নওগাঁয় বাঁধ ভেঙে ১০ হাজার পরিবার পানিবন্দি
প্রথম নিউজ, নওগাঁ : নওগাঁয় উজান থেকে নেমে আসা ঢলে হু-হু করে বাড়ছে নদ-নদীর পানি। এতে ভাঙতে শুরু করেছে নদী তীরবর্তী বাঁধ ও বেড়িবাঁধ। গত ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে জেলার ৫টি উপজেলার অন্তত ৮টি স্থানে বাঁধ সংলগ্ন সড়ক ও বেড়িবাঁধ ভেঙে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে অন্তত ১০ হাজার পরিবার। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন বন্যাকবলিত এলাকার বাসিন্দারা।
নওগাঁ পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯টার পর থেকে শহরের ছোট যমুনা নদীর লিটন ব্রিজে বিপৎসীমার ২৬ সেন্টিমিটার, ধামইরহাট উপজেলার আত্রাই নদীর শিমুলতলি ব্রিজে ৩ সেন্টিমিটার, মান্দার আত্রাই নদীর জোতবাজার পয়েন্টে ৫৪ সেন্টিমিটার, আত্রাই উপজেলায় আহসানগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশন পয়েন্টে বিপৎসীমার ৬৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।
জানা যায়, গত ১০ দিনের ব্যবধানে জেলায় অন্তত চারদিন টানা বৃষ্টিপাত হয়েছে। অন্যদিকে উজান থেকে নেমে আসা ঢলে আত্রাই নদী ও ছোট যমুনা নদীর পানি ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। এতে নদী তীরবর্তী এলাকার বাঁধ ও বেড়িবাঁধগুলোতে গত কয়েকদিন ধরেই দেখা দিচ্ছিলো ফাঁটল। ভাঙন এড়াতে স্থানীয়রা বস্তা ফেলেও শেষ পর্যন্ত শেষ রক্ষা হয়নি।
গত মঙ্গলবার সকাল থেকে বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ও বেড়িবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে অন্তত ২০টি গ্রাম। এরমধ্যে মান্দা উপজেলার কসব, নুরুল্ল্যাবাদ, পার নুরুল্ল্যাবাদ, বাইবুল্ল্যা ও বিষ্ণুপুর, রাণীনগর উপজেলার নান্দাইবাড়ী, বিষ্ণপুর ও চকমশাইল এবং আত্রাই উপজেলার জগদশ, বান্দাইখাড়া গ্রাম উল্লেখযোগ্য।
এসব এলাকায় গত ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে আকস্মিক পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ১০ হাজারের অধিক পরিবার। তলিয়ে গেছে কয়েক হাজার বিঘা জমির আউশ ও আমন ধান খেত। ভেসে গেছে পুকুরের মাছ। বন্যাকবলিত এলাকায় পানিবন্দি মানুষদের মাঝে সরকারি সহযোগিতায় চাল, ডালসহ শুকনা
নওগাঁ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী প্রবীর কুমার পাল ঢাকা পোস্টকে বলেন, উজান থেকে নেমে আসা ঢলে ক্রমাগত জেলার নদ-নদীর পানি বেড়েই চলেছে। এখন পর্যন্ত জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীন ৫টি পয়েন্টে বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ ভেঙেছে। সেগুলো মেরামত অব্যাহত আছে। এছাড়া যেসব স্থান ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে সেগুলো পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
আত্রাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সঞ্চিতা বিশ্বাস ঢাকা পোস্টকে বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৩টি সড়কসহ বাঁধ ও একটি বেড়িবাঁধ ভেঙে উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রামের ৬ সহস্রাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বাঁধগুলো ভাঙার পর থেকেই দ্রুত মেরামতে কাজ করছে সংশ্লিষ্ট দপ্তর। ইতোমধ্যে ৩টি বাঁধ মেরামত করা হয়েছে। বাকি একটি বেড়িবাঁধসহ ভেঙে যাওয়া অন্যান্য সড়কগুলো মেরামতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকেই প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় বন্যাকবলিত এলাকায় ৫০০ পরিবারের মাঝে চাল ও ডাল সরবরাহ করা হচ্ছে। এছাড়াও টিসিবি কার্যক্রম সচল রাখা হয়েছে।
নওগাঁর জেলা প্রশাসক গোলাম মওলা ঢাকা পোস্টকে বলেন, উজান থেকে নেমে আসা ঢল ও গত কয়েক দিনের বৃষ্টিতে জেলার আত্রাই, রাণীনগর, মান্দা, মহাদেবপুর, সাপাহার এবং নওগাঁ সদর উপজেলার অনেক এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এখানে হাজারো পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ক্রমাগত নদীর পানি বেড়েই চলেছে। সেই সঙ্গে পানিবন্দি মানুষের সংখ্যাও বাড়ছে।
গতকাল বুধবার (২৭ সেপ্টেম্বর) থেকে পানিবন্দি পরিবারের মাঝে সরকারি সহযোগিতায় চালসহ শুকনা খাবার বিতরন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। খাদ্য সহায়তা বিতরণে জেলা প্রশাসনের পর্যাপ্ত প্রস্তুতি আছে। তাই বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত খাদ্য সহায়তা প্রদান কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।