ফেনীতে প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা

প্রথম নিউজ, ফেনী: ফেনীতে বন্যা পরিস্থিতির কোথাও উন্নতি কোথাও অবনতি হয়েছে। শুক্রবার ফেনী সদর, দাগনভূঞা ও ছাগলনাইয়া উপজেলার নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়। অন্যদিকে পরশুরাম ও ফুলগাজী উপজেলার বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। তবে এসব এলাকায় পানি কমলেও সীমাহীন দুর্ভোগের শিকার বাসিন্দারা। অনেকের ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেগুলো মেরামতে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। কেউ কেউ খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকটে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটাচ্ছেন। কয়েকটি স্থানে পানি ওঠায় ফেনী-পরশুরাম আঞ্চলিক সড়কে যান চলাচল এখনো স্বাভাবিক হয়নি। এদিকে কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া অংশে ছোট-বড় খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন চলাচলকারীরা। লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে টানা বর্ষণে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
ফেনী : জেলা প্রশাসনের তথ্য মতে, পরশুরাম ও ফুলগাজী উপজেলায় বাঁধ ভেঙে মঙ্গলবার থেকে লোকালয়ে পানি ঢুকতে শুরু করে। ধীরে ধীরে এ দুই উপজেলায় পানি কমে নতুন করে প্লাবিত হচ্ছে ছাগলনাইয়া, ফেনী সদর ও দাগনভূঞা উপজেলার আংশিক এলাকা। প্লাবিত ১০৯টি গ্রামের লাখো মানুষ পড়েছেন চরম ভোগান্তিতে। যেসব এলাকায় পানি কমছে সেখানেও অবর্ণনীয় দুর্ভোগের শিকার বাসিন্দারা। এ পর্যন্ত ৮২টি আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় সাড়ে ৯ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন।
ফুলগাজীর দৌলতপুর এলাকার বাসিন্দা সাংবাদিক সাহাব উদ্দিন বলেন, প্রায় এক সপ্তাহ পর শুক্রবার সূর্যের দেখা মিলেছে। বাড়িতে এখনো হাঁটু সমান পানি। বৃষ্টি বন্ধ থাকলে পানি দ্রুত নামবে। তবে এখনো বাঁধের ভাঙন দিয়ে পানি ঢুকছে। ফেনী-পরশুরাম আঞ্চলিক সড়কের কিছু কিছু স্থানে পানি থাকায় এখনো যান চলাচল স্বাভাবিক হয়নি।
পরশুরামের বাসিন্দা মাসুদ রানা বলেন, বৃহস্পতিবার বিকালে বাড়ি থেকে পানি নেমে গেছে। পানির তোড়ে বসতঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফেনী সদর উপজেলার মোটবীর ইজ্জতপুরের বাসিন্দা মো. ইসমাইল হোসেন বলেন, বৃহস্পতিবার বিকাল থেকে বাড়িতে পানি ঢুকতে শুরু করে। এলাকার অনেকে আশ্রয়কেন্দ্রে চলে গেছেন। প্রশাসনের লোকজন কিছু খাবার দিয়ে গেছে।
ফেনীর জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম শুক্রবার বিকালে বলেন, জেলা-উপজেলা পর্যায়ে খাদ্য ও প্রয়োজনীয় সামগ্রীর পর্যাপ্ত বরাদ্দ ও মজুত রয়েছে। বিদ্যুৎ সরবরাহ, মোবাইল নেটওয়ার্ক সচল রাখতে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড ও মোবাইল নেটওয়ার্ক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ করা হচ্ছে। জনগণের নিরাপত্তায় বন্যাকবলিত কিছু এলাকায় সাময়িকভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছে।
ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আক্তার হোসেন মজুমদার বলেন বলেন, পরশুরাম ও ফুলগাজী অংশে নদীর পানি বিপদসীমার অনেক নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও ছাগলনাইয়া ও ফেনী সদর অংশে পানি অনেক বাড়ছে। বাঁধের ভাঙনের স্থান দিয়ে পানি ঢুকছে। পানি কমার পরেই বাঁধ মেরামতের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
রায়পুর (লক্ষ্মীপুর) : পাঁচ দিনের টানা বর্ষণে রায়পুর ও সদর উপজেলার কয়েকটি এলাকা ও গ্রামে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। অনেক রাস্তাঘাট ও আমনের বীজতলা তলিয়ে গেছে। দালাল বাজার খোয়াসাগর দিঘী পার্কের ওয়াকওয়ে দেবে গেছে। এ কারণে সেখানে জনসাধারণের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন।
গজারিয়া (মুন্সীগঞ্জ) : সরেজমিন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া অংশের ১৩ কিলোমিটার এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বালুয়াকান্দি, ভাটেরচর, ভাটেরচর নতুন রাস্তা, ভিটিকান্দি, ভবেরচর ও বাউশিয়া এলাকায় ছোট-বড় অসংখ্য গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। অধিকাংশ গর্তে পানি জমে আছে। এতে দুর্ভোগে পড়ছেন চলাচলকারীরা। সিদ্দিক পরিবহণের বাসচালক রশিদ মোল্লা বলেন, গাড়ির চাকা গর্তে পড়ে গেলে গাড়ি একদিকে হেলে পড়ে। এ সময় গাড়ির নিয়ন্ত্রণ রাখা কঠিন হয়ে পড়ে।