জাকাত ব্যবস্থা চালু হলে ৫ বছরের মধ্যে একজনও দরিদ্র থাকবে না,সেমিনারে মিয়া গোলাম পরওয়ার

জাকাত ব্যবস্থা চালু হলে ৫ বছরের মধ্যে একজনও দরিদ্র থাকবে না,সেমিনারে মিয়া গোলাম পরওয়ার

প্রথম নিউজ, অনলাইন:  বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, জাকাত ভিত্তিক অর্থনীতি চালু না হলে এদেশে অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধান হবে না। এটি চালু করতে হলে ইসলামী রাষ্ট্র ছাড়া সম্ভব না। দেশে যত ধনী আছে তারা যদি যাকাত দেন তাহলে আগামী ৫ বছরে বাংলাদেশে একজনও দরিদ্র থাকবে না। সবাই জাকাতদাতা হয়ে যাবে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ইনসাফ ভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। সংগঠনের বিত্তবান ব্যক্তিদের সঠিক নিয়মে জাকাত ও উশর প্রদান করার আহবান জানান তিনি।

শনিবার রাতে খুলনা মহানগরী জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে নগরীর আল ফারুক সোসাইটিতে অনুষ্ঠিত জাকাত ও উশর শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।

মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ধনী ব্যক্তিরা তাদের সম্পদের প্রকৃত ফায়দা তখনই পাবেন, যখন ইসলামকে প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে সম্পৃক্ত হবেন। শুধু জাকাত প্রদান করলেই সমাজের সব সমস্যা সমাধান হবে না; ইসলামের অন্যান্য মৌলিক বিধানও মেনে চলতে হবে। কুরআন ও সুন্নাহর ভিত্তিতে একটি সৎ ও মানবিক সমাজ গঠনের কোনো বিকল্প নেই।

তিনি বলেন, মানুষের রচিত আইনকানুনের কারণে যে বৈষম্য, জুলুম ও শোষণ সৃষ্টি হয়েছে এগুলো থেকে সমাজকে বের করে এনে সুন্দর স্বাচ্ছন্দ্য জীবন এবং ভারসাম্যপূর্ণ অর্থব্যবস্থা নিশ্চিত করে জাকাত। সে কারণে জাকাত ইসলামে একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। আমাদের সমাজ জাকাতকে বর্জন, গণতান্ত্রিক পুঁজিবাদী তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষ চিন্তাচেতনার ওপর গড়ে উঠার কারণে সমাজের মানুষের শোষণ বঞ্চনা দূর হচ্ছে না। জাকাত ভিত্তিক অর্থব্যবস্থা চালু না হলে এটা দূর করাও সম্ভব হবে না।

জামায়াত সেক্রেটারি বলেন, প্রচলিত পুঁজিবাদী ও তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষ ব্যবস্থার কারণে সমাজে বৈষম্য, শোষণ ও বঞ্চনা বেড়েছে। অথচ জাকাতভিত্তিক অর্থব্যবস্থা চালু করা হলে সমাজের শোষণ ও দারিদ্র্য দূর হবে এবং ভারসাম্যপূর্ণ অর্থনৈতিক ব্যবস্থা নিশ্চিত হবে ইনশাআল্লাহ।

কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য ও খুলনা মহানগরী আমির অধ্যাপক মাহফুজুর রহমানের সভাপতিত্বে প্রধান বক্তা ছিলেন বাংলাদেশ মসজিদ কাউন্সিলের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মীর মঞ্জুর মাহমুদ, বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সেক্রেটারি মুহাদ্দিস আব্দুল খালেক। কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য ও মহানগরী সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট শেখ জাহাঙ্গীর হুসাইন হেলালের পরিচালনায় সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কুস্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের দাওয়াহ অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের প্রফেসর ড. অ. ছ. ম. তরীকুল ইসলাম।

এ সময় মহানগরী নায়েবে আমির অধ্যাপক নজিবুর রহমান, সহকারী সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট শাহ আলম, প্রিন্সিপাল শেখ জাহাঙ্গীর আলম ও আজিজুল ইসলাম ফারাজী, হাফেজ মাওলানা আবু বকর সিদ্দিক প্রমুখ।  

সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান বলেন, আজকে ইসলামী রাষ্ট্র নেই। জাকাতভিত্তিক জাকাত ব্যবস্থা চালু করতে হলে ইসলামী রাষ্ট্র প্রয়োজন। তাই যাকাত ভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করার জন্য আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাব। সংগঠনের সমাজকল্যাণ তহবিলে জাকাতের টাকা দিয়ে সমাজের দুস্থ, বেকার লোকজনকে কর্মসংস্থান করে দিয়ে আর্থিক সচ্ছলতা নিয়ে আসার চেষ্টা করে যাচ্ছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। সে কাজে সবার সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।

এদিকে খুলনার খানজাহান আলী থানাধীন ঐতিহ্যবাহী গিলাতলা দক্ষিণপাড়া ইসলাম প্রিয় তৌহিদী জনতার উদ্যোগে তিন দিনব্যাপি (১৯, ২০ ও ২১ ফেব্রুয়ারি) ৫১তম বার্ষিক ঐতিহাসিক আমিনিয়া ইছালে ছওয়াব ও তাফসিরুল কুরআন মাহফিলের প্রধান অতিথি ছিলেন সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার।  তৃতীয় অর্থাৎ সমাপনী দিনে সভাপতিত্ব করেন নওয়াপাড়া পীর সাহেব হযরত মাওলানা রফিকুজ্জামান শাহ।

বিশেষ অতিথি ছিলেন ফুলতলা আইয়ান জুট মিলস্ লি. ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ফেরদৌস হোসেন ভূঁইয়া।

মাহফিলে আলোচনা পেশ করবেন ভারতের বশিরহাটের পীর সাহেব হযরত মাওলানা শরফুল আমীন, ঢাকার মুক্তির জ্ঞান ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক হযরত মাওলানা মুফতী আব্দুস সামাদ আজাদ, রাজশাহী বায়তুন নাজাত জামে মসজিদের খতিব হাফেজ ক্বারী হযরত মাওলানা মুস্তাক আহমাদ, গিলাতলা বাইতুন নূর জামে মসজিদের খতিব মাওলানা মুফতী আবুল বাশার জিহাদী, ভারত থেকে আগত বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিত হযরত মাওলানা জাহিদুল ইসলাম বৈদ্যর এবং দিঘলিয়ার লাখোহাটির বিশিষ্ট আলোচক হযরত মাওলানা মনিরুল ইসলাম গাজীপুরী।