চাঁদা না পেয়ে এবার অধ্যক্ষের অপসারণ দাবি! 

চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে শিক্ষকদের লাঞ্ছনা ও অধ্যক্ষের কক্ষে তালা লাগিয়ে দেওয়া হয়।

চাঁদা না পেয়ে এবার অধ্যক্ষের অপসারণ দাবি! 

প্রথম নিউজ, ময়মনসিংহ: সম্প্রতি ময়মনসিংহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের তিনটি হলের কমিটি গঠন করে শাখা ছাত্রলীগ। নবগঠিত কমিটিকে বরণ করতে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজনের উদ্যোগ নেয় সংগঠনটি। ওই অনুষ্ঠানের খরচ বাবদ কলেজ অধ্যক্ষের কাছে ৮০ হাজার টাকা চেয়ে লিখিত আবেদন করেন কলেজ শাখা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক ও যুগ্ম আহ্বায়ক। তবে টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে শিক্ষকদের লাঞ্ছনা ও অধ্যক্ষের কক্ষে তালা লাগিয়ে দেওয়া হয়। গভীর রাতে সেই তালা খুলে দিলেও বৃহস্পতিবার (১০ আগস্ট) অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনে এবং তাকে সরকারবিরোধী ও ‘জামায়াত’ আখ্যা দিয়ে তার অপসারণ চেয়ে প্রশাসনিক ভবনে তালা দিয়ে বিক্ষোভ করেছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।

এদিন বেলা ১১টা থেকে বিকেল সোয়া ৩টা পর্যন্ত শিক্ষকদের অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। প্রশাসনিক ভবনের গেটে তালা লাগিয়ে ভেতরে ছাত্রলীগের কর্মীরা অধ্যক্ষের অপসারণ দাবি করে নানা স্লোগান দেন। ওই সময় ছাত্রলীগের আহ্বায়ক প্রসেনজিত বড়ুয়া ও যুগ্ম আহ্বায়ক তৌহিদুল ইসলাম আশরাফী আন্দোলনে উপস্থিত না থাকলেও কলেজের হলে অবস্থান করছিলেন বলে জানা গেছে। এ সময় অধ্যক্ষকে অপসারণ না করলে শিক্ষার্থীরা ক্লাসে ফিরবে না বলেও ঘোষণা দেওয়া হয়। অন্যদিকে চলমান পরিস্থিতিতে কলেজ প্রশাসনও বৃহস্পতিবার জরুরি সভা করে পুরোনো ছাত্রদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কলেজের হল ত্যাগের নির্দেশ দিয়েছে।

এদিকে বিকেল ৩টার দিকে কোতোয়ালি থানা পুলিশের ওসি সেখানে গিয়ে শিক্ষার্থীদের বুঝিয়ে আন্দোলন থেকে সরে যাওয়ার পরামর্শ দেন। কলেজ কর্তৃপক্ষ ও ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দ শুক্রবার (১১ আগস্ট) আওয়ামী লীগের জেলার দায়িত্বশীল নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় বসে বিষয়টি মীমাংসা করে নেবেন এমন আশ্বাসে বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে শিক্ষার্থীরা অবরুদ্ধ করে রাখার কর্মসূচি থেকে সরে আসে বলে জানান কোতোয়ালি থানা পুলিশের ওসি শাহ কামাল আকন্দ।

জানা গেছে, ময়মনসিংহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ শাখা ছাত্রলীগের কমিটিতে আহ্বায়ক হন ইইই বিভাগের ২০১৫-১৬ সেশনের শিক্ষার্থী প্রসেনজিত বড়ুয়া এবং যুগ্ম আহ্বায়ক হন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২০১৬-১৭ সেশনের শিক্ষার্থী তৌহিদুল ইসলাম আশরাফী। গত ৩১ জুলাই কলেজের অমর একুশে হল, মুক্তিযোদ্ধা হল ও মুক্তিযোদ্ধা তারামন বিবি হল ছাত্রলীগের কমিটি দিয়ে ছাত্রলীগকে সংগঠিত করা হয়। নবগঠিত ছাত্রলীগের কমিটিকে সংবর্ধনার জন্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে ৮০ হাজার টাকা চেয়ে লিখিত আবেদন করা হয় অধ্যক্ষের কাছে। কিন্তু টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালেই অধ্যক্ষের সঙ্গে বিরোধ তৈরি হয়।

অন্যদিকে বর্তমান অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে কলেজের শিক্ষকরা নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে অধ্যক্ষকে লিখিত আবেদন দিলে জরুরি সভা করা হয়। কলেজের শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের দ্বারা বারবার লাঞ্ছনার এমন ঘটনায় নিরাপত্তাহীনতায় ক্লাসে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তবে পরীক্ষা চালু রাখা হবে জানানো হয়। চলমান ইস্যুতে বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টায় কলেজের অধ্যক্ষের কক্ষে শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের নিয়ে এক জরুরি সভা শুরু হয়। বিকেল ৩টা পর্যন্ত সভা চলে। অধ্যক্ষের কার্যালয়ে সভা চললেও বেলা ১১টা থেকে নিচতলায় গেটে তালা দিয়ে অধ্যক্ষের অপসারণ দাবিতে বিক্ষোভ করে ছাত্রলীগের কর্মীরা।

জরুরি সভায় কলেজের সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা বিষয়ে আলোচনা শেষে সকল শিক্ষকের মতামতের প্রেক্ষিতে তিনটি সিদ্ধান্ত হয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষ এবং তার পূর্বের শিক্ষাবর্ষে ছাত্র-ছাত্রীদের আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হল ত্যাগ করতে হবে এবং হল কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তা নিতে পারবে। চতুর্থ বর্ষের দ্বিতীয় সেমিস্টারে যে সকল ছাত্র-ছাত্রী ফাইনাল পরীক্ষা দিচ্ছে পরীক্ষা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হল কর্তৃপক্ষ হলের সিট বরাদ্দ বাতিল করে নতুনদের বিধি মোতাবেক সিট বরাদ্দ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। রাত ১২টায় কলেজের মূল ফটক বন্ধ করা হবে। পরবর্তীতে কোনো ছাত্র প্রবেশ করতে চাইলে যথাযথ কারণ রেজিস্ট্রি খাতায় লিখে প্রবেশ করবে মর্মে সিদ্ধান্ত হয়। সভায় কলেজের ১৭ জন শিক্ষকের মধ্যে ১৬ জন উপস্থিত ছিলেন।

এদিন আন্দোলনে অংশ নেওয়া ছাত্রলীগের সদস্য সাদমান আবির বলেন, কলেজের দুর্নীতিবাজ অধ্যক্ষ জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে সম্পৃক্ত। তিনি শিক্ষার্থীদের যাবতীয় মৌলিক চাহিদা কখনো নিশ্চিত করতে পারেননি। এছাড়া তিনি দেশের জাতীয় দিবসগুলো পালনে অনীহা প্রকাশ করেছেন। ছাত্রলীগ ন্যায়ের সংগঠন, অধিকার আদায়ের সংগঠন। অধ্যক্ষ হুমকি দিয়েছে কলেজে ছাত্র-রাজনীতি বন্ধ করে দেবেন। এ নিয়েই ছাত্রলীগ ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা একত্রিত হয়েছে। তিনি আরও বলেন, শিক্ষার্থীদের মৌলিক চাহিদা একটি ক্যান্টিন। সাত মাস আগে আবেদন করলেও তা দিচ্ছে না। অধ্যক্ষের পদত্যাগ না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।  

কলেজের নিরাপত্তা কমিটির আহ্বায়ক সবুজ আহমেদ বলেন, ক্যান্টিন চালুর জন্য একটি কমিটি হয়েছে। তারা বিষয়টির সম্ভাব্যতা যাচাই করছেন। এরপর টেন্ডার প্রক্রিয়াসহ বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বাস্তবায়ন করতে হবে। কলেজ শাখা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক প্রসেনজিত বড়ুয়া বলেন, লিখিতভাবে কেউ চাঁদা চায় না। আমরা সহযোগিতা চেয়েছিলাম। সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবি-দাওয়ায় ছাত্রলীগ পাশে থাকে এবং সামনে থেকে নেতৃত্ব দেয়। সেখানে আমাদের নামে অপবাদ সাধারণ শিক্ষার্থীরা মেনে নিতে পারেনি। প্রত্যেক শিক্ষার্থী অধ্যক্ষের ওপর বিরক্ত। অধ্যক্ষের অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা ক্লাসে ফিরবে না।

ময়মনসিংহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের অধ্যক্ষ মো. আলমগীর হোসেন বলেন, শিক্ষার পরিবেশ ঠিক রাখতে জরুরি সভা করে কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আন্দোলনকারীদের সকল অভিযোগ মিথ্যা।