পুনর্গঠন ও ঐক্য প্রক্রিয়ায় জোর দেবে বিএনপি
ইতোমধ্যে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে জয়ী হলে জাতীয় সরকার গঠনের রূপরেখা ঘোষণা করেছে বিএনপি।
প্রথম নিউজ, ঢাকা: করোনার মহামারি কাটিয়ে ফের মাঠের রাজনীতিতে সক্রিয় হয়েছে বিএনপি। তবে পবিত্র রমজান মাসে অনেকটা স্তিমিত থাকবে মাঠের রাজনীতি। রমজানজুড়ে ইফতারকেন্দ্রিক ঘরোয়া রাজনীতিতে সক্রিয় থাকবে দলটি।
ইতোমধ্যে পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হয়েছে। এতে সাংগঠনিক পুনর্গঠন ও সরকারবিরোধী বৃহত্তর ঐক্য প্রক্রিয়ার দিকেই বেশি গুরুত্ব দেওয়া হবে। ইফতার মাহফিলের মধ্য দিয়ে এ দুটি বিষয়কে এগিয়ে রাখতে চান দলটির নীতিনির্ধারকরা। ইতোমধ্যে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে জয়ী হলে জাতীয় সরকার গঠনের রূপরেখা ঘোষণা করেছে বিএনপি। এ বিষয়টি মাথায় রেখেও ঐক্য প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করার সুযোগ নেবে রমজানকেন্দ্রিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে। পাশাপাশি জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড সক্রিয় রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, আগামী দিনের আন্দোলন-সংগ্রামকে সামনে রেখে দলকে শক্তিশালী করার ওপর জোর দিয়েছে বিএনপির হাইকমান্ড। মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিগুলো কাউন্সিলের মাধ্যমে দ্রুত পুনর্গঠন করা হচ্ছে। বেশ কয়েকটি জেলার সম্মেলন ইতোমধ্যে শেষ করা হয়েছে। কিন্তু রমজানের কারণে মাঠের রাজনীতিতে কিছুটা শিথিল করা হচ্ছে। এ সময়ে পুনর্গঠনের কাজগুলো চূড়ান্ত করা হবে। ঈদের পর কোন কোন জেলায় সম্মেলন হবে সেই তালিকা চূড়ান্ত করার কাজ চলবে। শুধু তাই নয়, এসব জেলায় ঘরোয়াভাবে নেওয়া হবে সম্মেলন প্রস্তুতিও। যাতে ঈদের পরপরই দ্রুত জেলা কমিটিগুলো পুনর্গঠন করা সম্ভব হয়। এসব বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে দলের হাইকমান্ড ঘরোয়া বৈঠক করবেন।
শুধু কেন্দ্র নয়, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোও রমজানে তাদের পুনর্গঠন কাজ এগিয়ে রাখতে চায়। ঢাকা মহানগর এবং বিভিন্ন থানা ও ওয়ার্ড নেতাদের সঙ্গে পুনর্গঠন ইস্যুতে ইফতারের আড়ালে মতবিনিময় করবে সংশ্লিষ্ট নেতারা। তৃণমূলের মতামত নিয়ে তারা একটি গাইডলাইন তৈরি করবে। পুনর্গঠনের পাশাপাশি সরকারবিরোধী ঐক্য প্রক্রিয়া অনেকটা এগিয়ে রাখতে চায় বিএনপির হাইকমান্ড। দলীয় রাজনৈতিক কোনো তৎপরতায় জড়িত না থাকলেও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সরকারবিরোধী ঐক্য গঠনের বিষয়ে ইতিবাচক মত দিয়েছেন।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে একটি নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে ‘সরকারবিরোধী ঐক্য’ গঠন এই মুহূর্তে দলটির অন্যতম এজেন্ডা। তবে এ এজেন্ডা বাস্তবায়নে তাড়াহুড়ার পক্ষে নন নেতারা। সময় নিয়ে হলেও এবার একটি কার্যকর ঐক্য গড়ে তুলতে চান। নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে ইতোমধ্যে ২০ দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের কয়েক শরিকের মধ্যে ভিন্নতা রয়েছে। তারা জাতীয় সরকারের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। তাই নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে একটি ঐকমত্যে পৌঁছাতে কাজ করে যাচ্ছেন নীতিনির্ধারকরা। জোট ও জোটের বাইরে থাকা কয়েকটি বামদলের সঙ্গে ইতোমধ্যে আলোচনাও করেছেন। তাদের মতামত জানার চেষ্টা করছেন।
রমজানে মাঠের রাজনীতি না থাকলেও অন্দরমহলে এ ঐক্য প্রক্রিয়ার কাজটি এগিয়ে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপির হাইকমান্ড। এ ক্ষেত্রে ইফতার পার্টিগুলোকে কাজে লাগাবে তারা। বিএনপির নীতিনির্ধারকরা এরই মধ্যে রমজানে চারটি ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
বিএনপি চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান বলেন, প্রথম রমজান এতিম আলেম-ওলামাদের সম্মানে ইফতার পার্টি হবে লেডিস ক্লাবে। ১২ এপ্রিল কূটনীতিকদের সম্মানে ইফতার হবে হোটেল ওয়েস্টিনে। রাজনীতিবিদদের সম্মানে ইফতার হবে ২০ এপ্রিল হোটেল লেকশোরে। পেশাজীবীদের সম্মানে লেডিস ক্লাবে ইফতারের আয়োজন করা হয়েছে ২৮ এপ্রিল। এ চারটি বাদে ঢাকা মহানগর বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের পক্ষ থেকেও একাধিক ইফতার পার্টির আয়োজন করা হবে।
বিএনপির নীতিনির্ধারকরা জানান, এগুলোর মধ্যে ২০ এপ্রিল রাজনীতিবিদদের সম্মানে দেওয়া ইফতার অনুষ্ঠানকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এই ইফতারে জোট ও জোটের বাইরে থাকা ডান-বাম সব রাজনৈতিক দলকে আমন্ত্রণ জানানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বলতে গেলে এ ইফতার মাহফিল সরকারবিরোধী রাজনৈতিক ঐক্যের একটি আনুষ্ঠানিক সূচনা। এর ফলে সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো একমঞ্চে আসার একটা সুযোগ তৈরি হবে। এতে বৃহত্তর ঐক্য গঠন প্রক্রিয়া অনেকটা ত্বরান্বিত হবে বলে আশা করি। তারা আরও জানান, রাজনীতিবিদদের পাশাপাশি কূটনীতিক ও পেশাজীবীদের সম্মানে ইফতার পার্টিকেও বেশ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। ঢাকায় নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিবিদদের ইফতারে আমন্ত্রণ জানানো হবে। ইফতার মাহফিলের মধ্য দিয়ে তাদের সঙ্গে সম্পর্ক আরও জোরদার হবে।
এবার শুধু দলীয় নয়, নিরপেক্ষ সর্বজন গ্রহণযোগ্য পেশাজীবীদেরও ইফতার মাহফিলে আমন্ত্রণ জানানো হবে। লক্ষ্য তাদের সঙ্গে সম্পর্ক ঝালিয়ে নেওয়া। নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে বিএনপির আন্দোলনের প্রতি এসব পেশাজীবীও যাতে ভূমিকা রাখে সেই আহ্বানও থাকবে তাদের প্রতি। জানা গেছে, বিএনপি ছাড়াও জোট ও ঐক্যফ্রন্টের শরিকরা একাধিক ইফতার মাহফিলের আয়োজন করবে। এসব ইফতারে সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর শীর্ষ নেতারা অংশ নেবেন। এর মধ্য দিয়ে তাদের মধ্যে একটা সেতুবন্ধ তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, স্বাভাবিকভাবেই রমজানে মাঠের রাজনীতি ততটা সক্রিয় থাকে না। কিন্তু তাই বলে রাজনীতি তো বন্ধ থাকবে না। রমজানে দল পুনর্গঠনসহ রাজনৈতিক নানা বিষয়ে আমরা কাজ করব। যাতে ঈদের পর দ্রুত সময়ে আমরা তা শেষ করতে পারি। তিনি বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে ভোটাধিকার রক্ষায় আন্দোলন করে আসছি। আগামী নির্বাচনে মানুষ যাতে ভোট দিতে পারে সেজন্য নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার প্রয়োজন। শুধু বিএনপি নয়, দেশের বেশিরভাগ মানুষ এবং রাজনৈতিক দলেও চাওয়া একই। কিন্তু এ ফ্যাসিস্ট সরকার সেই দাবি সহজে মেনে নেবে বলে মনে হয় না। এজন্য প্রয়োজন গণআন্দোলন। আর সেই লক্ষ্যেই জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। আমরা এ নিয়ে কাজ করছি। আশা করি দেশের স্বার্থে শিগগিরই সেই ঐক্য গড়ে উঠবে।
Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:
https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews