প্রথম নিউজ, ফুলবাড়িয়া (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি : বকেয়া নেই বিদ্যুৎ বিল। গত মার্চ মাসের বিদ্যুৎ বিলে ব্যবহৃত ইউনিটের টাকার চেয়ে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিলের বিষয়ে জানতে চাওয়াই ছিল আশীতিপর অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকের অপরাধ। সরকারী কাজে বাধা ও মারপিটের অভিযোগে স্থানীয় পল্লী বিদ্যুতের আছিম সাব জোনাল অফিসের দায়ের করা মামলায় প্রধান আসামী হয়ে পুলিশের গ্রেপ্তারের ভয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছে অশীতিপর অবসরপ্রাপ্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক এ,বি সিদ্দিক। স্থানীয় এলাকাবাসী জানায়, ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার ভবানীপুর ইউনিয়নের বড়হিস্যা গ্রামের মৃত মোহাম্মদ আলীর ছেলে এবি সিদ্দিকের বাড়িতে পল্লী বিদ্যুতের আবাসিক সংযোগ রয়েছে। গত ২২ মার্চ পল্লী বিদ্যুতের আছিম সাব জোনাল অফিসের এমসিএম শহিদ উল্লাহ বিদ্যুৎ কর্মী বিলের কাগজ নিয়ে শিক্ষক এবিসিদ্দিকের বাড়িতে আসেন। এ সময় বিদ্যুৎ কর্মী জানায়, আপনাদের বিদ্যুৎ বিল অনেক বেশি হয়েছে। আমাকে ১৫০০ টাকা দিলে বিল কমিয়ে দেওয়া হবে। পল্লী বিদ্যুৎ কর্মীর এমন প্রস্তাবে কেন বেশি আসাল কারন জানতে চাইলে শিক্ষকের উপর চড়াও হয় এমসিএম শহিদ উল্লাহ। বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়ার হুমকি দিলে স্থানীয় লোকজন রমজান মাসে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন না করার জন্য বিনয়ের সাথে নিষেধ করলেও ক্ষোভ নিয়ে চলে আসেন ঐ বিদ্যুৎ কর্মী। পরের দিন সকালে ৯ টি মোটরসাইকেল যোগে পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারী শিক্ষকের বাড়িতে গিয়ে আতংক সৃষ্টি করে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে গেলে বাড়িতে থাকা শিক্ষকের ছোট ছেলে জাহাঙ্গির বাকবিতন্ডায় জরিয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে শিক্ষকের বিদ্যুৎ সংযোগটি বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। পরের দিন সরকারী কাজে বাধা ও মারপিটের অভিযোগের মামলায় অবসরপ্রাপ্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক অশীতিপর এ,বি সিদ্দিক ও তাঁর দুই ছেলে মো.জাহাঙ্গীর আলম ও মোশারফ হোসেনসহ ৫ জনকে মামলায় আসামী কওে মামলা দেয়।
ফুলবাড়িয়া থানায় মামলাটি করেন পল্লী বিদ্যুৎ সহকারী এনফোর্সমেন্ট কো অর্ডিনেটর মো. মাসুদ রানা। শিক্ষক পরিবারের বিরুদ্ধে পল্লী বিদ্যুৎ আছিম সাব জোনাল অফিসের দায়ের করা মামলায় কান্দানিয়া বড়হিস্যা গ্রামে সবার মাঝে ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে। গ্রামের প্রায় অর্ধশত মানুষ জানায়, আছিম সাব জোনাল অফিসের এ জি এম মশিউর রহমানের ক্রোধের শিকার হয়েছে শিক্ষক পরিবারটি। ঘটনার সময় ঘটনাস্থলে না থেকেও প্রধান আসামী হয়ে পুলিশের গ্রেপ্তারের ভয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছে উপজেলার ভবানীপুর ইউনিয়নের বড়হিস্যা গ্রামের মৃত মোহাম্মদ আলীর ছেলে অবসরপ্রাপ্ত বয়োবৃদ্ধ শিক্ষক এবি সিদ্দিক।
গতকাল বৃহস্পতিবার সরেজমিনে কান্দানিয়া বড়হিস্যা গ্রামে গিয়ে স্থানীয়দের সাথে কথাবলে জানাযায়, গ্রামের প্রবীন মানুষ অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক এ বি সিদ্দিকের বাড়ির অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিলকে কেন্দ্র করে প্রথম দিন তর্কবিতর্ক হয় শিক্ষক পরিবারের সাথে। পরের দিন মোটরসাইকেল যোগে এজিম মশিউর রহমানসহ ১৪ থেকে ১৫ জন পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা শিক্ষকের বাড়িতে আসে। বাড়ির উঠোনে প্রবেশ করেই তাদের ব্যবহৃত ব্যাগ থেকে লোহাড় রড ও অ্যালোমিনিয়ামের দুইহাত লম্ভা তার বের করে আতংক সৃষ্টি করে। এ সময় পল্লী বিদ্যুৎ কর্মীরা আনোয়ারা বেগম, কলেজ শিক্ষার্থী মারুফ ও শিক্ষকের ছেলে জাহাঙ্গির আলমকে মারপিট করে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে সবাই চলে যায়। এ সময় মার্চ মাসের অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিলের কাগজ নিয়ে যায় পল্লী বিদ্যুতের লোকজন।
পল্লী বিদ্যুতের আছিম সাব জোনাল অফিসের সহকারী এনফোর্সমেন্ট কো অর্ডিনেটর মো. মাসুদ রানা বাদি হয়ে সরকারী কাজে বাধা ও মারপিটের অভিযোগে বয়োবৃদ্ধ শিক্ষকসহ ৩ জন এজাহারনামীয় ও অজ্ঞাত আরো ৫ জনকে আসামী করে ফুলবাড়িয়া থানায় অভিযোগ দায়ের করলে পুলিশ মামলাটি রুজু করেন। তুচ্ছ ঘটনায় শিক্ষকসহ তার পরিবারের বিরুদ্ধে স্থানীয় পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের মামলার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে আব্দুল খালেক বলেন, শিক্ষকের বাড়িতে তার এক ছেলেসহ মহিলারা বাড়িতে ছিল। ওনারা ১৩ থেকে ১৫ জন মোটরসাইকেল যোগে বাড়িতে এসে শিক্ষকের বাড়ির মিটারের বিদ্যুৎ সংযোগ কেেট চলে যায় তারা। আমরা অনেক অনুনয় বিনয় করেছি, রমজান মাস সামনে ঈদ। আমাদের কোন কথাই শোনেন নাই পল্লী বিদ্যুতের সাব জোনাল অফিসার সাহেব। কোন বকেয়া নেই তবুও তারা বিদ্যুৎ লাইন কেটে চলে গেলেন। আর ঘটনার সময় শিক্ষক ছিলনা,তারপরও তাঁর নামে মামলা করেছেন।
শিক্ষকের ছেলের বৌ শামিমা আক্তার বলেন, ঘটনার সময় আমার স্বামী একা বাড়িতে ছিল। আমার স্বামীর সাথে কথাকাটাকাটি হচ্ছে আর ওনারা ৫ থেকে ৭ জন আমার স্বামীকে চর থাপ্পর মেড়ে গলা ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দেয়। ধাম্বিক এ জি এম মশিউর রহমান হুমকি দিয়ে বলেন, জীবনে কোনদিন যেন এই শিক্ষকের বাড়ি বিদ্যুৎ সংযোগ না পায় সে ব্যবস্থা আমি করবো। মামলার বাদি আছিম পল্লী বিদ্যুৎ সাব জোনাল অফিসের সহকারী এনফোর্সমেন্ট কো অর্ডিনেটর মো. মাসুদ রানা বলেন, আমার অফিসের কর্মীকে মারধর করায় উদ্ধতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে আমি মামলার বাদি হয়েছি । এ ব্যাপারে আছিম পল্লী বিদ্যুতের সাব জোনাল অফিসের এ জি এম মশিউর রহমান দাবী করেন, মারামারির সময় তিনি ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন না, শিক্ষক ঘটনাস্থলে ছিলেন না এরপরও তাঁকে আসামী করা হয়েছে কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, অফিসে আসুন বিস্তারিত বলবো।
ফুলবাড়িয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, পল্লী বিদুৎতের অভিযোগের প্রেক্ষিতে মামলা হয়েছে। যারা ঘটনার সাথে জড়িত না তদন্ত করে পরবর্তীতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ফুলবাড়িয়া থানার ওসি আবুল কালাম আজাদ বলেন, পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের দায়ের করা মামলা এফআই আর করা হয়েছে। তদন্ত করে প্রকৃত আসামীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। আছিম জোনাল অফিসের এজিএম মশিউর রহমান বলেন,আমি মিথ্যা মামলা দিব কেন আমার কি লাভ। সত্য একটি মামলা হয়েছে।