ্রিয়” শীর্ষক উক্ত ছায়া সংসদে ইডেন মহিলা কলেজের বিতার্কিকদের পরাজিত করে বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে। প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন অধ্যাপক আবু মুহাম্মদ রইস, প্রানের বাংলা সম্পাদক আবিদা নাসরিন কলি, সাহিত্যিক ও সাংবাদিক শাহনাজ মুন্নী, কবি জাহানারা পারভিন এবং সঙ্গীত পরিচালক তানভীর তারেক । প্রতিযোগিতা শেষে বিজয়ী দলকে ট্রফি ও সনদপত্র প্রদান করা হয়।