চীন ও রাশিয়া তাদের সামরিক সহযোগিতা বাড়াচ্ছে, সতর্ক করলো জাপান

চীন ও রাশিয়া তাদের সামরিক সহযোগিতা বাড়াচ্ছে, সতর্ক করলো জাপান

প্রথম নিউজ, আন্তজাতিক ডেস্ক: রাশিয়ান ও চীনা সামরিক সহযোগিতার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়োশিমাসা হায়াশি। তিনি বলেছেন, যে ইউক্রেনে মস্কোর পূর্ণ মাত্রায় আগ্রাসনের পর থেকে ইউরোপের নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে  ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের থেকে আলাদা করা যায়  না। সুইডেনে ইউরোপীয় ও ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের এক বৈঠকে বক্তৃতাকালে হায়াশি বলেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধ আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার ভিত্তিকে নাড়িয়ে দিয়েছে, যার জন্য রাশিয়াকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ঐক্যবদ্ধ প্রতিক্রিয়ার মুখোমুখি হতে হবে। 

হায়াশির মতে, বিদ্যমান শৃঙ্খলা যা শান্তি ও সমৃদ্ধির উপর ভিত্তি করে তৈরি করেছে তা মৌলিকভাবে উল্টে যেতে পারে। জাপান দৃঢ়ভাবে যুদ্ধে ইউক্রেনকে সমর্থন করে, কিন্তু চীন রাশিয়ার সাথে সম্পর্ক নিয়ে  নিরপেক্ষ অবস্থান নেয় এবং সংঘাতের উসকানি দেয়ার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ন্যাটোকে দায়ী করে। জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা মার্চ মাসে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ সফর করেন। অন্যদিকে  চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং মস্কোতে গিয়ে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে দেখা করেন। 

হায়াশি বেইজিংকে জোর করে পূর্ব ও দক্ষিণ চীন সাগরে স্থিতাবস্থা পরিবর্তন করতে এবং তাইওয়ানের আশেপাশে তার সামরিক তৎপরতা বৃদ্ধির জন্য দায়ী  করেছেন। চীন ও রাশিয়া তাদের বোমারু বিমানের যৌথ ফ্লাইট এবং জাপানের আশেপাশে যৌথ নৌ মহড়াসহ তাদের সামরিক সহযোগিতা জোরদার করছে বলে অভিযোগ তোলেন হায়াশি। চীন, দক্ষিণ চীন সাগরের বেশিরভাগ অংশের পাশাপাশি পূর্ব চীন সাগরে জাপানিদের দখলে থাকা দ্বীপগুলি নিজেদের বলে দাবি করে আসছে। চীন মনে করে- সার্বভৌমত্ব এবং উন্নয়ন স্বার্থ রক্ষা করার অধিকার রয়েছে তাদের।হায়াশি আরও সতর্ক করে বলেছেন যে, উত্তর কোরিয়া এই অঞ্চলে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ করে নজিরবিহীনভাবে উস্কানি দিচ্ছে। তিনি সুইডিশ রাজধানীর উত্তরে বৈঠকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের কয়েক ডজন মন্ত্রীর সাথে যোগ দেন। যদিও চীনকে আলোচনায় আমন্ত্রণ জানানো হয়নি।
ভারত ও পাকিস্তান সহ কিছু ইন্দো-প্যাসিফিক দেশ ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছে, কিন্তু এর জন্য রাশিয়ার দিকে তারা আঙুল তুলছে না। পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিনা রব্বানি খার বলেছেন, "আমরা সবাই আমাদের নিজস্ব উপায়ে এটির সমাধান করার চেষ্টা করি। আমি মনে করি, পাকিস্তানের মতো একটি দেশ যে শিক্ষাটি নিয়েছে তা হলো সংঘাতের স্রোত কখনই উত্তর নয়;  আমরা শত্রুতার অবসান চাই, সংঘাতের অবসান চাই, যাতে মানুষ আরও জীবন ধ্বংস করার পরিবর্তে জীবন গড়তে পারে।''

বেশিরভাগ ইইউ দেশ ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা দিয়েছে এবং ব্লক রাশিয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। ইইউ ইন্দো-প্যাসিফিক দেশগুলিকে সংঘাতের বিষয়ে ব্লকের অবস্থানের সাথে একত্রিত হতে রাজি করার আশা করছেন কিনা জানতে চাইলে ইইউ পররাষ্ট্র নীতির প্রধান জোসেপ বোরেল বলেন,''আমরা কাউকে বোঝাতে চাই না। আমরা শুধু যুদ্ধের কারণ ও পরিণতি সম্পর্কে আমাদের বিশ্লেষণ শেয়ার করতে চাই।''

তিনি চীন ছাড়া ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলির সাথে অর্থপূর্ণ সংলাপ করা সম্ভব কিনা সে সম্পর্কে প্রশ্ন খারিজ করে দিয়ে বলেছেন, ''আমরা চীনকে  ছাড়াই  ইন্দো-প্যাসিফিক নিয়ে   আলোচনা করতে পারি। এর মানে এই নয় যে আমরা চীনকে অবহেলা করি। বা আমরা চীনের বিকল্প চাই।''