নেতানিয়াহুর তীব্র ক্ষোভ, পাশে কি থাকবে যুক্তরাষ্ট্র
আইসিসি থেকে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির অনুরোধের খবরে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।
প্রথম নিউজ, অনলাইন ডেস্ক : যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্ট (আইসিসি) থেকে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির অনুরোধের খবরে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে প্রকাশিত এক ভিডিওতে তিনি একে ‘নজিরবিহীন নৈতিক অবমাননা' বলে উলে্লখ করেছেন। খবর বিবিসির। নেতানিয়াহু বলেছেন, ‘ইসরাইল হামাসের বিরুদ্ধে ন্যায়সঙ্গত যুদ্ধ চালাচ্ছে। হামাস একটা গণহত্যাকারী সন্ত্রাসী সংগঠন এবং তারাই হলোকাস্টের পরে ইহুদি জনগণের ওপর সবচেয়ে ভয়ংকর হামলা চালিয়েছে।'
আইসিসি বা আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের প্রধান কৌঁসুলি করিম খানকে ‘আধুনিক যুগের অন্যতম বড় ইহুদিবিদ্বেষী' বলে উলে্লখ করেছেন নেতানিয়াহু। তিনি বলে, করিম খান অনেকটা নাত্সি অধু্যষিত জার্মানির বিচারকদের মতো আচরণ করছেন। আইসিসিতে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রীর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা চাওয়ার সদ্ধিান্ত বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া ইহুদি বিদ্বেষের আগুনে নির্দয় ভাবে পেট্রোল ঢালারই সমান।' ইসরাইলের রাজনৈতিক নেতৃত্বের গলাতেও একই রকম ক্ষোভের আভাস পাওয়া গেছে। তাদের এ ক্ষোভের কারণ আইসিসির প্রধান কৌঁসুলি করিম খানের জারি করা বিবৃতিতে তিনি সতর্কতার সঙ্গে আইনি ভাষা বেছে নিয়েছেন।
করিম খানের বক্তব্যে বলা হয়েছে যে, আন্তর্জাতিক আইন এবং সশস্ত্র সংঘাতের আইন যেন সবার ওপর সমানভাবে প্রযোজ্য হয়। ওই আইনের ওপর ভিত্তি করেই তিনি গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পক্ষে আদালতে যুক্তি তুলে ধরেছেন। উলে্লখ্য, করিম খান আইসিসির প্রধান কৌঁসুলি হওয়ার পাশাপাশি ব্রিটেনের রাজার একজন পরামর্শক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বলেন, ‘কোনো পদাতিক সৈনিক, কমান্ডার, বেসামরিক নেতা’ কেউ দায় থেকে অব্যাহতি পাওয়ার শর্ত নিয়ে কাজ করতে পারেন না। এই আইন বেছে বেছে প্রয়োগ করা যায় না। যদি তাই হয়, তাহলে আমরা এর (এই আইনের) পতনের পরিস্থিতি তৈরি করব।'
তিনি বলেন, ইসরাইলের আত্মপক্ষ রক্ষার অধিকার আছে।' কিন্তু তাদের ‘বিবেকবর্জিত অপরাধ' ইসরাইলকে আন্তর্জাতিক মানবিক আইন মেনে চলার বাধ্যবাধকতা থেকে অব্যাহতি দেয় না। ওই আইন মানার ক্ষেত্রে ব্যর্থতাই প্রমাণ করে যে প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি করার বিষয়টা ন্যায্য।
নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির অনুরোধের বিষয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও। তিনি বলেছেন, গ্রেফতারি পরোয়ানার জন্য আবেদন করাটা ‘অবমাননাকর'। বাইডেনের মতে, ‘ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে কোনো তুলনাই হতে পারে না।' মঙ্গলবার হোয়াইট হাউজে ইহুদিদের জন্য আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বাইডেন বলেছেন, ইসরাইলি নেতাদের বিরুদ্ধে আইসিসি প্রসিকিউটরের গ্রেফতারি পরোয়ানার আবেদন অযেৌক্তিক। আমি স্পষ্ট করে বলছি, আইসিসি প্রসিকিউটর যা বলতে চান না কেন হামাস ও ইসরাইলকে একই কাতারে রাখা যায় না। ইসরাইলের নিরাপত্তা হুমকি মোকাবিলায় আমরা সব সময় তাদের পাশে থাকব। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি বি্লংকেন বলেছেন, মূলত ইসরাইলের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করছে যুক্তরাষ্ট্র।
ইসরাইলের শীর্ষস্থানীয় মানবাধিকার সংগঠন বিটসেল্ম বলেছে, এই গ্রেফতারি পরোয়ানা ‘ইসরাইলের নৈতিক অধঃপতন'র প্রতীক। ওই সংগঠন আরও বলেছে, Èআন্তর্জাতিক মহল ইসরাইলকে ইতোমধ্যে সংকেত পাঠিয়েছে যে তারা (ইসরাইল) তাদের সহিংসতা, হত্যা ও ধ্বংসের নীতি বজায় রাখবে কিন্তু জবাবদিহি করবে না, এমনটা চলবে না।'
আইসিসির বিচারকদের একটি প্যানেল এখন বিবেচনা করে দেখবে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা যায় কিনা। তার পরেই আইসিসির রোম সংবিধিতে স্বাক্ষরকারী রাষ্ট্রগুলো সুযোগ পেলে অভিযুক্তদের আটক করতে বাধ্য হবে। স্বাক্ষরকারী ১২৪ দেশের মধ্যে রাশিয়া, চীন ও যুক্তরাষ্ট্র নেই। ইসরাইলও এতে স্বাক্ষর করেনি।
কিন্তু আইসিসি তাদের রায়ে জানিয়েছে যুদ্ধে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের বিচারের আইনি কর্তৃত্ব তাদের রয়েছে। তার কারণ ফিলিসি্তন স্বাক্ষরকারী দেশের মধ্যে রয়েছে। যদি গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়, তাহলে তার অর্থ হবে, ইসরাইলের সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু গ্রেফতারের ঝুঁকি না নিয়ে ঘনিষ্ঠ পশ্চিমা মিত্রদের সঙ্গে দেখা করতে পারবেন না।
এদিকে, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক বলেছেন, আইসিসির পদক্ষেপ ‘যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছানো, জিম্মিদের বের করে আনা বা মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর ক্ষেত্রে সহায়ক নয়।' কিন্তু যদি পরোয়ানা জারি করা হয়, তাহলে যুক্তরাজ্যকেই তাদের গ্রেফতার করতে হবে, যদি না প্রধানমন্ত্রীর কূটনৈতিক দায়মুক্তি রয়েছে এমনটা সফলভাবে প্রমাণ করা যায়।
আইসিসির এই পরোয়ানা জারি হলে নেতানিয়াহুরও সেই তালিকায় চলে আসবেন যেখানে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও লিবিয়ার প্রয়াত কর্নেল মুয়াম্মার গাদ্দাফির নাম রয়েছে।