আমদানির ঘোষণাতেও কমছেনা পিয়াজের তেজ

মাত্র দুই সপ্তাহের ব্যবধানে রাজধানীর বাজারগুলোতে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা কেজি দরের পিয়াজ বাড়তে বাড়তে ৮০ থেকে ৯০ টাকায় উঠেছে।

আমদানির ঘোষণাতেও কমছেনা পিয়াজের তেজ

প্রথম নিউজ, অনলাইন: মাত্র দুই সপ্তাহের ব্যবধানে রাজধানীর বাজারগুলোতে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা কেজি দরের পিয়াজ বাড়তে বাড়তে ৮০ থেকে ৯০ টাকায় উঠেছে। এ অবস্থায় বিদেশ থেকে পিয়াজ আমদানির উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে সরকার। এ লক্ষ্যে রোববার পিয়াজ আমদানির অনুমতি চেয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এমন খবরে পাইকারিতে সামান্য দাম কমলেও খুচরা বাজারে এর কোনো প্রভাব লক্ষ করা যায়নি। পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি পিয়াজের দাম ৫ টাকা কমে ৫৬ থেকে ৬২ টাকা এবং খুচরা বাজারে আগের দামেই ৭৫ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন বিক্রেতারা। বাজার মনিটরিং না থাকায় পিয়াজ নিয়ে বর্তমান অস্থিরতা তৈরি হয়েছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। 

ঢাকার রামপুরার বাসিন্দা গৃহিণী লাকী আক্তার বলেন, অবস্থা তো খারাপ, ২৫ টাকায় কিনতাম, সেটা ৩০ থেকে ৩৫, ৪০, ৫০ টাকা বাড়তে বাড়তে এখন ৭০-এও পাওয়া যাচ্ছে না। ৮০ টাকা লাগতেছে। সবকিছুর দাম অবিশ্বাস্যভাবে বেড়েছে। 

তবে পিয়াজের দাম বাড়ার এই সুফল বেশির ভাগ কৃষক বা উৎপাদনকারীরা পাচ্ছেন না বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। কারণ ইতিমধ্যে কৃষকদের কাছ থেকে কমদামে পিয়াজ কিনে নিয়েছে পাইকার, আড়তদার ও মোকাম মালিকরা। ফলে কৃষকের কাছে এখন আর বেশি পিয়াজ নেই। জানা গেছে, সাধারণত ফলন ভালো হলেও কৃষকরাও তাদের হাতে পিয়াজ মজুত রাখেন না। কারণ স্বল্প পুঁজির কৃষক সংসার চালাতে মাঠ থেকে পিয়াজ তুলেই সঙ্গে সঙ্গেই বিক্রি করে দেন। ওই সময় দামও খুব একটা পান না। ফলে অল্প দামে ফসল বিক্রি করে দেন তারা। ফলে সব পিয়াজ সিন্ডিকেট তথা মধ্যস্বত্বভোগী ব্যবসায়ী বা আড়তদারদের কাছে। তারাই মজুদ করে রাখছে বলে মনে করেন অনেকে।

এই সিন্ডিকেটের কথা স্বীকার করেন কৃষিমন্ত্রীও। বলেন, আমরা চেষ্টা করছি সিন্ডিকেটকে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আনা যায় কিনা। না হলে ভারতে দাম কম, সেখান থেকে আমদানি করে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আনতে হবে। পিয়াজের দাম হবে সর্বোচ্চ ৪৫ টাকা। পিয়াজের যথেষ্ট মজুত থাকার পরও এত দাম বৃদ্ধি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। বর্তমান দাম অস্বাভাবিক। ৮০ টাকা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য না। 
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে কৃষি মন্ত্রণালয়ে দেয়া চিঠিতে বলা হয়, টিসিবি’র তথ্যানুযায়ী প্রতি কেজি পিয়াজের মূল্য এক মাস আগে ৩০ টাকা ছিল যা গত সপ্তাহে ৫০ টাকা করে বিক্রি হয়েছে এবং বর্তমানে ৭০-৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। পিয়াজের সরবরাহ বৃদ্ধি করে মূল্য স্থিতিশীল করার উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন।

এ বিষয়ে কনজ্যুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-এর (ক্যাব) সহ-সভাপতি নাজের হোসেন বলেন, এই যে সিন্ডিকেট যাদের বলা হচ্ছে সেই মধ্যস্বত্ব¡ভোগী ব্যবসায়ীদের সরকার নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না কেন? তার মতে, নিয়ন্ত্রণ করার ইচ্ছা থাকলে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। বাজার নিয়ন্ত্রণ করার জন্য যে ধরনের উদ্যোগ দরকার সেগুলো দেখা যায়নি। ভারত থেকে আমদানি হলে ক্রাইসিস কমে যাবে। কারণ স্টক আছে, কিন্তু কৃত্রিম ভাবে নিয়ন্ত্রণ করে ব্যবসায়ীরা পিয়াজের দাম বাড়াচ্ছে ইচ্ছামতো। 

প্রসঙ্গত, কৃষকদের স্বার্থের কথা বিবেচনা করে সরকার গত ১৫ই মার্চ ভারত থেকে পিয়াজ আমদানির অনুমতিপত্র বন্ধ করে দেয়। এরপর গত মাস পর্যন্ত দাম নিয়ন্ত্রণে থাকলেও এ মাসে লাফিয়ে বেড়েছে পিয়াজের দাম। এখন চাহিদার পুরোটা মেটানো হচ্ছে দেশি পিয়াজে। তবে আমদানির খবরে পাইকারিতে গত দুইদিন ধরে পিয়াজের বাজার কমতির দিকে।  রাজধানীর পাইকারি ও খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মানভেদে পাইকারিতে এক কেজি পিয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫৬ থেকে ৬২ টাকায়। অথচ দুইদিন আগেও বিক্রি হয়েছিল ৬০ থেকে ৬৫ টাকা দরে। আর গত ঈদের আগে এ পিয়াজ বিক্রি হয়েছিল ২২ থেকে ৩০ টাকা কেজি দরে। 

পাইকারি বাজারগুলোতে দেশি পিয়াজের দাম কমলেও তার কোনো প্রভাব পড়েনি খুচরা বাজারে। খুচরা বাজারে প্রতি কেজি দেশি পিয়াজ আগের দামেই ৭৫ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে, যা ১৫ দিন আগেও ছিল ৬০ থেকে ৬৫ টাকা। আর ঈদের আগে খুচরায় প্রতি কেজি পিয়াজ কেনা যেত ৪০ থেকে ৪৫ টাকায়।

সূত্র জানায়, বিশ্ববাজারে পিয়াজের দাম স্বাভাবিক থাকলেও দেশের বাজারে উল্টো চিত্র। বাজারে পিয়াজের কেজি শতক ছুঁই ছুঁই। এমন পরিস্থিতিতে দ্রুত পিয়াজ আমদানির কথা বলেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। কমোডিটি অনলাইনের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ভারতের কলকাতায় প্রতি কেজি পিয়াজ ১৯ টাকা এবং দিল্লিতে ৩২ টাকা, পাকিস্তানে প্রতি কেজি পিয়াজ বিক্রি হয়েছে ৩২ টাকায়। মিয়ানমারে প্রতি কেজি পিয়াজ বিক্রি হয়েছে ১১১ টাকায়। চীনে প্রতি কেজি পিয়াজ ৬৩ টাকা এবং বাংলাদেশে ৮০ থেকে ৯০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। খবর: কালের কণ্ঠ। 

শ্যামবাজারের পাইকারি পিয়াজ ব্যবসায়ী নারায়ণ সাহা জানান, পাইকারিতে দেশি পিয়াজ মানভেদে ৬৫ থেকে ৬৮ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার ছিল ৬৩ থেকে ৬৫ টাকা। এক সপ্তাহ আগে বিক্রি হয়েছিল ৫৫ থেকে ৫৬ টাকায়। তিনি আরও বলেন, সরকার দ্রুত পিয়াজ আমদানির অনুমোদন দিলে কেজিতে ২৫-৩০ টাকা কমে যাবে। 

বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের তথ্যানুসারে বছরে দেশে পিয়াজের চাহিদা রয়েছে প্রায় ২৫ লাখ টন। স্থানীয় পর্যায়ে উৎপাদিত হয়েছে ২৯ লাখ ৫৫ হাজার টন। আমদানি করা হয় ৬ থেকে ৭ লাখ টন। সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণের সময় নষ্ট হয় ২৫ শতাংশ পিয়াজ। আর বর্তমানে মজুত আছে ১৮ লাখ ৩০ হাজার টন।