দিনশেষে সবাই মিলে ভালো থাকাই বড় ব্যাপার,জাহিদ হাসান

প্রথম নিউজ, অনলাইন: অভিনেতা জাহিদ হাসান, নামেই যার পরিচিতি। টেলিভিশন নাটকের অন্যতম শীর্ষ অভিনেতা তিনি। নব্বই দশক থেকে অভিনয়ে তার পথচলা শুরু। নাটক, সিনেমা, ওটিটি—তিন মাধ্যমেই তিনি উজ্জ্বল।
একাধিকবার পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। নাট্য পরিচালক হিসেবেও সফল হয়েছেন। নতুন করে আলোচনায় এসেছেন ‘উৎসব’ সিনেমায় অভিনয় করে। তানিম নূরের ‘উৎসব’-এ তাঁর অভিনয় প্রশংসা পেয়েছে বেশ।
ষষ্ঠ সপ্তাহে এসেও ছবিটি ঘিরে দর্শকের আগ্রহ তুঙ্গে। এর সূত্র ধরেই অভিনেতার সঙ্গে কথা বলেছেন কামরুল ইসলাম।
এখন কেমন আছেন
ঈদের আগের দিন অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন জাহিদ। টানা কয়েক দিন থাকতে হয়েছে হাসপাতালে।
যে সময় তাঁর ছবি ‘উৎসব’ নিয়ে সহশিল্পীরা ছুটছেন হলে হলে। তখন তিনি হাসপাতালের বিছানায়। পরে সুস্থ হয়ে তিনিও যোগ দেন। এখনকার অবস্থা জানিয়ে অভিনেতা বলেন, ‘এখন বেশ ভালো আছি। একটু দুর্বলতা অবশ্য আছে।
তবে মোটের ওপর ভালোই আছি।’
কৃতিত্ব দর্শকের
মুক্তির ষষ্ঠ সপ্তাহে এসে সব ছবির আবেদন ম্লান হয়ে গেছে। হল থেকে নেমে গেছে অধিকাংশ ছবি। দাপটের সঙ্গে টিকে আছে ‘উৎসব’। প্রথম সপ্তাহে সাত প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেলেও এই সপ্তাহে ছবিটি চলছে ২৭ হলে। এমন অভূতপূর্ব সাড়া নিয়ে জাহিদ বলেন, ‘এ জন্য দর্শকের প্রতি কৃতজ্ঞতা। তারা পরিবার নিয়ে সিনেমা হলে গেছে, এখনো যাচ্ছে। তাদের জন্যই ছবিটা সফল হয়ে উঠল। আমি চাই প্রতিটি ছবিই দর্শক দেখুক। তবেই তো আমাদের ইন্ডাস্ট্রিটা সচল হবে। সবাই মিলেমিশে কাজ করবে। আগে কত সুন্দর আর জমজমাট ছিল ইন্ডাস্ট্রি। সে রকম হয়ে উঠুক আবারও, এটাই প্রত্যাশা।’
হল ভ্রমণের অভিজ্ঞতা
গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে বারবার জাহিদ হাসান বলেছেন, এর আগে কোনো ছবির জন্য এত সাড়া পাননি তিনি। ‘উৎসব’ নিয়ে দর্শকের প্রতিক্রিয়া জানার জন্য তিনি বিভিন্ন প্রেক্ষাগৃহেও গেছেন, যেমনটা আগে করেননি। হল ভ্রমণের বিষয়ে তাঁর বক্তব্য, ‘এটা দারুণ অভিজ্ঞতা। অনেক অসুস্থ মানুষও হলে এসেছেন ছবিটা দেখতে। তাঁদের ভালোবাসা, ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখে কার না ভালো লাগবে! আমারও ভালো লেগেছে।’
প্রত্যাশা পেরিয়ে
অনেকে বলছেন, ‘উৎসব’ ছবির সাফল্য অকল্পনীয়। কেননা কয়েক বছর ধরে অ্যাকশন-থ্রিলার ছবির দাপট চলছে। যত বেশি মারকাট, নৃশংসতা, ততই যেন বাণিজ্য। এমন পরিস্থিতিতে পারিবারিক গল্পের ‘উৎসব’ রীতিমতো চমকে দিয়েছে। এ নিয়ে জাহিদ বলেন, ‘সত্যি বলতে, এতখানি সাফল্য পাবে, এটা ভাবিনি আমরা। এটুকু প্রত্যাশা ছিল, ছবিটা একটা ভালো জায়গায় যাবে। প্রাপ্তিটা আমাদের প্রত্যাশাকেও ছাড়িয়ে গেছে।’
ঝুঁকি নাকি বিশ্বাস
একদিকে বড় তারকাদের ছবি, অন্যদিকে সেসব ছবি অ্যাকশন-মশলা ফর্মুলার। এর মধ্যে ‘উৎসব’ মুক্তি দেওয়া ঝুঁকি ছিল? নাকি বিশ্বাস ছিল নিজেদের কাজের ওপর? বিষয়টি নিয়ে অবশ্য জাহিদ হাসান কিছু বললেন না। তাঁর মতে, ‘ঝুঁকির বিষয়ে তো আমি কিছু বলতে পারব না। আমি ছবিটার শুধু অভিনেতা। মুক্তির পরিকল্পনা, ঝুঁকি এসব নির্মাতা-প্রযোজকরা ভালো বলতে পারবেন।’
সতীর্থদের মিলনমেলা
ছবিতে জাহিদের সঙ্গে অভিনয় করেছেন অপি করিম, জয়া আহসান, চঞ্চল চৌধুরী, তারিক আনাম খান, ইন্তেখাব দিনার, আফসানা মিমি, আজাদ আবুল কালাম প্রমুখ। প্রত্যেকেই ঢাকার শোবিজের পরীক্ষিত ও চেনা মুখ। এ ছবিতে যেন তাঁদের মিলনমেলা হলো। জাহিদও তাই বললেন, ‘মিলনমেলা তো বটে। বেশ আনন্দেই শুটিং করেছিলাম। আমরা আমরাই তো। দীর্ঘদিন একই ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করছি। দিনশেষে সবাই মিলে ভালো থাকাই বড় ব্যাপার।’
নবীন বন্দনা
ছবিতে জাহিদ হাসান রয়েছেন ‘জাহাঙ্গীর’ চরিত্রে। এ চরিত্রের ছোটবেলার ভূমিকায় আছেন তরুণ অভিনেতা সৌম্য জ্যোতি। তাঁর অভিনয়ও ভূয়সী প্রশংসা পেয়েছে। বাদ গেলেন না জাহিদও। বলেন, ‘সৌম্য বেশ ভালো করেছে। ওর মধ্যে দারুণ সম্ভাবনা। জাহাঙ্গীর চরিত্রটা কঠিন, ওই কঠিন কাজটাই সে করে দেখিয়েছে। এইটুকু মাত্র বয়স, এই বয়সে আমাদের হাত-পা কাঁপত। ওর জন্য দোয়া করি, যেন অনেক দূর যেতে পারে।’
ভালো কাজের অপেক্ষা
আগের চেয়ে অভিনয় অনেকটা কমিয়ে দিয়েছেন। এখন আর জাহিদ হাসানকে প্রতিনিয়ত পর্দায় পাওয়া যায় না। কারণ কী? ‘কাজের প্রস্তাব আসে না, তাই করা হয় না। ভালো কাজের জন্য কেউ ডাকলে অবশ্যই করব। এমনিতে নিজ থেকে কোনো বিরতি বা অবসরে তো যাইনি আমি। এর মধ্যে নতুন কিছুতেও আপাতত যুক্ত হইনি’—বললেন জাহিদ হাসান।