গণতন্ত্রের নামে আ.লীগ একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে : মির্জা ফখরুল

গাজীপুর পার হওয়ার পর মনে হলো হরতাল নাকি কারফিউ চলছে

গণতন্ত্রের নামে আ.লীগ একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে : মির্জা ফখরুল
বক্তব্য রাখেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

প্রথম নিউজ, ময়মনসিংহ: বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘চুরি, দুর্নীতি, ডাকাতি এগুলো আওয়ামী লীগের মজ্জাগত। তারা একটি চোরের দল।’

ময়মনসিংহ শহরের পলিটেকনিক মাঠে আজ শনিবার বিকেলে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি। বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘দুইটা জিনিস আওয়ামী লীগের বডি কেমিস্ট্রিতে আছে। ওখান থেকে তারা বের হতে পারে না। একটা হচ্ছে চুরি, আরেকটা হচ্ছে সন্ত্রাস। দেখবেন, তারা কথায় কথায় লাঠি নিয়ে আসবে, কথায় কথায় লাঠি নিয়ে আসবে, ভয় দেখাবে।’

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আওয়ামী লীগ চোরের দল, আমার কথা না। কথাটা আমার না। কথাটা ওদের নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের। ১৯৭৪ সালে যখন আওয়ামী লীগের দুঃশাসনের কারণে দুর্ভিক্ষ হলো, সেই দুর্ভিক্ষের সময় তিনি বললেন- আমার তো সব চোরের দল। কম্বল গুলো যে আসলো বিদেশ থেকে, আমার কম্বল কোথায় গেল। এই হচ্ছে আওয়ামী লীগ’

তিনি বলেন, বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন জিয়াউর রহমান। একটা তলাবিহীন ঝুড়িকে তিনি সম্ভাবনাময় রূপ দিয়েছিলেন। তিনি বিদেশে লোক পাঠিয়েছিলেন। তাদের রেমিট্যান্সের টাকাতেই দেশ চলে। এ সময় তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে কখনই সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব না। তাই এই সরকারকে অবিলম্বে পদত্যাগ করতে হবে এবং সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে হবে। তিনি আরও বলেন, একটা বিষয়ে আমরা পরিষ্কার করে বলতে চাই, দলীয় সরকার থাকলে কোনো নির্বাচন কোনোদিন সুষ্ঠু হবে না। সেটা প্রমাণ হয়েছে।

বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি, নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার, জ্বালানি তেল, চাল-ডালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, পুলিশ ও সন্ত্রাসীদের গুলিতে হত্যা, হামলা এবং মিথ্যা মামলার প্রতিবাদে আজ শনিবার এই বিভাগীয় গণসমাবেশ করছে বিএনপি।

বিএনপির মহাসচিব  বলেন, আজকে আমি যখন ময়মনসিংহে রওনা দিলাম। গাজীপুর পার হওয়ার পর মনে হলো হরতাল চলছে নাকি কারফিউ চলছে। রাস্তায় কোনো গাড়ি নেই, ট্রাক নেই। কিছু ছোট ছোট ট্রাকে আমাদের কিছু নেতা-কর্মীরা আসছে। এরপরে শুনলাম মাঝখানে লাঠিসোঁটা নিয়ে নাকি ছাত্রলীগের সোনার ছেলেরা দাঁড়িয়ে আছে। তারপর যখন কাছে পৌঁছলাম দেখলাম সোনার ছেলেরা লেজ গুটিয়ে পালিয়ে গেছে। আমাদের ছেলেরা তাদের তাড়িয়ে দিয়েছে। শত বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে আজকের সভা প্রমাণ করেছে বাংলাদেশের মানুষ তারা কোনো বাধা মানবে না। তারা অবশ্যই এই দেশকে মুক্ত করে ছাড়বে।

সমাবেশে ফখরুল বলেন, 'আজকে আমরা এখানে এসেছি আমাদের দেশকে আবার আমাদের জায়গায় ফিরিয়ে আনতে। আমরা এসেছি এই যে চেয়ারটা খালি আছে। কার জন্য? দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জন্য। তিনি আমাদের মাঝে নেই। তিনি আমাদের দলের প্রধান। তিনি গণতন্ত্রের জন্য আজীবন সংগ্রাম করেছেন। তাকে এখন মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে অন্ত্যরীণ করে রাখা হয়েছে। সেজন্য আমরা এই চেয়ারটা খালি রেখেছি আমাদের ময়মনসিংহ বিভাগীয় সম্মেলনে।'

'আপনাদের অনুরোধ জানাতে চাই, এই তরুণদের, আমাদের দেশ ও জাতির ভবিষ্যৎ, যাকে নিয়ে আমরা স্বপ্ন দেখি যে, তিনি আমাদের মুক্তির পথ দেখাচ্ছেন ও দেখাবেন- সেই আমাদের তরুণ নেতা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তাকে যদি ফিরিয়ে আনতে চাই, দেশনেত্রীর যদি মুক্তি চাই, আমাদের লাখ লাখ মানুষের মিথ্যা মামলা যদি প্রত্যাহার করতে চাই- তাহলে আপনাদের আমি অনুরোধ করব দয়া করে একটু বসেন।

তিনি আরও বলেন, 'আমাদের ৫ জন বীর সেনা ছাত্রদলের নূরে আলম, স্বেচ্ছাসেবক দলের আব্দুর রহিম, যুবদলের নারায়ণগঞ্জ ও মুন্সিগঞ্জের শাওন, যশোরের আব্দুল আলিম তারা প্রাণ দিয়েছেন। রক্ত ঢেলে দিয়েছেন, পুলিশের গুলির সামনে বুকে পেতে দিয়ে আওয়াজ তুলেছে যে বাংলাদেশকে মুক্ত করতে হবে। আপনারা তাদের সম্মান দেখাতে চান, তাদের শ্রদ্ধা করতে চান, তাদের রক্তদানকে বৃথা যেতে দেবেন না বলে শপথ নিয়েছেন। ওই শপথে আজকে আমাদের অটুট থাকতে হবে।'

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে কখনই সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব না। তাই এই সরকারকে অবিলম্বে পদত্যাগ করতে হবে। একই সঙ্গে সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে হবে।  গণতন্ত্রের নামে একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে আওয়ামী লীগ। একটা বিষয়ে আমরা পরিষ্কার করে বলতে চাই, দলীয় সরকার থাকলে কোনো নির্বাচন কোনোদিন সুষ্ঠু হবে না। সেটা প্রমাণ হয়েছে।

গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচনের প্রসঙ্গ টেনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ১ হাজার ৩৮০টা সিসি ক্যামেরা ছিল, পর্যাপ্ত নাকি নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল, পুলিশ-র‌্যাব পাহারায় ছিল। তারপর ওই নির্বাচন দুপুরের মধ্যে বন্ধ ঘোষণা করতে হয়েছে। এ থেকেই প্রমাণ হয়, দলীয় সরকারের অধীনে কখনও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব না।

সমাবেশের প্রধান অতিথি দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এতে বক্তব্য রাখার কথা রয়েছে- স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, বিএনপি চেয়ারপার্সনে উপদেষ্টা মশিউর রহমান। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেছেন মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক একেএম শফিকুল ইসলাম।

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:

news.google.com

https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews

https://youtube.com/prothom