মালয়েশিয়ায় ২ লাখ বাংলাদেশীর বৈধ হওয়ার সুযোগ, যা করতে হবে
ই পরিকল্পনার মূল লক্ষ্য দেশটিতে বিভিন্নখাতে কাজ করা অবৈধ শ্রমিকদের যেন তাদের মালিকরা বৈধভাবে নিয়োগ করতে পারে।
প্রথম নিউজ, অনলাইন ডেস্ক: মালয়েশিয়ায় আবারো শুরু হয়েছে অবৈধ অভিবাসী শ্রমিকদের বৈধ করার প্রক্রিয়া। এতে সেখানে থাকা দুই লক্ষাধিক অনথিভুক্ত বাংলাদেশী শ্রমিক বৈধ হওয়ার সুযোগ তৈরি হবে। দেশটির সরকার আগেই ঘোষণা দিয়েছিল, ৩১ ডিসেম্বর শেষ হওয়া ‘লেবার রিক্যালিব্রেশন প্রোগ্রাম’ নতুন করে শুরু হবে ২৭ জানুয়ারি থেকে, যা চলবে ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এই পরিকল্পনার মূল লক্ষ্য দেশটিতে বিভিন্নখাতে কাজ করা অবৈধ শ্রমিকদের যেন তাদের মালিকরা বৈধভাবে নিয়োগ করতে পারে। মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশন বিভাগ অবশ্য নির্দিষ্ট করে দেয় কোন কোন খাতে আর কোন কোন দেশের শ্রমিকরা এই সুবিধা নিতে পারবে।
এই তালিকায় বরাবরই শীর্ষের দিকে থাকে বাংলাদেশ। মালয়েশিয়ান সরকার জানিয়েছে, ৩১ ডিসেম্বর শেষ হওয়া এই রিক্যালিব্রেশন প্রোগ্রামে নিবন্ধন করে চার লাখের উপর বাংলাদেশী শ্রমিক। কুয়ালালামপুরে সাংবাদিক আহমাদুল কবির জানিয়েছেন, এই তালিকার শীর্ষে বাংলাদেশী ও ইন্দোনেশিয়ান শ্রমিক। এছাড়া ইমিগ্রেশন বিভাগের হিসাব বলছে, এ বছরের ২২ জানুয়ারি পর্যন্ত মোট ১৪ লাখ ৮৪ হাজার ৬৭৭ জন বিদেশী কর্মীকে অস্থায়ী কাজের ভিজিট পাস দিয়েছে তারা, যার মধ্যে বাংলাদেশীর সংখ্যা সর্বোচ্চ, চার লাখ ৪৬ হাজার ২২৯ জন।
আহমাদুল কবি বলেন, যখনই মালয়েশিয়ান সরকার অনথিভুক্ত বিদেশী কর্মীদের নথিভুক্ত করার বিভিন্ন প্রক্রিয়া ঘোষণা করে, তখনই সর্বাধিক আগ্রহ দেখায় ইন্দোনেশিয়া ও বাংলাদেশের কর্মীরা। তারা বেশি আগ্রহী বৈধভাবে থাকার জন্য। মালয়েশিয়ায় বর্তমানে কতজন বাংলাদেশী অবৈধ শ্রমিক রয়েছে তার নির্দিষ্ট কোনো হিসাব নেই। তবে দুই থেকে আড়াই লাখের বেশি অনথিভুক্ত বাংলাদেশী রয়েছেন বলে ধারণা করা হয়।
কোন প্রক্রিয়ায় এটি করা হবে?
ইমিগ্রেশনে অভিযোগ রয়েছে এমন শ্রমিক ও ক্রিমিনাল রেকর্ড রয়েছে এমন অভিবাসী ছাড়া যে কেউ এই লেবার রিক্যালিব্রেশন প্রোগ্রামে আবেদন করতে পারবে। যে আটটি খাতে বিদেশী কর্মী নিয়োগের অনুমতি দেয়া হয়েছে সেগুলো হল উৎপাদন, নির্মাণ, খনি ও খনন, নিরাপত্তারক্ষী, সেবা, কৃষি, বাগান ও গৃহকর্মী। আর এ সমস্ত কাজের জন্য ১৫টি সোর্স কান্ট্রির কথা উল্লেখ করেছে মালয়েশিয়া, যার অন্যতম বাংলাদেশ। বৈধতার ক্ষেত্রে কর্মীর বয়স ১৮ থেকে ৪৯ বছর হতে হবে।
মালয়েশিয়ার ইংরেজি দৈনিক নিউ স্ট্রেইট টাইমস দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বরাত দিয়ে বলছে, এই প্রোগ্রাম ওই সব বিদেশী কর্মীর জন্য, যারা এরই মধ্যে এখানে কাজ করছে কিন্তু সঠিক কাগজপত্র নেই। তারা এখন পেমেন্ট করে এই সুবিধা নিয়ে বৈধভাবে কাজ করতে পারে অথবা দেশে ফেরত যেতে পারে। নিয়োগকর্তারা ‘লেবার রিক্যালিব্রেশন প্রোগ্রাম (আরটিকে)-২.০’-এর মাধ্যমে বিদেশী কর্মী নিয়োগের জন্য আবেদন শুরু করেছে। ইমিগ্রেশন বিভাগ থেকে অ্যাপয়েন্টমেন্টের তারিখ পাওয়ার আগে https://imigresen online.imi.gov.my/myimms/main- অনলাইনেও আবেদন করা যাবে।
অনুমোদন প্রক্রিয়া শেষ হতে মাত্র এক দিন সময় লাগবে। এরপর হবে বিদেশী কর্মীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা। যা পরিচালনা করবে ফরেন ওয়ার্কার্স মেডিক্যাল এক্সামিনেশন মনিটরিং এজেন্সি। পরের প্রক্রিয়া হবে রিক্যালিব্রেশন ফি, ভিসা, অস্থায়ী কাজের ভিজিট পাস (পিএলকেস), প্রক্রিয়াকরণ ফি ও শুল্ক প্রদান। যখন সমস্ত নথি সম্পূর্ণ হয়, নিয়োগকর্তারা পিএলকেস বা কাজের অনুমতিপত্র ইস্যু করেন।
কত খরচ পড়বে?
এই প্রোগ্রামে সর্বনিম্ন ফি ধরা হয়েছে ১৫০০ রিঙ্গিত, যা বাংলাদেশী টাকায় প্রায় ৩৮ হাজার টাকা। এর সাথে মেডিক্যাল ও অন্য ফি মিলিয়ে মোট খরচ হয় তিন হাজার রিঙ্গিতের ওপর। দ্য ফেডারেশন অফ মালয়েশিয়ান ম্যানুফ্যাকচারার্স (এফএমএম) সরকারের কাছে রিক্যালিব্রেশন খরচ কমানোর আবেদন জানিয়েছে। তবে সরকার সেটি নাকচ করে দিয়েছে। দেশটির বাণিজ্যবিষয়ক গণমাধ্যমে বিজনেস টুডে জানাচ্ছে, গত বছর এই প্রোগ্রাম থেকে সরকার আয় করেছে ৭০০ মিলিয়ন রিঙ্গিত।
দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফ উদ্দিন বলেন, দেশে বিদেশী কর্মীর চাহিদা পূরণে এই প্রোগ্রাম খুবই কার্যকর। নিয়োগদাতাদের জন্যও এটা সস্তা। কারণ তাদের এখন কর্মী নেয়ার জন্য কোনো এজেন্সিকে বাড়তি খরচ দিতে হচ্ছে না। ইমিগ্রেশন বিভাগ বলছে, গত বছরের মতো এবারও তারা কোনো ব্যক্তি বা সংস্থাকে এজেন্ট বা মধ্যস্থতাকারী হিসেবে নিয়োগ করেনি।
সূত্র : বিবিসি
Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel: