প্রথম নিউজ, অনলাইন ডেস্ক: পুরান ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড) সংলগ্ন এলাকায় ব্যবসায়ী মো: সোহাগকে নির্মমভাবে হত্যা করার অভিযোগ উঠেছে যুবদল নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। গত ৯ জুলাই সোহাগকে পেটানো এবং রাস্তায় ফেলে কংক্রিটের টুকরো দিয়ে শরীর থেঁতলে দেয় অভিযুক্তরা। পরে মরদেহের ওপরও লাফালাফি করার ভিডিও ও ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর দেশজুড়ে নিন্দার ঝড় ওঠে।
ঘটনার ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ মিছিল করে। একই সঙ্গে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের মধ্যেও এই নৃশংস ঘটনার প্রতিবাদ এবং দায়ীদের বিচার দাবি নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। এতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রদলের কমিটির অন্তত ৯ জন নেতাকর্মী পদত্যাগ করেছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টারদা সূর্যসেন হল শাখার জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল কর্মী মোহাম্মদ আবু সায়ীদ শুক্রবার (১১ জুলাই) ফেসবুকে পদত্যাগের ঘোষণা দেন। তিনি বিএনপিকে পরিবারতান্ত্রিক দল, দলীয় গণতন্ত্রহীনতা ও নিয়মিত কাউন্সিল না হওয়ার অভিযোগ করেন।
প্রতিবাদ জানিয়ে ছাত্রদলের আহসানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ লিসানুল আলম লিসান পদত্যাগ করেছেন। শুক্রবার (১১ জুলাই) দিবাগত রাত ১২টা ১৬ মিনিটে ফেসবুক নিজের অ্যাকাউন্টে দেওয়া একটি পোস্টে তিনি পদত্যাগের ঘোষণা দেন।
তিনি ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে তিনি দীর্ঘ এক দশকের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে লেখেন, জন্মলগ্ন থেকে পারিবারিক রাজনীতির সূত্র ধরে দীর্ঘ ১০ বছরের উর্ধ্বে এই দলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলাম। যেদিন প্রকৃত স্বচ্ছ বাংলাদেশ বিনির্মানের ডাক আসবে, সেদিন আপনাদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আমিও থাকব মিছিলের অগ্রভাগে, প্রথম বুলেটের শিকারী হতে। তবুও এ দেশের বুকে শান্তি ফিরে আসুক। এ দেশের মাটির ঊর্ধ্বে আমার কাছে কিছুই মূল্যবান না। বাংলাদেশ জিন্দাবাদ।
এ ছাড়া পদত্যাগ করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক সদস্য পারভেজ রানা প্রান্ত। সম্প্রতি বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের নীতিবহির্ভূতকাজে জড়িত থাকার প্রতিবাদে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি।
প্রান্ত লেখেন, আমি ব্যক্তিগত সমস্যার কারণে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক কমিটির আহ্বায়ক সদস্য পদ থেকে সরে দাঁড়াচ্ছি। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের প্রথম বর্ষ থেকেই আমি ছাত্রদলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলাম। এ তিন বছরে সংগঠনের অনেকের ভালোবাসা পেয়েছি। আমি তাদের সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা পোষণ করছি।
তিনি আরও লেখেন, সাম্প্রতিক সময়ে ছাত্রদল ও বিএনপির অঙ্গসংগঠনের বিভিন্ন নেতাকর্মীদের নীতিবহির্ভূত কাজের জন্য আমি মানসিকভাবে অস্বস্তিবোধ করি। কখনো কখনো সাংগঠনিক পদক্ষেপ নিলেও তা আমার দৃষ্টিতে যথেষ্ট নয় বলে মনে হয়েছে। আমি আশা রাখবো, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ও বিএনপির অন্যান্য অঙ্গসংগঠন বিশৃঙ্খলতা কাটিয়ে উঠে সম্পূর্ণ ছাত্রবান্ধব এবং জনবান্ধব হবে।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রদলের আরও এক আহ্বায়ক সদস্য রাকিবুল হাসান রানাও পদত্যাগ করেছেন। তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী।
শনিবার (১২ জুলাই) দুপুরে ফেসবুক নিজের অ্যাকাউন্টে একটি পোস্টের মাধ্যমে তিনি নিজ পদত্যাগের ঘোষণা দিয়ে তিনি লেখেন, ‘আসসালামু আলাইকুম। আমি ব্যক্তিগত কারণে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক কমিটির ‘আহ্বায়ক সদস্য’ পদ থেকে সরে দাঁড়াচ্ছি। জুলাই বিপ্লবের পর বাংলাদেশের ছাত্র রাজনীতিতে যে পরিবর্তনের প্রত্যাশা করেছিলাম, তা এখনো চোখে পড়েনি। বরং বর্তমান পরিস্থিতিতে আমি চরমভাবে আশাহত ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত।’
সবশেষ পদত্যাগ করেছেন সরকারি বাঙলা কলেজ ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি (প্রিন্সিপাল আবুল কাশেম হল) রাসেল মিয়া। শনিবার (১২ জুলাই) ফেসবুকে নিজের আইডিতে পোস্ট দিয়ে তিনি পদত্যাগের ঘোষণা দেন।
পোস্টে তিনি লেখেন, ‘আমি নিজের পরিশ্রমের ফল নিজের মতো করে খেতে চাই। তোদের মতো কিছু সুবিধাভোগী নেতার কারণে বাবা-মায়ের মুখে গালি শুনে আর গুনাহ কামাতে চাই না। তাই বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল থেকে নিজেকে সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাহার করে নিলাম।’
এ ছাড়া ছাত্রদল মৌলভীবাজার জেলা শাখার সদস্য মুহাম্মাদ রাব্বি মিয়া; গোপালগঞ্জ মেডিকেল কলেজ ছাত্রদলের সিনিয়র সহসভাপতি মো. জাহিমুর রহমান জিসান ও সাংগঠনিক সম্পাদক মো. ইশতিয়াক রহমান এবং সিলেটের চুনারুঘাট ছাত্রদল ৯ নম্বর রানীগাঁও শাখার পূর্ণাঙ্গ কমিটির সহসভাপতি আরিফুল ইসলাম ইমরুল পদত্যাগের ঘোষণা দেন।