মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার: বাড়তি ভাড়া দিয়ে প্রতিদিন যানজট কিনছি

বাসের চালক-কন্ডাক্টরা বলছেন, এত টোল দিয়ে আমাদের কোনো লাভ হচ্ছে না। ৩-৪টি ট্রিপ দিলেই দিন শেষ।

মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার: বাড়তি ভাড়া দিয়ে প্রতিদিন যানজট কিনছি

প্রথম নিউজ, ঢাকা: রাজধানীর পূর্ব-দক্ষিণ অংশের যানজট নিরসনে মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হলেও যানজট থেকে মুক্তি মেলেনি। এ ফ্লাইওভার দিয়ে বিভিন্ন গন্তব্যে নামতে প্রতিদিন যানজটের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। বিশেষ করে গুলিস্তান এবং গোলাপবাগ অংশে নামতে সায়েদাবাদে যানজটের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে যাত্রীদের।

যাত্রীরা বলছেন, মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারে বাড়তি ভাড়া দিয়ে আমরা প্রতিদিন যানজট কিনছি। বাসের চালক-কন্ডাক্টরা বলছেন, এত টোল দিয়ে আমাদের কোনো লাভ হচ্ছে না। ৩-৪টি ট্রিপ দিলেই দিন শেষ।

যাত্রাবাড়ীর মেডিকেল এলাকা থেকে গুলিস্তান রুটে চলাচল করে শ্রাবণ পরিবহনের বাস। এই পরিবহনের বাসের চালক, হেলপার ও কন্ডাক্টররা জানিয়েছেন, মেডিকেল থেকে রায়েরবাগ, শনির আখড়া কাজলা হয়ে ফ্লাইওভারে উঠতেই ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানজটে পড়তে হচ্ছে। ৩-৪ মিনিটের পথ ৩০ থেকে ৪৫ মিনিট পেরিয়ে ফ্লাইওভারে উঠতে হচ্ছে। ফ্লাইওভারে উঠেই আবার যানজট। কিছুদিন ধরে গুলিস্তান যেতে ফ্লাইওভারের ওপরে যানজট সায়েদাবাদ পেরিয়ে যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত চলে আসছে।

বাসচালকরা বলছেন, মেয়র হানিফ ফ্লাইওভাবে একটি মিনিবাসের টোল ১৭৩ টাকা, অন্যদিকে একটি বাসের টোল ২৬০ টাকা। আমরা টোলও দিচ্ছি আবার ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটেও ভুগছি। এ রুটে চালাচলকারী যাত্রীরাও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তারা বলছেন, ফ্লাইওভারের টোলের কারণে আমরা বেশি ভাড়া গুনছি, কিন্তু যানজট থেকে আমাদের মুক্তি মেলেনি। নিচের সড়কে যানজট হলে গাড়ি থেকে নেমে হেঁটে যাওয়া যায়, কিন্তু ফ্লাইওভারে হাঁটাও যায় না।

গুলিস্তানের একটি মার্কেটের বিক্রয়কর্মী শাহ আলম। তিনি থাকেন রায়েরবাগে। শাহ আলম বলেন, ‘ফ্লাইওভারে যানজট প্রতিদিনই বাড়ছে। রায়েরবাগ থেকে গুলিস্তানের দূরত্ব ৪-৫ কিলোমিটারের বেশি না। কিন্তু এটুকু পথ এক-দেড় ঘণ্টার নিচে যেতে পারি না। ফ্লাইওভারের টোলের কারণে আমাদের বেশি ভাড়া গুনতে হয়, কিন্তু আমাদের তো কোনো সুবিধা নেই। ফ্লাইওভার করে কী লাভ হলো?’

শ্রাবণ পরিবহনের চালক শরিফুল বলেন, ‘এখন সব জ্যাম ফ্লাইওভারে, নিচে জ্যাম থাকে না। নিচ দিয়ে যে জামু হেই অবস্থাও নাই। নিচের রাস্তা ঠিক করতাছে, রাস্তা বন্ধ। ফ্লাইওভারে উঠতেই অইবো, আর উঠলেই টোল। আরেক চালক সৈয়দ আলী বলেন, ‘শনির আখড়ার তোন গুলিস্তানে ৩-৪ সিগন্যাল মারলেই দিন শেষ। মালিকের জমাও ওডে না। আর গাড়ি নামাইলে এই চন্দা-হেই চান্দা তো আছেই। জ্যাম সব শেষ কইরা দিছে।’

মতিঝিলে একটি ব্যাংকে চাকরি করেন আইয়ুব হোসেন। তিনি বলেন, ‘আমি শনির আখড়া থেকে বাসে উঠি। গুলিস্তান যেতে ১০ মিনিটও লাগে না। কিন্তু ইদানিং এক ঘণ্টার আগে গুলিস্তান পৌঁছাতে পারি না। প্রতিদিনই ফ্লাইওভারের ওপরে সায়েদাবাদ পর্যন্ত যানজট পাচ্ছি। তাহলে ফ্লাইওভার করে লাভ হলো কী?’

গুলিস্তানে নেমে গাড়ি দ্রুত পার হওয়ার জন্য পর্যাপ্ত সড়ক অবকাঠামো না থাকায় ফ্লাইওভারের যানজট লেগে থাকছে বলে জানিয়েছেন ফ্লাইওভার ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা। এখন মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে রয়েছে ওরিয়ন ইনফ্রাস্ট্রাকটার। এ বিষয়ে কথা বলতে ফোন করা হলে ওরিয়নের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ আহসান হাবীব বলেন, ‘অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়ে এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলতে হবে।’