আমি যেমন সেভাবে যদি কথা না বলি, মেকি মনে হবেই: ফারুকী

আমি যেমন সেভাবে যদি কথা না বলি, মেকি মনে হবেই: ফারুকী

প্রথম নিউজ, বিনোদন ডেস্ক: ছবিয়ালের ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে গতকাল শনিবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। যেখানে ঢালিউড নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী তো ছিলেনই, আরও ছিলেন ভাই-বেরাদেররা; অর্থাৎ তার সহকারী পরিচালকরা। সেই সব সহকারী পরিচালকের সহকারী পরিচালকেরাও। এভাবে পরম্পরাকে সম্মান জানিয়ে এবং পরিবারের মানুষদের সঙ্গে নিয়ে সবাই মিলে আনন্দে কাটিয়েছেন সন্ধ্যাটি।

ছবিয়ালের ২৫ বছর পূর্তিতে দর্শকদের উদ্দেশে ফারুকী বলেন, ‘২৫ বছর দর্শকদের সঙ্গে কথা বলতে বলতে বড় হওয়া। আমি তো মনে করি— আমার সিনেমাগুলো সময়ের সঙ্গে যেমন কথা বলে, তেমন দর্শকের সঙ্গেও কথা বলে এবং এই কথা বলার মধ্য দিয়েই আমরা বড় হচ্ছি— বুড়ো হচ্ছি। দর্শকরা আমাদের না ভালোবাসলে প্রথম সিনেমার পরই ছিটকে যেতাম। তারা যেভাবে আমাদের পথটাকে সমর্থন করেছেন, সে জন্য তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা।

‘ছবিয়াল’ নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর মালিকানাধীন একটি প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠানের ব্যানারেই তিনি নির্মাণ করে আসছেন বিজ্ঞাপন, নাটক ও সিনেমা। ১৯৯৮ সালে ছবিয়াল থেকে ফারুকীর প্রথম নির্মাণ হয় ‘ওয়েটিং রুম’। সেই সময় কোনো টিভি চ্যানেল কিনতে চায়নি ফিকশনটি। ২৫ বছরে এসে চিত্র সম্পূর্ণ বদলে গেছে। 

মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর নামের আগে যুক্ত হয়েছে বিশেষণ। তিনি এখন অন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন চলচ্চিত্রকার। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো সে স্বীকৃতি দিয়েছে তাকে। সহজ ছিল না এ পথ— এখনো নেই।

ছবিয়াল থেকে ফারুকীর সাম্প্রতিক নির্মাণ ‘সামথিং লাইক অ্যান অটোবায়োগ্রাফি’ সিনেমাটি দেখলে তার কিছুটা আঁচ পাওয়া যায়। ফারুকী বলেন, ‘ছবিয়াল থেকে আমরা এমন সব সিনেমাই করতে চেয়েছি, যার মধ্যে বাংলাদেশের নিঃশ্বাস আছে।’ নিজস্বতা তৈরি করার এই চেষ্টাই অনন্য করে তুলেছে ছবিয়াল ও ফারুকীকে। এ যাত্রায় ছবিয়াল ও ফারুকীকে অনেকেই সাহায্য করেছেন। যাদের মধ্যে চ্যানেল আইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর ও চ্যানেল ওয়ানের কর্ণধার গিয়াস উদ্দিন আল মামুন অন্যতম। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।

এদিকে ‘ডুব’, ইংরেজিতে ‘নো বেড অব রোজেস’ সিনেমাটি যেবার বাংলাদেশ থেকে অস্কার প্রতিযোগিতায় গিয়েছিল, সেই বছর অর্থাৎ ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ম্যাগাজিন ভ্যারাইটির রিভিউয়ার ম্যাগি লি এমন এক বাক্য লেখেন, যা বাংলাদেশের জন্য গর্বের। সিনেমাটিতে সুখ, একাকিত্ব ও মনস্তত্ত্বের প্রসঙ্গ টেনে তিনি মোস্তফা সরয়ার ফারুকীকে নিয়ে বলেন, ‘ফারুকী প্রমাণ করেছেন, তিনি বাংলাদেশি চলচ্চিত্রের অনন্য কণ্ঠস্বর।’

যিনি কবিতা লেখেন, তাকে যদি কবিয়াল বলা যায়, তাহলে যিনি ছবি বানান, তাকে ‘ছবিয়াল’ কেন বলা হবে না? এটিই বোধহয় ‘ছবিয়াল’ নামকরণের কারণ ছিল। ব্যাখ্যায় মোস্তফা সরয়ার ফারুকী ‘বোধহয়’ শব্দটি ব্যবহার করলেন। কেন করলেন, তার উত্তর জানতে চাওয়া হয়নি। তবে আন্দাজ করা যায়, অনেক আগের কথা বলেই হয়তো এভাবে বললেন। তাহলে এখন জানতে চাওয়া, কত আগের? ২৫ বছর।

২৫ বছর বলতেই যেন হুড়মুড় করে স্মৃতির মুখবন্দি বাক্স এসে পড়তে লাগল ফারুকীর সামনে। তার হয়তো ইচ্ছা করছিল, সব কটির মুখ খুলে দিতে; কিন্তু তা সম্ভব নয়। তিলে তিলে গড়ে ওঠা ছবিয়াল, ভুল করে শিখতে শিখতে এগিয়ে যাওয়া ফারুকীর ২৫ বছরের গল্পসম্ভার এভাবে কিছু সময়ে শোনা বা বলা যায় না।

ছবিয়ালের ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে ফরিদুর রেজা সাগর বলেন, 'ব্যাচেলর' সিনেমা নির্মাণের সময় ফারুকীর সঙ্গে আমার পরিচয়। সেই ফারুকী এখন কোন পর্যায়ে আছেন, তা দর্শকরা ভালো করেই জানেন। ফারুকী শুধু চলচ্চিত্র নির্মাতাই নন, সমাজের সবকিছু নিয়ে তার রয়েছে বিচার-বিশ্লেষণ। তাই ফারুকীর সিনেমায় আমরা আপনাকে-আমাকে দেখতে পাই।’

ছবিয়ালের শুরুর দিকে চ্যানেল ওয়ান থেকে সিরিজ চাওয়া হয়েছিল ছবিয়ালের কাছে, তথা ফারুকীর কাছে। সিরিজ না করে ‘ছবিয়াল উৎসব’ করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন ফারুকী। সেই সময়ের কথা উল্লেখ করে গিয়াস উদ্দিন আল মামুন বলেন, ‘আমাদের বিশ্বাস ছিল— আমাদের দেশের তরুণরা অনেক সুন্দর এবং নতুন কিছু করতে পারেন। যার জন্য চ্যালেঞ্জটা আমরা নিই এবং সফল হই।

এর পাশাপাশি ছবিয়াল আরও একটি দৃষ্টান্ত রেখে গেছে দেশের বিনোদন অঙ্গনে। সেটি হলো— ফারুকীর পাশাপাশি তরুণ নির্মাতা তৈরি করা। যারা একসময় সহকারী পরিচালক হিসেবে ছিলেন ছবিয়ালে, তারাই এখন নিজেদের নামে খ্যাতি অর্জন করেছেন। অনেকেই তাদের গুচ্ছ আকারে ‘ভাই-বেরাদার’ নামে চেনেন। যাদের মধ্যে অন্যতম রেদওয়ান রনি, আশুতোষ সুজন, শরাফ আহমেদ জীবন, আশফাক নিপুণ, ইফতেখার আহমেদ ফাহমী, মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ ও আদনান আল রাজীব।

স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে ‘ভাই-বেরাদার’ আশফাক নিপুণ বলেন, ‘আমার নির্মাণে সব সময় লেখা থাকে 'বানিয়েছেন আশফাক নিপুন'। আর সেই আশফাক নিপুণকে বানিয়েছে ছবিয়াল— মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। আজ যা একটু করতে পারি, তা ওই দুটি নামের জন্য।’

আরেক ‘ভাই-বেরাদার’ ওটিটি প্ল্যাটফর্ম চরকির প্রধান নির্বাহী রেদওয়ার রনি বলেন, ‘ছবিয়াল আমার এবং আমার মতো অনেকের আঁতুড়ঘর। ছবিয়াল নিয়ে অল্প কথায় বলা যায় না। কারণ এটা খুব ইমোশনাল জায়গা, ইমোশনাল জার্নি। ছবিয়াল কোনো প্রতিষ্ঠান না— এটি একটি আঁতুড়ঘর, আশ্রম।’

২৫ বছরের পথচলায় অনেক সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে ফারুকী ও ছবিয়ালকে। যার মধ্যে অন্যতম ভাষার ব্যবহার। নাটকে কথ্য ভাষার ব্যবহার করে সমালোচনার মুখে পড়েন মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘একসময় বুঝলাম— অভিনয় মেকি লাগার অন্যতম কারণ ভাষা। আমি যেমন, সেভাবে যদি কথা না বলি, তাহলে সেটা মেকি মনে হবেই। তাই আমি চরিত্রের ধরন অনুযায়ী ভাষার ব্যবহার করেছি। দর্শক সেটি গ্রহণ করেছে।’

ছবিয়ালের উল্লেখযোগ্য ফিকশন ও ধারাবাহিক নাটকের মধ্যে রয়েছ— ‘আয়শা মঙ্গল’, ‘প্রত্যাবর্তন’, ‘কানামাছি, ‘চড়ুইভাতি, ‘৬৯’, ‘৫১বর্তী, ‘৪২০’। সিনেমার মধ্যে রয়েছে ‘ব্যাচেলর’, ‘টেলিভিশন’, ‘মেড ইন বাংলাদেশ’, ‘থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার’, ‘ডুব’, পিঁপড়াবিদ্যা’ ইত্যাদি।