নিত্যপণ্যের বাজার লাগামহীন
বৃষ্টি-ব্লকেডের অজুহাতে সবকিছুর দাম আকাশচুম্বি
প্রথম নিউজ, অনলাইন: নিত্যপণ্যের বাজারে বৃষ্টি ও কোটাবিরোধী ‘বাংলা ব্লকেড’ অজুহাত দেখানো হচ্ছে। সরবরাহ ঠিক থাকলেও বাড়ানো হয়েছে ডাল, আলু ও ডিমের দাম। পরিস্থিতি এমন- এক কেজি আলু কিনতে ক্রেতার ৬৫-৭০ টাকা খরচ করতে হচ্ছে। ডালের কেজি ১৪০ টাকা এবং প্রতি ডজন ফার্মের ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৫০-১৫৫ টাকা। ফলে গরিবের খাবারের তালিকায় এখন ডাল-আলুভর্তা ও ডিমের জোগান দেওয়া যেন কঠিন হয়ে পড়েছে। পাশাপাশি খুচরা বাজারে ৬০ টাকার নিচে মিলছে না সবজি। পেঁয়াজ কিনতেও গুনতে হচ্ছে সর্বোচ্চ ১২৫ টাকা। ফলে পণ্য কিনতে এসে নাজেহাল হচ্ছেন ভোক্তা। বৃহস্পতিবার রাজধানীর কাওরান বাজার, মালিবাগ বাজার, নয়াবাজার ও শান্তিনগরসহ বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
জানতে চাইলে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান যুগান্তরকে বলেন, সার্বিক মূল্যস্ফীতির কারণে এমনিতেই নিম্নআয়ের মানুষ কষ্টে আছেন। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার কারণে নিত্যপণ্যের বাজারে প্রভাব পড়েছে। এর মধ্যে সিন্ডিকেটের কারসাজিতে একাধিক পণ্যের দাম হুহু করে বাড়ছে। এতে উচ্চশ্রেণির মানুষের ভোগান্তি না হলেও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো কষ্টে দিন কাটাচ্ছে। সবচেয়ে বেশি কষ্টে আছে নিম্নআয়ের মানুষ। অনেক সময় পণ্যের দাম বেশি হওয়ায় তা দিয়ে তাদের চাহিদা মেটাতে পারছে না। ফলে কেনার সময় অনেকে পরিমাণে কম কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। তাই বাজারে তদারকি জোরদার করে অসাধুদের আইনের আওতায় আনতে হবে।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর খুচরা বাজারে বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি আলু সর্বোচ্চ ৬৫ টাকায় বিক্রি হলেও এদিন বিক্রি হচ্ছে সর্বোচ্চ ৭০ টাকা। অথচ গত বছর একই সময় বিক্রি হয়েছে ৪০-৪৫ টাকা।
সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) বলছে, খুচরা বাজারে প্রতি কেজি আলু বছরের ব্যবধানে ৪২.৩৫ শতাংশ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। খুচরা বাজারে প্রতি ডজন ফার্মের ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৫০-১৫৫ টাকা। প্রতি কেজি মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগে বিক্রি হয়েছে ১৩৫ টাকা।
গত সপ্তাহে পেঁপে বিক্রি হয়েছে কেজিপ্রতি ৫০ টাকা দরে। যা এ সপ্তাহে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একইভাবে প্রতি কেজি লতি বিক্রি হচ্ছে ৭০-৮০ টাকা। যা সপ্তাহ আগে ৫০-৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। প্রতি কেজি করলার দাম ৬০-৮০ টাকা থেকে বেড়ে ১০০-১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বরবটির কেজি ৬০-৭০ টাকা থেকে বেড়ে ১০০-১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ২০০-২৫০ টাকা। যা আগে ১৬০-১৮০ টাকা ছিল। প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১১০-১২৫ টাকা। যা এক সপ্তাহ আগেও ৯৫-১১০ টাকা ছিল। আর এক মাস আগে মূল্য ছিল ৭৫-৮০ টাকা। দেশি রসুন বিক্রি হচ্ছে ২৩০ টাকা কেজি। যা ৭ দিন আগেও ২১০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। প্রতি কেজি আমদানি করা আদা বিক্রি হচ্ছে সর্বোচ্চ ৩১০ টাকা। যা আগে ২৯০-৩০০ টাকা ছিল।
নয়াবাজারে পণ্য কিনতে আসা মো. শাকিল বলেন, বাজারে একের পর এক সব পণ্যের দাম বাড়িয়ে নাজেহাল করা হচ্ছে। কিন্তু বাজারে সব পণ্যের সরবরাহ পর্যাপ্ত। কিন্তু বিক্রেতারা বিক্রি করছেন বাড়তি দামে। কি রেখে যে কি কিনব বুঝতে পারছি না। মাসের বাজেট সপ্তাহে ব্যয় হয়ে যাচ্ছে। পরিস্থিতি এমন এখন ডাল, ডিম ও আলুভর্তা করে ভাত খাবো তাও ভাবতে পারি না। কারণ এগুলোর দামও আকাশ ছুঁয়েছে। দেখার যেন কেউ নেই।
একই বাজারের খুচরা বিক্রেতা মো. সোনাই আলী বলেন, বৃষ্টির কারণে খেতে অনেক সবজি নষ্ট হয়ে গেছে। কাদার কারণে মাঠ থেকে সবজি সরবরাহ হচ্ছে কম। পাশাপাশি বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যে কারণে সবজির বেশি দাম। সঙ্গে ছাত্রদের বাংলা ব্লকেডের কারণে পরিবহণ ব্যবস্থায় সমস্যা হচ্ছে। যে কারণে সরবরাহ কম থাকায় দাম বেড়ে যাচ্ছে। এখানে কারসাজি নেই।
এদিকে খুচরা বাজারে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকা। যা ৭ দিন আগেও ১৭০ টাকা ছিল। দেশি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৬৫০-৭০০ টাকা। প্রতি কেজি গরুর মাংস ৭৬০-৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া প্রতি কেজি রুই মাছ ৩৫০-৪৫০ টাকায়, মৃগেল ২৫০-৩৫০, পাঙাশ ১৯০-২২০, চিংড়ি প্রতি কেজি ৭০০-১০০০ টাকায়, বোয়াল মাছ প্রতি কেজি ৮০০-১২০০ টাকা, কাতল ৩০০-৪০০, পাবদা ৪০০-৫০০ টাকায় এবং তেলাপিয়া ২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, পণ্যের দাম সহনীয় করতে সার্বিকভাবে অভিযান চলমান আছে। সংস্থাটি জানায়, ডিমের অস্বাভাবিক দামের পেছনে তেজগাঁও ডিম আড়তদারদের হাত রয়েছে। একই স্থানে ডিম থাকলেও তিন হাত কাগজ বদলে দাম বেড়ে যাচ্ছিল। তাই অভিযান পরিচালনা করে সত্যতা পাওয়ায় দোষীদের শাস্তির আওতায় আনা হয়েছে। এতে ডিমের দাম কমতে শুরু করেছে। অন্যান্য যেসব পণ্যের দাম বেড়েছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অসাধু পন্থায় দাম বাড়ালে শাস্তির আওতায় আনা হবে।