কাদাপানিতে একাকার বাস টার্মিনাল, যাত্রীদের দুর্ভোগ

প্রতিদিন দূরপাল্লা ও জেলার অভ্যন্তরীণ রুটে এ টার্মিনাল থেকে প্রায় ৭০টি বাসে ৩-৪ হাজার যাত্রী যাতায়াত করছেন। অথচ বৃষ্টি হলেই টার্মিনালের ভেতরে ও আশপাশের জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।

কাদাপানিতে একাকার বাস টার্মিনাল, যাত্রীদের দুর্ভোগ

প্রথম নিউজ, ঈশ্বরদী: পাবনার ঈশ্বরদীর খায়রুজ্জামান বাবু বাস টার্মিনালের সংস্কার কাজ না করায় অসংখ্য খানাখন্দ তৈরি হয়েছে। কাদা-পানিতে একাকার পুরো টার্মিনাল এলাকা। ফলে বাসচালক ও যাত্রীদের দুর্ভোগের শেষ নেই। প্রতিদিন দূরপাল্লা ও জেলার অভ্যন্তরীণ রুটে এ টার্মিনাল থেকে প্রায় ৭০টি বাসে ৩-৪ হাজার যাত্রী যাতায়াত করছেন। অথচ বৃষ্টি হলেই টার্মিনালের ভেতরে ও আশপাশের জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।

বাস টার্মিনাল ঘুরে দেখা যায়, টার্মিনালের ভেতরে অসংখ্য খানাখন্দ। বৃষ্টির পানিতে খানাখন্দ ভরে গেছে। ঢাকাসহ দূরপাল্লার বাসগুলো কাউন্টারের সামনে কাদাপানির মধ্যে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে। যাত্রীরা কাদাপানি মাড়িয়ে বাসে ওঠানামা করছেন। এতে তাদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

টার্মিনাল ভবনের অবস্থা অত্যন্ত করুণ। ছাদ ড্যামেজ, দেওয়ালে ফাটল, ছাদের পলেস্তারা খসে রড বেরিয়ে গেছে। শৌচাগার ব্যবহারের অযোগ্য। দেওয়াল ও ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ায় দীর্ঘদিন ধরে একমাত্র ক্যান্টিনও বন্ধ। টার্মিনাল ভবনের ভেতরে যাত্রীদের বসে থাকার পাকা বেঞ্চ থাকলেও আশপাশে ময়লা ও দুর্গন্ধে যাত্রীরা সেখানে আসেন না। কিছু ভিক্ষুক ও মানসিক প্রতিবন্ধী এখানে দিনরাত অবস্থান করছেন।

পৌর কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ রেলওয়ের কাছ থেকে দুই একর জমি লিজ নিয়ে পৌর শহরের রেলগেট এলাকায় ১৯৯৫ সালের ১৯ জুলাই এক কোটি ১ লাখ টাকা ব্যয়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) বাস টার্মিনালটি নির্মাণ করে। পরে তারা এটি পৌরসভার কাছে হস্তান্তর করেন। পৌর কর্তৃপক্ষ প্রয়াত চেয়ারম্যান খারুজ্জামান বাবুর নামে এটির নামকরণ করা হয় ‘খায়রুজ্জামান বাবু বাস টার্মিনাল’।

বাসযাত্রী জাকির হোসেন বকুল বলেন, ‘ঈশ্বরদী বাস টার্মিনালের অবস্থা অত্যন্ত করুন। প্রথম শ্রেণির পৌরসভার বাস টার্মিনাল কাদাপানিতে একাকার, এটি মেনে নেয়া যায় না। এখানে চলাচল করা খুবই কষ্টকর।’ সুপার সনি বাসের চালক সাইফুল ইসলাম  বলেন, টার্মিনালের খানাখন্দে বাসের চাকা পড়ে অনেক সময় কাদায় আটকায় যায়। তখন আমাদের অনেক কষ্ট হয়। খানাখন্দ ভরাট করার জন্য আমরা বহুবার পৌর কর্তৃপক্ষকে বলেছি। কিন্তু তারা এতে কোনো কর্ণপাত করেন না।

পাবনা জেলা বাস ও মিনিবাস মালিক সমিতির চেইন মাস্টার আলমগীর হোসেন বলেন, ১৯৯৫ সালে বাস টার্মিনাল উদ্বোধনের পর আর কোনো সংস্কার কাজ হয়নি। ফলে টার্মিনালের অনেক জায়গায় ইটের হেরিং উঠে গর্ত হয়ে গেছে। এটি দ্রুত সংস্কার করা প্রয়োজন। টার্মিনালের কাউন্টার মাস্টার রেজাউল হক মুকুল বলেন, টার্মিনালে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা নেই। তাই সামান্য বৃষ্টিতে কাদাপানিতে একাকার হয়ে যায়। এখানে যাত্রীরা চলাচল করতে পারেন না।

পাবনা জেলা মোটর মালিক সমিতি ঈশ্বরদী শাখার সিনিয়র সহ-সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, টার্মিনালটি সংস্কার করা প্রয়োজন। এখানে যাতায়াতকারী যাত্রী, মোটর শ্রমিক ও দোকানদার সবাইকে খুব দুর্ভোগ পোহাতে হয়। বৃষ্টির দিনে কাদাপানি আর শুষ্ক মৌসুমে ধুলাবালিতে এখানে বসার উপায় থাকে না।

এ বিষয়ে ঈশ্বরদী পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী প্রবীর কুমার বিশ্বাস জানান, ২০০৭-০৮ সালে টার্মিনাল ভবনের ছাদ ড্যামেজ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হলে ছাদে প্যাটেন্ট স্টোন ঢালাই দেওয়া হয়। সেসময় যাত্রীদের বসার জন্য বেশ কয়েকটি পাকা বেঞ্চ নির্মাণ করা হয়। অর্থ বরাদ্দ না থাকায় পরবর্তীতে আর কোনো সংস্কার কাজ করা সম্ভব হয়নি।

জানতে চাইলে ঈশ্বরদী পৌরসভার মেয়র ইছাহক আলী মালিথা বলেন, বাস টার্মিনাল উন্নয়নে পৌরসভার বাজেট না থাকায় এটি সংস্কার করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যেসব জায়গায় খানাখন্দ হয়েছে সেগুলো দ্রুত মেরামত করে চলাচলের উপযোগী করা হবে।