জাতিসংঘ মহাসচিবের সঙ্গে বৈঠক র‌্যাব বিলুপ্তি ও পুতুলের নিয়োগ রিভিউয়ের আহ্বান জানিয়েছেন উমামা

 জাতিসংঘ মহাসচিবের সঙ্গে বৈঠক র‌্যাব বিলুপ্তি ও পুতুলের নিয়োগ রিভিউয়ের আহ্বান জানিয়েছেন উমামা

প্রথম নিউজ, অনলাইন: জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের সঙ্গে তরুণ প্রতিনিধিদের বৈঠকে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) বিলুপ্তির উদ্যোগ গ্রহণ এবং শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় নিয়োগ রিভিউ করার আহ্বান জানিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা।

শনিবার (১৫ মার্চ) দিবাগত মধ্যরাতে নিজের ফেসবুকে আইডিতে এক পোস্টে বিষয়বস্তু তুলে ধরে এসব কথা বলেন তিনি।

ফেসবুক পোস্টে উমামা লেখেন, ‘আজ দুপুর ২.৩০টায় ঢাকার ইন্টারকন্টিনেন্টালে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের সঙ্গে তরুণ প্রতিনিধিদের বৈঠক আয়োজিত হয়। এ বৈঠকে ছাত্র প্রতিনিধি হিসেবে আমার যুক্ত হওয়ার সুযোগ হয়েছিল। আমার সংক্ষিপ্ত বক্তব্যের মধ্য দিয়ে যে প্রসঙ্গগুলো উত্থাপনের চেষ্টা করেছি তা হলো-

১) গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রীয় সব বাহিনীকে ব্যবহার করে গুম, খুন, নির‌্যাতন চালিয়ে গেছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের রিপোর্টের সাজেশন অনুযায়ী RAB ও NTRC র মতো বাহিনীকে বন্ধ করার (Ban) উদ্যোগ গ্রহণ।

২) জাহিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের প্রধান ভলকার তুর্ক তার সাম্প্রতি প্রেস ব্রিফিং এ জানান, UN রিপোর্ট অনুযায়ী আওয়ামী লীগের বিচার করা উচিত। একি সাথে আরেকটি কথা বলেছেন, অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে আমাদের এই Cycle of Revenge থেকে বের হয়ে আসতে হবে। আমার বক্তব্যে জাতিসংঘের International Criminal Court (ICC) তে আওয়ামী লীগের গণহত্যাকে 'মানবতাবিরোধী অপরাধ' হিসেবে চিহ্নিত করে আন্তর্জাতিক আদালতে বিচারের আওতায় আনার সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের আবেদন জানাই। উত্তরে আন্তোনিও গুতেরেস জানান, যেহেতু বাংলাদেশ ICC র স্টেট পার্টি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত আছে (২০১১ সাল থেকে), তাই ICC-র অংশীদার রাষ্ট্রগুলোর সম্মতির ভিত্তিতে আওয়ামী লীগকে বিচারের আওতায় আনার সুযোগ বাংলাদেশের আছে।

৩) শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল বর্তমানে WHO এর দক্ষিণপূর্ব এশিয়া অঞ্চলের প্রধান হিসেবে কর্মরত আছেন। দুই বছর আগেই সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। 'The Lancet' সাময়িকীতে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের মনোনয়নে দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ নিয়ে একটি আর্টিকেল প্রকাশিত হয় গত ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ এ। এই নিয়োগটি রিভিউ করার জন্য আমরা মহাসচিবের দৃষ্টি আকর্ষণ করি।

৪) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে (Facebook, Twitter etc.) জুলাই অভ্যুত্থান বিষয়ে ব্যাপক অপতথ্যের ছড়াছড়ি। আওয়ামী অনবরত এই সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডেলগুলো ব্যবহার করে অনবরত গুজব ছড়িয়ে যাচ্ছে। আমার বক্তব্যে অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নারীদের গণহারে হেনস্থা ও অপদস্থ করার প্রতিবাদ জানাই। একিসাথে তৃতীয় বিশ্বের দেশ হিসেবে এই Communication platform গুলোর তদারকির দূর্বলতার প্রসঙ্গ উল্লেখ করি। উদাহরণস্বরূপ, মিয়ানমারে রোহিঙ্গা গণহত্যার মাঠ তৈরির জন্য দেশের মিলিটারি এজেন্সি ফেসবুক ব্যাপক অপতথ্য সার্কুলেট করে রোহিঙ্গাদের গণহত্যা ও বাস্তুচ্যুত করার সম্মতি উৎপাদন করে।

৫) বাংলাদেশে নারী নিরাপত্তা, একিসাথে নারী ও শিশুবান্ধব পরিবেশ তৈরির জন্য জাতিসংঘের সহায়ক সংস্থাগুলোর অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি তুলে ধরি।জাতিসংঘের সহায়তা, জুলাই অভ্যুত্থানের সেনাবাহিনী কর্তৃক আয়নাঘরের আলামত নষ্ট করা, ভারত-বাংলাদেশ বর্ডারে BSF কর্তৃক বর্ডার কিলিং রোধে ব্যবস্থা গ্রহণ, বন্দিবিনিময় চুক্তির অধীনে শেখ হাসিনা ও পলাতক খুনীদের দেশে ফেরত আনার জন্য জাতিসংঘের মধ্যস্থতার আবেদন, বাংলাদেশের ভঙ্গুর অর্থনীতি পুনর্গঠনে সহায়তাসহ অনেক প্রসঙ্গ উঠে আসে।

দুপুরে হোটেলটিতে দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে গোলটেবিল বৈঠকে বসেন জাতিসংঘের মহাসচিব।