ত্রিমুখী সংঘর্ষে রণক্ষেত্র বগুড়া, পুলিশ বক্সসহ ৮ মোটরসাইকেলে আগুন, সাংবাদিকসহ আহত অর্ধশতাধিক
এসময় ছাত্রলীগ এবং তাদের মিত্র দলের নেতাকর্মীরা টেম্পল রোড়ের গলি দিয়ে দ্রুত পালিয়ে যায়।
প্রথম নিউজ, বগুড়া: তখন বিকেল ৩টা। কোটাবিরোধীরা জড়ো হতে থাকেন। মুখে স্লোগান হাতে ফেস্টুন। বগুড়া জেলা স্কুলের গেটের সামনে আসতেই ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের একদল নেতাকর্মী অতর্কিত হামলা চালায় শিক্ষার্থীদের ওপর। একের পর এক ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায় ছাত্রলীগ। বিস্ফোরণ ঘটায় সাউন্ড গ্রেনেডও। আন্দোলনকারীদের ওপর সরকার দলের নেতাকর্মীদের হামলার খবর নিমিষেই ছড়িয়ে পড়ে গোটা শহর। এরপর শুরু হয় তাণ্ডব। কয়েক হাজার কিশোর-তরুণ-তরুণী সাতমাথায় একত্রিত হয়ে মোকাবিলা করে হামলাকারীদের। এসময় ছাত্রলীগ এবং তাদের মিত্র দলের নেতাকর্মীরা টেম্পল রোড়ের গলি দিয়ে দ্রুত পালিয়ে যায়।
একপর্যায়ে তারা শহরের ফতেহ আলী বাজারের গেটে অবস্থান নেয়। পরে আন্দোলনকারীদের ধাওয়ায় সেখান থেকেও পালিয়ে যায় সরকার সমর্থকরা। তারপর আওয়ামী লীগের জেলা কার্যালয়ের সামনে একটি পুলিশ বক্সে আগুন দেয় শিক্ষার্থীরা। দাউ দাউ আগুনে নিমিষেই ভস্মীভূত হয় পুলিশ বক্স। ওই সময় বক্সের সামনে রাখা ৮টি মোটরসাইকেল পুড়ে ছাই হয়ে যায়। আরো ১০/১২টি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে আন্দোলনকারীরা।
এসময় পুরো সাতমাথা জুড়ে নানাধরনের স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে। এক পর্যায়ে নতুন নির্মিত মুজিব মঞ্চ ভেঙে তছনছ করে। শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরালেও আঘাত করতে দেখা যায় আন্দোলনকারীদের। তাদের ক্ষিপ্রতা এতবেশি ছিলো , সাতমাথায় অবস্থিত জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ও সাবেক জেলা পরিষদের সদস্য সুলতান মাহমুদ খান রনির ব্যক্তিগত কার্যালয়ের ভিতরে ঢুকে ব্যাপক ভাংচুর করে। ভাঙচুর করে জেলা আওয়ামী লীগের অফিসও।
পুলিশ প্রথমে এ্যাকশনে গেলেও পরে পরিস্থিতি খারাপ দেখে থেমে যায়। পুলিশ কাজী নজরুল ইসলাম সড়কে দাঁড়িয়ে আন্দোলনকারীদের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করেন। এমন কি আগুন নেভানোর জন্যও পুলিশের কোন সদস্য এগিয়ে যেতে দেখা যায়নি। রণক্ষেত্রে ইটপাটকেলের আঘাতে বেশ কয়েকজন সাংবাদিক এবং ৫০ জনের অধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।
এ বিষয়ে সদর ধানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) শাহিনুজ্জামান বলেন, ছাত্রদের আন্দোলনে প্রাথমিক অবস্থায় পুলিশ কোন ভূমিকা রাখছে না। সাতমাথায় যে ঘটনা ঘটেছে সে বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এর আগে সকালে বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজে কোটা সংস্কার আন্দোলনে ককটেল হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে ৪ জন আহত হয়েছেন। বেলা ১১ টার দিকে কলেজ চত্বরে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর থেকে কলেজ ক্যাম্পাসে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করে। আহতরা হলেনÑ সুমন রানা, মামুন, তাফসি, মিলন ও সুমন কুমার পাল।
সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কলেজ ক্যাম্পাসের জামিলনগর গেটে আন্দোলন শুরু করে শিক্ষার্থীরা। এসময় হঠাৎ দুর্বৃত্তরা কলেজের আমচত্বরে একটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায়। এতে চারজন আহত হন। আহতদের উদ্ধার করে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে ক্যাম্পাসে অবস্থান নেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কলেজ ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
আজিজুল হক কলেজে দায়িত্বে থাকা বগুড়া স্টেডিয়াম ফাঁড়ির পরিদর্শক আশিক ইকবাল বলেন, যে কোনো প্রকার অপ্রীতিকর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। মেডিকেল ফাঁড়ির ইনচার্জ মিলাদুন্নবী বলেন, সরকারি আজিজুল হক কলেজ থেকে আহত হয়ে চারজন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তাদের চিকিৎসা চলছে।
ওদিকে সন্ধ্যার পর প্রায় আধা ঘন্টা যাবৎ গুলি ও টিয়ারশেল নিক্ষেপের পর পুলিশের নিয়ন্ত্রণের আসে বগুড়া সাতমাথা। এরপর যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সাতমাথা এলাকায় একত্রিত হয়ে শহরের বিভিন্ন শহরে মিছিল করে এবং বিএনপির কার্যালয়ের সামনে রাস্তায় আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে করে রাস্তার উপরে থাকা বৈদ্যুতিক তার, ইন্টারনেটের তার ও ডিস লাইনের তারে আগুন ধরে যায়।
বগুড়া পুলিশ সুপার জাকির হাসান বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এসেছে। ইতিমধ্যে পুলিশ ছাড়াও ৩ প্লাটুন বিজিবি, দেড়শো এপিবিএনসহ অন্যান্য ফোর্স পাচ্ছি। আমরা শহরের নিরাপত্তার জন্য অলিতে গলিতে পুলিশ পুলিশসহ অন্যান্য বাহিনী রাখার ব্যবস্থা করে যাচ্ছি। তিনি আরো বলেন, যেহেতু আমাদের ক্ষতি হয়েছে। এক্ষেত্রে আমাদের পক্ষ থেকে মামলা হবে। এছাড়া ব্যক্তিগতভাবে যাদের ক্ষতি হয়েছে তারাও মামলা করতে পারে।