কাল থেকে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব

এবারো দুই পর্বের ইজতেমা হচ্ছে। প্রথম পর্ব সমাপ্তির পর ৫ দিন বিরতি দিয়ে দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমা আগামী ২০শে জানুয়ারি শুরু হবে।

কাল থেকে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব
কাল থেকে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব

প্রথম নিউজ, অনলাইন: টঙ্গীর তুরাগ নদের তীরে শুক্রবার থেকে শুরু হচ্ছে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব। এবারো দুই পর্বের ইজতেমা হচ্ছে। প্রথম পর্ব সমাপ্তির পর ৫ দিন বিরতি দিয়ে দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমা আগামী ২০শে জানুয়ারি শুরু হবে। প্রথম পর্বে ১৩ ও ১৫ই জানুয়ারি তাবলীগ জামাতের বাংলাদেশের শীর্ষ মুরুব্বি ও কাকরাইল জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা জোবায়ের আহমেদের অনুসারী মুসল্লিরা অংশ নিবেন। ১৫ই জানুয়ারি রোববার দুপুরে আখেরি মোনাজাতে অংশ নিয়ে প্রথমপর্বে আগত মুসল্লিরা রাতের মধ্যে ময়দান ত্যাগ করবেন। পরে মাওলানা সা’দ আহমাদ কান্ধলভীপন্থি মাওলানা অনুসারী মুসল্লিরা আগামী ২০শে জানুয়ারি শুক্রবার বাদ ফজর থেকে দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমায় অংশ নিবেন। ২২শে জানুয়ারি মধ্যাহ্নের পূর্বে যেকোনো এক সময় আখেরি মোনাজাতের মধ্যদিয়ে শেষ হবে দ্বিতীয় পর্বের বিশ্ব ইজতেমা। প্রতি পর্ব ইজতেমা কার্যক্রম শেষে জিম্মাদারগণ ময়দানের দায়িত্ব প্রশাসনের কাছে বুঝিয়ে দিয়ে যাবেন।  

গতকাল ইজতেমা ময়দান সরজমিন দেখা যায়, ইজতেমাকে সামনে রেখে স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসার ছাত্রসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ স্বেচ্ছাশ্রমে ময়দানে কাজ করেছেন। প্যান্ডেল তৈরির কাজ, রাস্তা মেরামত, মাইক টানানো, টয়লেট পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, ময়দানের আগাছা পরিষ্কারের কাজ করছেন আগত মুসল্লিরা। ইতিমধ্যে প্রায় ৯০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে বলে বিশ্ব ইজতেমা আয়োজক কমিটি সূত্রে জানা গেছে। ইজতেমার মুরুব্বিরা জানান, এই কাজ চলমান। কাপাশিয়ার চাঁদপুর ইউনিয়নের আনোয়ার হোসেন (৬০) তিনি ৬০ জনের তাবলীগ সাথী ভাই নিয়ে এসেছেন ইজতেমা ময়দানে কাজ করতে। বলেন, আল্লাহর মেহমানরা ইবাদত বন্দেগি করতে আসবেন। তারা যেন সুন্দরভাবে ইবাদত বন্দেগি করতে পারেন সেদিকে খেয়াল রেখে ময়দানের কাজ করে যাচ্ছি। কোনাবাড়ি এলাকার মুসল্লি মো. দেলোয়ার হোসেন (৫৮) জানান, বিদেশি মেহমানদের কামরা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করছি। যাতে বিদেশি মেহমানরা ইজতেমা ময়দানে এসে কোনো প্রকার কষ্ট না পান। 

বিশ্ব ইজতেমা ময়দানের পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন কমিটির জিম্মাদার ফকির আতাউর রহমান জানান, শুক্রবার থেকে ইজতেমা শুরু হলেও মঙ্গলবার থেকেই মুসল্লিরা মাঠে আসতে শুরু করেছেন। বৃহস্পতিবার বাদ ফজর থেকেই আগত মুসল্লিদের উদ্দেশ্যে আ’ম শুরু হবে।  এব্যাপারে বিশ্ব ইজতেমা ময়দানের শীর্ষ মুরুব্বি ও শূরা সদস্য মাওলানা মেজবাহ উদ্দিন বলেন, ময়দানের প্রস্তুতিকাজ শেষ করতে হাতে সময় খুবই কম ছিল। ১৩ই জানুয়ারির মধ্যে ময়দানের প্রস্তুতির কাজ সম্পন্ন করতে সক্ষম হয়েছি। আমার সঙ্গে মাওলানা মাহফুজুল ইসলাম, মাওলানা হাসনাত ও আবুল হাশেম রয়েছেন। আমরা সহ অন্যান্য শূরা সদস্যরা মাসোহারা করে ময়দানের প্রস্তুতিকাজ করছি। প্রস্তুতির কাজ ইতিমধ্যে ১৩ তারিখের আগেই শেষ হয়েছে ইনশাআল্লাহ।  

উল্লেখ্য, ময়দানে স্থান সংকুলান না হওয়ায় বিশ্ব ইজতেমা তিন দিন করে দুই পর্বে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। তবে ইজতেমা মুরুব্বিদের মতবিরোধের কারণে মাঝখানে ৫ দিন বিরতি দিয়ে দুই পর্বের বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হবে।
 

মুসল্লিরা নির্ভয়ে বিশ্ব ইজতেমায় অংশ নিতে পারেন: আইজিপি

স্টাফ রিপোর্টার, টঙ্গী থেকে: আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেছেন, টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমায় বিদেশি মুসল্লিরা যারা আসেন তাদের এয়ারপোর্টে আয়োজকরা রিসিভ করে থাকেন। বিদেশি মুসল্লিরা যাতে স্বাচ্ছন্দে আসতে পারেন সেজন্য ইমিগ্রেশন থেকে বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হয়ে থাকে। ইমিগ্রেশনে যেন কোনো জটিলতার সম্মুখীন হতে না হয়, ট্রাফিক ব্যবস্থা যাতে সুগম হয় সেজন্য আমরা ব্যবস্থা রেখেছি। তাদের সহায়তার জন্য বিশেষ প্রশিক্ষিত ট্যুরিস্ট পুলিশ নিয়োজিত থাকবে। গতকাল টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমা মাঠ পরিদর্শনে এসে তিনি এসব কথা বলেন।
আইজিপি বলেন, সাধারণ মানুষের ইজতেমা মাঠে প্রবশের সুবিধার্থে আমরা ম্যাপ তৈরি করে দিয়েছি। বিভিন্ন পয়েন্টেও তাদের জন্য বিভিন্ন প্রবেশ পথে নির্দেশনা টাঙিয়ে দিয়েছি। এ ছাড়াও বিভিন্ন পরিকল্পনা করে কোন বিভাগের গাড়ি কোথায় পার্কিং করা থাকবে, কোন রাস্তা কখন খোলা বা বন্ধ খাকবে সেই নির্দেশনা দিয়েছি। পকেটমারসহ নানা অপরাধমূলক কার্যকলাপ রুখতে আমাদের পেট্রোল টিম কাজ করবে। ওয়াচ টাওয়ার ও সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করবো। সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়োজিত থাকবে। গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুুলিশ বিভাগ ১৪টি কন্ট্রোলরুম তৈরি করেছে।  কন্ট্রোল রুম থাকবে, ডিএমপি তার এলাকায় কন্ট্রোল রুম খুলবে, এসবি, এটিও, সিআইডি, নৌপুলিশ, অবজারভারভেশন টিম থাকবে, হেলিকপ্টার টহল থাকবে। ডগ স্কোয়াড টিম, মোবাইল পেট্রোল টিম, বোম ডিস্পোজাল টিম থাকবে। মোনাজাতের দিন সুষ্ঠুভাবে আখেরি মোনাজাত ও জুমার নামাজ যাতে মুসল্লিরা সুষ্ঠুভাবে অংশ নিতে পারে সেজন্য সকল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দায়িত্ব পালন করবে। আমরা সাধারণ মানুষকে আশ্বস্ত করতে চাই আপনারা নির্ভয়ে ইজতেমায় অংশ নিতে পারেন।

ইজতেমাস্থলে যে ৯১টি খিত্তায় বিভক্ত, খিত্তাভিক্তিক আমাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ, র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ানের পাশাপাশি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ, স্পেশাল ব্রাঞ্চ, সিআইডি, নৌপুলিশ, অ্যান্টিট্যারিজম ইউনিট, রেলওয়ে পুলিশ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দায়িত্ব পালন করছে। এর সঙ্গে সরকারের অন্যান্য বিভাগও সমন্বিতভাবে কাজ করছে। আমরা একইসঙ্গে সবাই মিলে একযোগে কাজ করছি, যাতে মুসল্লিরা শান্তিপূর্ণভাবে এই আয়োজনে শরিক হতে পারেন। এর জন্যই আমরা সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করছি। ইতিপূর্বে আমরা যেভাবে সফল হয়েছি, এর ধারাবাহিকতায় এবারো আমরা এই আয়োজন সফল করবো। ইতিধ্যেই আমাদের ফোর্স আসা শুরু হয়েছে, আগামীকাল থেকে পুরোপুরি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাজ শুরু হবে।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক স্পেশাল ব্রাঞ্চের প্রধান মনিরুল ইসলাম, অতিরিক্ত আইজিপি ট্যুরিস্ট পুলিশের প্রধান হাবিবুর রহমান, গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার নজরুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার দেলোয়ার হোসেন ও গাজীপুর পুলিশ সুপার কাজী শফিকুল আলমসহ জিএমপি’র অন্যান্য পুলিশ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel: