গাজীপুরে সাংবাদিকদের ওপর বিএনপির নেতাকর্মীদের হামলা

প্রথম নিউজ, গাজীপুর: গাজীপুরের কাপাসিয়ায় বিএনপির একাংশের নেতাকর্মীদের হামলায় যমুনা টিভির চিত্র সাংবাদিক এবং বিএনপির অন্য অংশের নেতাকর্মীসহ অন্তত ১২ জন আহত হয়েছেন। শনিবার দুপুর ২টার দিকে কাপাসিয়ার চাঁদপুর ইউনিয়নের চেরাগআলী মোড় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। গুরুতর আহত যমুনা টিভির চিত্র সাংবাদিক রকি হোসেনকে (২৬) শহিদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে অন্য আহতদের নাম জানা যায়নি।
জানা গেছে, কাপাসিয়া উপজেলা বিএনপির একাংশের নেতাকর্মীরা উপজেলার চাঁদপুর ইউনিয়নের চেরাগ আলী মোড় এলাকায় এক মতবিনিময় সভার আয়োজন করে। কাপাসিয়া উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি খলিলুর রহমানের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন, গাজীপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সাখাওয়াত হোসেন সেলিম।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দুপুর দেড়টার দিকে মতবিনিময় সভা শেষে কাপাসিয়া থেকে ২০ থেকে ২৫টি মোটরসাইকেল যোগে একটি দল গাজীপুর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক শাহ রিয়াজুল হান্নানের নামে স্লোগান দিতে দিতে ঘটনাস্থলে আসেন। তারা সেখানে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়।
এ সময় সেখানে থাকা চেয়ার, টেবিল, মাইক, সাউন্ড বক্স এবং প্যান্ডেল গুঁড়িয়ে দেয় তারা। একপর্যায়ে একটি কক্ষে বসে থাকা সাংবাদিকদের ওপরে চড়াও হয় এবং হামলা চালায়। এ সময় যমুনা টিভির চিত্র সাংবাদিক রকি হোসেন তার ক্যামেরা দিয়ে ছবি ধারণ করতে গেলে তাকে ধরে নিয়ে রাস্তায় ফেলে বেধড়ক মারধর করতে থাকে বিএনপির নেতাকর্মীরা। এ সময় হামলাকারীরা যমুনা টিভির ক্যামেরা, মাইক্রোফোন, আইডি কার্ড, লাইভ ডিভাইস, ল্যাপটপ নিয়ে গেছে। পরে অন্য সাংবাদিকরা রকিকে উদ্ধার করে গাজীপুর শহিদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক।
সিসিটিভি ফুটেজ ও ধারণকৃত ভিডিও চিত্রে দেখা গেছে, চেরেগালী মোড়ের দিক থেকে ২৫ থেকে ৩০টি মোটরসাইকেলে অন্তত ৬০ থেকে ৭০ জন নেতাকর্মী এসে অনুষ্ঠানস্থলের চেয়ার টেবিল ভাঙচুর শুরু করেন। এ সময় অনুষ্ঠানস্থলের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা যমুনা টিভির চিত্র সাংবাদিক রকি হোসেনকে কয়েকজন দৌঁড়ে এসে মারধর শুরু করেন। পরে তাকে টেনে-হিঁছড়ে মারতে মারতে একশ গজ দূরে রাস্তার অন্যপ্রান্তে নিয়ে যান। তাকে উদ্ধারের জন্য কয়েকজন সাংবাদিক এগিয়ে গেলে তাদেরকেও লাঞ্চিত করা হয়। এ সময় তারা শাহ রিয়াজুল হান্নানের নাম ধরে স্লোগান দিয়ে ভাঙচুর করেন।
এ ব্যাপারে গাজীপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য শাখাওয়াত হোসেন সেলিম জানান, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে বিএনপির একটি মতবিনিময় সভা করছিলাম। সভা শেষ হয়ে যাওয়ার আধাঘণ্টা পর কাপাসিয়া থেকে ২০ থেকে ২৫ টি মোটরসাইকেল যোগে একদল নেতাকর্মী ওই অনুষ্ঠানস্থলে এসে অতর্কিতভাবে হামলা চালায়। তারা প্যান্ডেল, মাইক ও আসবাবপত্র ব্যাপক ভাঙচুর করে। একপর্যায়ে তারা সাংবাদিকদের ওপর চড়াও হয়ে যমুনা টিভির চিত্র সাংবাদিককে বেধড়ক মারধর করে আহত করে। তিনি এ ঘটনায় দোষীদের শাস্তি ও বিচার দাবি জানান। এ ব্যাপারে গাজীপুর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক শাহ রিয়াজুল হান্নান বলেন, কারা হামলা করেছে বিষয়টি আমার জানা নেই। যারা ওই সভার আয়োজন করেছিলেন এ ঘটনার জন্য তাদেরকে দায়-দায়িত্ব নিতে হবে।
এদিকে সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় গাজীপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান টিটু, সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক রিপন, কাপাসিয়া প্রেসক্লাবের সাংবাদিকবৃন্দসহ গাজীপুরে কর্মরত সাংবাদিক নেতারা তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। অবিলম্বে হামলাকারীদের গ্রেফতার এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন তারা।