নির্বাচনে ভারতের প্রার্থী কে কে জানতে চান রিজভী
প্রথম নিউজ ঢাকা: বাংলাদেশের দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে কে কে ভারতের প্রার্থী তার তালিকা প্রকাশ করার দাবি জানিয়েছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বলেন, মেহেরপুর-১ (মুজিবনগর, সদর উপজেলা) আসনের সাবেক দুই মেয়াদের অটোপাস সংসদ সদস্য প্রফেসর আব্দুল মান্নান বলেছেন, আমি ভারতের প্রার্থী। আমি এখানে হারার জন্য আসিনি। তাহলে বাংলাদেশ কি পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ? তলে তলে দেশের স্বাধীনতা সার্বভোমত্ব কি বিকিয়ে দেয়া হয়েছে? ভারত এখন তাদের এ দেশীয় অনুচরদের নমিনেশনও দিচ্ছে? প্রফেসর আব্দুল মান্নানের এই বক্তব্য চরম রাষ্ট্রদ্রোহিতা। অথচ তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়াতো দূরের কথা প্রতিবাদেরও সাহস পায় না সরকার বা নির্বাচন কমিশন।
রিজভী বলেন, তার মানে তারা স্বীকার করে নিয়েছে ভারত তাদের অনুগত বহু সংখ্যককে মনোনয়ন দিয়েছে। আমরা জানতে চাই প্রফেসর আব্দুল মান্নানের মতো আর কে কে ভারতের প্রার্থী তার তালিকা প্রকাশ করা হোক।
মঙ্গলবার বিকালে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব বলেন, দেশের জনগণের প্রতি আমাদের আহ্বান গণতন্ত্র হত্যার জন্য ভারতের প্রার্থীদের বিজয়ী করার এই পাতানো নির্বাচনে কেউ ভোট দিবেন না। দেশকে ভারতের অঙ্গরাজ্য বানাতে না চাইলে ভোট বর্জন করুন। তারা নির্বাচিত হলে দেশকে ভারতের হাতে তুলে দেয়াটা অসম্ভব কিছু না।
বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, আগামী ৭ জানুয়ারি ‘আমরা আর মামুদের’ একদলীয় ডামি নির্বাচন ঘিরে একদিকে চলছে রীতিমত রঙ-তামাশা আর অন্যদিকে নৌকা-ডামির কামড়া-কামড়ি, গোলাগুলি, খুনোখুনি, সংঘাত-সহিংসতায় জনপদগুলো বসবাস অযোগ্য হয়ে পড়েছে। ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে সর্বত্রই। বিরোধীদলহীন পূর্বনির্ধারিত ফলাফলের এই নির্বাচনে ভোটারদের ন্যূনতম আগ্রহ না থাকলেও গণতান্ত্রিক বিশ্বকে তথাকথিত ভোটের উৎসব দেখানোর জন্য অত্যাচার নিপীড়ন থেকে তাদের রেহায় নেই। সাধারণ মানুষকে জোর করে মিছিলে যেতে বাধ্য করা হচ্ছে। এলাকা ছাড়া করার ভয় দেখানো হচ্ছে।
তিনি বলেন, নৌকার প্রচার মাইকের আওয়াজ শুনলেই লোকজন সেখান থেকে পালিয়ে যাচ্ছেন। ভোটের উৎসবের বদলে আতংক আর উৎকন্ঠা সর্বত্রই। তারা দেশটাকে যুদ্ধাবস্থায় নিয়ে যেতে চায়। সারাদেশে এখন আওয়ামী সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের অভয়রন্যে পরিণত হয়েছে। পুরো রাষ্ট্রযন্ত্রকে নামানো হয়েছে আমি আর ডামি’র সঙ্গে। ‘সরকারি কর্মকর্তারাও নৌকার পক্ষে ভোট চেয়ে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন। বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী-ডামি মিছিল বের হচ্ছে। ভোট ডাকাতির মাস্টারমাইন্ড শেখ হাসিনা বলছেন এই নৌকা নুহ নবির। আর তার ডামি পক্ষ বলছেন নৌকা পাগলদের মার্কা। বিভন্ন স্থানে ভোট কিনতে প্রকাশ্যে টাকা বিলি করা হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ আসনে আইন-বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক ভোটার না আসার আশংকায় কেন্দ্রে ভোটার আনতে তার লোকজন লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছে। আওয়ামী লীগের ডামি প্রার্থীরা বিভিন্ন জায়গায় প্রচারণায় বলছেন, বিগত ১৫ বছর উন্নয়ন উন্নয়ন বলে তাদের নেতারা গলা ফাটিয়েছে। সব মিথ্যা। উন্নয়নের নামে নৌকার লোকেরা পকেটের উন্নয়ন করেছেন। যা হয়েছে সব লুটপাটের জন্য।
রিজভী বলেন, আওয়ামী লীগের নেতারা প্রকাশ্যে বক্তব্যে স্বীকার করছেন যে, ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনে আমরা ভোট ডাকাতি করে ক্ষমতায় এসেছি। আইয়ামে জাহেলিয়াতের মতো এক প্রার্থী আরেক প্রার্থীর কল্লা কেটে নেয়ার হুমকি দিচ্ছেন। আর দলদাস নির্বাচন কমিশন বসে বসে তামাশা দেখছে। সারাদেশে বন্দুক-দা-চাপাতির যুদ্ধ লেগেছে সেদিকে ইসির ভ্রূক্ষেপ নেই। তাদের কাজই হলো বিএনপিকে শায়েস্তা করার হুমকি দেয়া। ইসির কাছে নির্বাচন গৌণ। তারা চাচ্ছেন মেরে কেটে হুমকি ধামকি দিয়ে যে যেভাবে পারে ভোট কেন্দ্রে নাবালক-সাবালক-ভোটার-অভোটার জোগাড় করে লোকারণ্য দেখাও। এটাই গণভবনের নির্দেশ, শেখ হাসিনার উৎসবমুখর নির্বাচনি মডেল। কিন্তু এই মাফিয়াচক্রের বোঝা উচিত আপনারা যে গণতান্ত্রিক বিশ্বকে দেখানোর জন্য এতো নাটক-এতো তামাশা করছেন সবই তো তারা দেখছেন। গণতান্ত্রিক বিশ্বের চোখে ধুলো দিতে এতো আয়োজন আখেরে কোনো কাজে আসবে না। ভোট নাটক যতই করেন কোনো লাভ নেই। সকলি গরল ভেল।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব বলেন, শেখ হাসিনা বাস্তবে দেশকে স্থায়ীভাবে একটি নির্বাচনবিহীন রাষ্ট্রে পরিণত করেছেন। এ দেশের নাগরিকরদের মানুষ আওয়ামী লীগের মূলশক্তি প্রশাসন আর সন্ত্রাসীদের পরোয়া করে না। ভোট নাটক জনগণ বানচাল করে আপনাদের পতন ঘটাবেই। জনগণের সম্মিলিত শক্তির কাছে আওয়ামী পরিকল্পনা তছনছ হয়ে যাবে।
পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের কড়া সমালোচনা তিনি বলেন, বিএনপিসহ সব দলকে বাদ দিয়ে এই পাতানো নির্বাচনের অন্যতম মদদদাতা হিসাবে পার্শ্ববর্তী দেশের নাম সর্বজন বিদিত। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বাংলাদেশে এসে একদলীয় নির্বাচনের পক্ষে সাফাই গাইছেন। ভারতীয় কূটনীতিকরা বাংলাদেশে এসে বলেছেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে স্থিতিশীলতা চান বাংলাদেশের গণতন্ত্র-মানুষের অধিকার চান না। এখন তাদের থলের বিড়াল বেরুতে শুরু করেছে। ভারত মনোনীত প্রার্থীরা বীরদর্পে বলছেন- ‘আমাকে ভারত মনোনয়ন দিয়েছে। আমি ভারতের প্রার্থী। আমি এখানে হারার জন্য আসিনি’।
রিজভী অভিযোগ করে বলেন, গাজীপুরে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনে অগ্নিকাণ্ডে সুলতান সালাউদ্দিন টুকুকে ফাঁসানোর জন্য তাকে জড়িয়ে পুলিশের মিথ্যাচারের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি আমি। সোমবার সকালে কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের (সিটিটিসি) প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার দাবি করেছেন, গাজীপুরের শ্রীপুরে রেললাইন কেটে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসে যে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছিল তার মূলে নাকি ছিলেন ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি ইখতিয়ার রহমান কবির। তিনি যুবদল নেতা সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর কাছ থেকে রেললাইন কাটার নির্দেশনা পান।
তিনি বলেন, মিথ্যাচারেরও একটি সীমা থাকে। পুলিশের দুরভিসন্ধিমূলক ও কল্পিত নির্দেশনার এমন নাটক তারা নিয়মিত করছে। ভুয়া পাতানো নির্বাচনকে জায়েজ করার জন্য প্রতিটি আগুন সন্ত্রাসও সরকারের লোকজনের পরিকল্পিত ও পাতানো নাটক। এ পর্যন্ত যারা ধরা পড়েছে তাদের অনেকে সরকারি দলের লোকজন। আগুন সন্ত্রাস আওয়ামী লীগের মজ্জাগত। বিএনপি সহিংসতা ঘৃণা করে। বিএনপিসহ অঙ্গদলের নেতাকর্মীদের আটক করে, গুম করে, নির্যাতন চালিয়ে, শেখানো বুলি দিয়ে স্বীকারোক্তি আদায় করে যারা মনে করছেন যারা পার পেয়ে যাবেন, তারা বোকার স্বর্গে বাস করছেন।