চাঁদা না পেয়ে দোকান বন্ধ করে দিল ছাত্রলীগ নেতা
অভিযুক্ত সবাই শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন টিপুর অনুসারী এবং উপগ্রুপ সিক্সটি নাইনের কর্মী বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী দোকানিরা।
প্রথম নিউজ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়: চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় স্টেশনের কয়েকটি দোকান থেকে গণচাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত সবাই শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন টিপুর অনুসারী এবং উপগ্রুপ সিক্সটি নাইনের কর্মী বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী দোকানিরা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বুধবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয় স্টেশন প্রবেশমুখে কয়েকটি দোকান থেকে গণচাঁদাবাজি করেন তারা। সেখানে থাকা বাজেট কম, জোস বার্গার, শাটল বার্গার, হাংরি ক্যাম্পাস, ফুড লাভার নামের দোকানগুলো থেকে চাঁদা দাবি করা হয়। দু-একজন দোকানি স্থানীয় নেতা দ্বারা বিষয়টি সমাধান করলেও অধিকাংশ চাঁদা দিতে বাধ্য হন। চাঁদা না দিলে দোকান বন্ধ করে দেওয়াসহ মারধরের হুমকি দেন অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা।
এ সময় শাটল বার্গার নামে একটি দোকানে তালা লাগিয়ে চাবি নিয়ে চলে যান তারা। পাশে দুটি নম্বর দিয়ে যান, যদি টাকা দিতে রাজি হয় তাহলে যেন মোবাইল ফোনে কল দেন। চাঁদা না দিলে দোকান খুলতে দেবন না। দোকানে টাকার জন্য দেওয়া নম্বরের একটি শাখা ছাত্রলীগের মুক্তিযুদ্ধ ও গবেষণা বিষয়ক উপ-সম্পাদক ইসহাক আলম ফরহাদের এবং পরিবেশবিষয়ক উপ-সম্পাদক আবু হেনা রনীর। উভয়কে কল দিয়ে নম্বরের সত্যতা নিশ্চিত করে জাগো নিউজ।
প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চাঁদাবাজি করতে আসা ব্যক্তিরা ১০-১২ জন ছিলেন। ভুক্তভোগী দোকানদার ও প্রত্যক্ষদর্শীরা ছবি দেখে কয়েকজনের নাম নিশ্চিত করেছেন। ওপরের দুইজন ছাড়াও চাঁদাবাজিতে জড়িত অভিযুক্তরা হলেন- শাখা ছাত্রলীগের উপ-মানবসম্পদ উন্নয়নবিষয়ক সম্পাদক প্রবাল পাল, উপ-প্রচার সম্পাদক শফিকুল ইসলাম শাওন, উপ-কর্মসূচি ও পরিকল্পনাবিষয়ক সম্পাদক মাশরুর অনিক, উপ-ধর্মবিষয়ক সম্পাদক আজিজুল হাকিম মাটি।
এছাড়াও ইতিহাস বিভাগ ২০১৫-১৬ সেশনের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের উপ-অর্থ সম্পাদক জুনায়েদ হোসেন জয়, ২০১৬-১৭ সেশনের শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্রলীগের উপ-তথ্য প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক আমিরুল হক চৌধুরী, পদার্থবিদ্যা বিভাগের একই সেশনের শিক্ষার্থী ও উপ-প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক মাহফুজ আল মামুন এবং পরিসংখ্যান বিভাগের একই সেশনের শিক্ষার্থী মিল্টনেরও জড়িত থাকার অভিযোগ আছে।
এ বিষয়ে কথা বলতে সাহস করেননি ছাত্রলীগ নেতাদের আড়াই হাজার টাকা দেওয়া শাটল বার্গার দোকানের মালিক মোহাম্মদ নাজিম উদ্দীন।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত পরিবেশবিষয়ক উপ-সম্পাদক আবু হেনা রনি বলেন, ক্যাম্পাসের দোকানগুলো অবৈধ জায়গায় আছে। সম্প্রতি আমি ক্যাম্পাসের পরিবেশ রক্ষার্থে অবৈধ এসব দোকানের যত্রতত্র প্লাস্টিকের ব্যাবহার নিয়ে কাজ করছি। সেই আক্রোশ থেকে আমাকে এখানে জড়ানো হয়েছে। ছাত্রলীগের মুক্তিযুদ্ধ ও গবেষণাবিষয়ক উপ-সম্পাদক ইসহাক আলম ফরহাদ বলেন, এগুলো ভিত্তিহীন। আমাকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এখানে জড়ানো হচ্ছে। কে বা কারা আমার নম্বর দিয়েছে তাও আমি নিশ্চিত নই। যে প্রত্যক্ষদর্শী আপনাকে আমার ব্যাপারে নিশ্চিত করেছে তাকে নিয়ে আমার হলে দেখা করুন। তাহলে আমি বুঝতে পারবো বিষয়টা।
আরেক অভিযুক্ত শাখা ছাত্রলীগের উপ-মানবসম্পদ উন্নয়নবিষয়ক সম্পাদক প্রবাল পাল বলেন, দোকানগুলো অবৈধভাবে চালানো হচ্ছে। আমরা এ বিষয়ে খবর নিতে গিয়েছিলাম। কিন্তু কোনো চাঁদাবাজির ঘটনা ঘটেনি। অন্য অভিযুক্তরাও প্রায় একই সুরে নিজের দায় অস্বীকার করেছেন। এ বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন টিপু বলেন, বিষয়টি শুনেছি। অভিযোগ প্রমাণিত হলে প্রত্যেকের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. নূরুল আজিম সিকদার বলেন, আমাদের কাছে কয়েকজন বিষয়টি জানিয়েছেন। তবে স্পেসিফিক কোনো অভিযুক্তের নাম জানাননি। এছাড়া কোনো ভুক্তভোগীও অভিযোগ দেননি। যদি অভিযোগ দেন আমরা ব্যবস্থা নেবো।