রোজায় আমদানি পণ্যের দাম বেশি থাকবে ৩০ ভাগ
ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে এবার রোজায় আমদানি করা পণ্যের দাম প্রায় ৩০ শতাংশ বেশি থাকবে
প্রথম নিউজ, ঢাকা : ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে এবার রোজায় আমদানি করা পণ্যের দাম প্রায় ৩০ শতাংশ বেশি থাকবে। আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম না বাড়লেও দেশে এমন পরিস্থিতি বিরাজ করবে। এমন আশঙ্কার কথা ব্যক্ত করেছেন খোদ সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের উপপরিচালক মো. মাহমুদুল হাসান। সোমবার জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় তিনি এমন মন্তব্য করেন। সরকারি এই কর্মকর্তার সঙ্গে সুর মিলিয়ে ব্যবসায়ীরা আরেক ধাপ এগিয়ে বলেন, আমদানির ক্ষেত্রে যদি স্বাভাবিকভাবে এলসি খোলা না যায়, তাহলে দাম বাড়বেই।
নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ ও মূল্য স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে রাজধানীর কাওরান বাজারে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উদ্যোগে এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) এএইচএম সফিকুজ্জামান। এফবিসিসিআই-এর সহসভাপতি মো. আমিন হেলালী, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন ও কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) প্রতিনিধি এবং গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন। গুরুত্বপূর্ণ এ সভাটিতে পাইকারি এবং খুচরা ব্যবসায়ী নেতারাও যোগ দেন।
সভার শুরুতে কয়েকজন ব্যবসায়ী নেতা তাদের বক্তৃতায় বলেন, আমদানি না হওয়ায় আদা-রসুনের দাম বাড়ছে। ভারত থেকে রসুন আমদানি বন্ধ ছিল। চীন থেকেও আমদানি হচ্ছে না। আদা-রসুন আমদানিতে এলসি স্বাভাবিক না হলে দাম আরও বাড়বে। ডলারের মূল্য অনেক বেড়েছে। ব্যাংকে এলসি খোলা যাচ্ছে না। অনেক জটিল হয়ে গেছে। এ অবস্থায় আসন্ন রমজান সামনে রেখে এলসি জটিলতা দূর করাসহ শুল্ক প্রত্যাহার করে পণ্য আমদানি বাড়ানোর সুযোগ দিতে হবে। তারা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, এখন থেকে যদি পণ্য আমদানি করা না যায়, তাহলে রমজানে দাম বাড়বে।
এদিকে সভায় কোনো ধরনের রাখঢাক না রেখে খোলাখুলি আমদানি পণ্যের দাম বাড়ার আশঙ্কার বিষয়টি সামনে আনেন সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের উপপরিচালক মো. মাহমুদুল হাসান। তিনি বলেন, ‘ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে এবার রোজায় আমদানি করা পণ্যের দাম প্রায় ৩০ শতাংশ বেশি থাকবে। আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম না বাড়লেও দেশে এমন পরিস্থিতি বিরাজ করবে। এর বেশি বাড়বে না।’
ক্যাবের সহসভাপতি নাজের হোসাইন বলেন, ব্যবসায়ীরা দাম বাড়ানোর জন্য একেক সময় একেক বাহানা সামনে নিয়ে আসেন। একসময় বলেন, ডলার সমস্যা, আবার এর মধ্যে বলেছেন, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ পরিস্থিতি দাম বাড়াচ্ছে। এখন আবার এলসি সমস্যাকে অজুহাত হিসাবে এনেছেন। তিনি বলেন, রমজানের জন্য যেসব নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের প্রয়োজন; সেগুলো ইতোমধ্যেই এলসি করা হয়েছে। কারণ পণ্য আসার দুই থেকে তিন মাস আগে এলসি করতে হয়। সে অনুসারে রমজানের জন্য প্রয়োজনীয় পণ্য ইতোমধ্যেই বন্দরে এসে পৌঁছেছে। এলসি ইস্যুটা একটা অজুহাতমাত্র।
সভায় উপস্থিত ক্যাবের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবির ভূঁইয়া ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে বলেন, বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে ভোক্তা অধিদপ্তরসহ সরকারের বাজার নিয়ন্ত্রণ সংস্থাগুলোর মনিটরিং আরও জোরদার করতে হবে। বাজারে অভিযান চালালে বাজার নিয়ন্ত্রণে থাকে। যার প্রমাণ আমরা আগেও পেয়েছি।
ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ করে এফবিসিসিআই-এর সহসভাপতি মো. আমিন হেলালী বলেন, ‘অসাধু ব্যবায়ীরা খুবই নগণ্য। তবে তাদের জন্য সবার ওপর দায় পড়ে। আমরা ব্যবসায়ীরা সরকারের সব আইনকানুন মেনে ব্যবসা করতে চাই। এজন্য এলসি এবং ডলারের দাম সমন্বয় করে বাজারব্যবস্থাকে স্বাভাবিক রাখতে হবে।’
সব শেষে সভাপতির বক্তব্যে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেন, আসন্ন রমজানে বাজার মনিটরিং আরও জোরদার করা হবে। নিত্যপণ্যের আমদানি স্বাভাবিক না থাকলে রমজানে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হবে। তাছাড়া কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ীর কারণে বাজার অস্থির হয়ে যায়। আসন্ন রমজানে এসব অসাধু ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে থাকবে ভোক্তা অধিদপ্তর।
তিনি বলেন, রমজানের আগে আমাদের দেশি পেঁয়াজ উঠবে। এতে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির কোনো সম্ভাবনা নেই। ৫০ টাকার মধ্যেই থাকবে দাম। কিন্তু আদা-রসুনের বাজার অস্থির। রমজান আসার আগেই দাম বাড়তে শুরু করেছে। হঠাৎ করে আদা-রসুনের দাম ১০০ থেকে ১২০ টাকা কেজিতে উঠেছে। কিছু পণ্য আমদানিনির্ভর। ডলারের দাম বাড়ার হিসাব অনুসারে ২৫ শতাংশ দাম বাড়তে পারত। কিন্তু ডলার বাজারের তুলনায় পণ্যের দাম আরও বেশি বাড়ানো হয়েছে। তাই অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ভোক্তা অধিদপ্তর এবার কঠোর অবস্থানে থাকবে।
আদা-রসুনের দাম বৃদ্ধি নিয়ে এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেন, ‘মূল্য যাচাইয়ে গত সপ্তাহে আমাদের টিম বাজার নিয়ে কাজ করেছে। সেখানে আমরা কাওরান বাজার, শ্যামবাজারসহ পাইকারি, খুচরা এবং আড়তে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি, আদা, রসুন, শুকনা মরিচ ও হলুদ আমদানিনির্ভর পণ্য। ফলে এই পণ্যগুলোর সঙ্গে এলসি জড়িত। এসব পণ্যের ক্ষেত্রে দেশীয় উৎপাদন দিয়ে সম্পূর্ণভাবে বাজারের চাহিদা মেটানো সম্ভব না। ফলে এই পণ্যগুলোর ক্ষেত্রে চাহিদা অনুযায়ী আমদানি করা না গেলে অবশ্যই বাজারে ঘাটতি দেখা দেবে।’
তিনি বলেন, ‘এখন বিবেচ্য বিষয় হলো-সামনে রমজানের পর আসবে কোরবানির ঈদ। তাই এসব পণ্য যদি আমদানি সচল না রাখতে পারি, তাহলে স্থানীয় উৎপাদন দিয়ে এই বাজার ধরে রাখা যাবে না। একইভাবে আমদানি স্বাভাবিক না থাকলে রমজানে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়বে।’
তিনি জানান, সভায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল ও সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার বিষয়ে যে পরামর্শ এসেছে, তা সুপারিশসহ লিখিত প্রতিবেদন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।
Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel: