ধরপাকড় বাড়ার আশঙ্কা বাড়ছে
যদিও দলটির নেতারা বলছেন, সামনের দিনে মামলা- গ্রেপ্তারের কৌশল আর কাজে আসবে না। এবার এসব মোকাবিলা করেই দাবি আদায়ের আন্দোলন জোরদার করা হবে।
প্রথম নিউজ, অনলাইন: সরকারবিরোধী আন্দোলন জোরদার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ধরপাকড় বাড়ার আশঙ্কাও বাড়ছে। বিরোধী দলগুলোর নেতাকর্মীরা অভিযোগ করছেন ইতিমধ্যে বিভিন্ন স্থানে ধরপাকড় শুরু হয়েছে। পুরনো মামলায় নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। সামনের দিনে গ্রেপ্তার-ধরপাকড় আরও বাড়বে এমন আশঙ্কা থেকে নেতাকর্মীরা সতর্কভাবে চলাফেরা করছেন। যদিও দলটির নেতারা বলছেন, সামনের দিনে মামলা- গ্রেপ্তারের কৌশল আর কাজে আসবে না। এবার এসব মোকাবিলা করেই দাবি আদায়ের আন্দোলন জোরদার করা হবে।
বিএনপি’র দপ্তর সূত্র জানায়, নেতাকর্মীদের নামে দিন দিন মামলার সংখ্যা বেড়েই চলছে। ২০০৯ সাল থেকে চলতি বছরের ২২শে মে পর্যন্ত ১৪ বছরে মামলা হয়েছে ১ লাখ ১১ হাজার ৫৬৭ টি। এসব মামলায় আসামি করা হয়েছে ৩৯ লাখ ৮০ হাজার ৮২৬ জনকে। বিএনপি’র দাবি এসব মামলা মিথ্যা এবং হয়রানিমূলক। অনেককে গায়েবি আসামি করা হয়েছে। দলীয় সূত্রের দাবি ১৪ বছরে হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন এক হাজার ৫৩৭ জন। এরমধ্যে ৭৯৯ জন বিএনপি নেতাকর্মী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে নিহত হয়েছেন। এখন পর্যন্ত দলটির ৭২জন নেতাকর্মীর খোঁজ মিলছে না বলে জানিয়েছেন নেতারা। তাদের ভাষায় এইসব নেতাকর্মী ‘গুমের’ শিকার হয়েছেন। গত বছরের ২২শে আগস্ট থেকে গতকাল (সোমবার) পর্যন্ত ১৭৯০ জন বিএনপি নেতাকর্মী আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দ্বারা গুরুতর জখম ও আহত হয়েছেন বলে বিএনপি’র কেন্দ্রীয় দপ্তর সূত্র জানিয়েছে।
গত ১৫ই রমজান হতে এখন পর্যন্ত বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে সারা দেশে শতাধিক মামলা করা হয়েছে। সেসব মামলায় প্রায় ৯ হাজার জনকে আসামি করা হয়েছে। অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে আরও কয়েক হাজার। নতুন মামলা ছাড়াও বিগত দিনের পুরনো মামলাতে আটক হতে হচ্ছে নেতাকর্মীদের। এছাড়া উচ্চ আদালত থেকে জামিন শেষে নিম্ন আদালতে হাজির হলে কারাগারে পাঠানোর সংখ্যাও বাড়ছে ক্রমান্বয়ে। ঢাকা মহানগর বিএনপিতে নতুন আতঙ্ক সাদা পোশাকের পুলিশ। মামলাতে জামিন থাকলেও সাদা পোশাকে নেতাকর্মীদেরকে আটকের অভিযোগ করে আসছে বিএনপি। নেতারা জানান, ২০১৩, ২০১৫ ও ২০১৮ সালের মতো আবারো ধরপাকড় শুরু করেছে সরকার। গায়েবি মামলা দেয়া হচ্ছে। প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন এলাকায় নতুন মামলায় বিএনপি নেতাকর্মীদেরকে আসামি করা হচ্ছে। গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। পুরনো মামলায় জামিনে থাকলেও আটকের ঘটনা ঘটছে। বাসাবাড়িতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। গ্রেপ্তার আতঙ্কে অনেকেই ঘরবাড়ি কিংবা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।
সব মামলায় জামিনে থাকলেও গত রোববার রাতে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি’র সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনুকে আটক করে ডিবি পুলিশ। সোমবার পল্টন থানার একটি পেন্ডিং মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে একদিনের রিমান্ডে নেয়া হয়। একইভাবে গতকাল ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি’র যুগ্ম আহ্বায়ক মোয়াজ্জেম হোসেন মতিকে আটক করে গোয়েন্দা পুলিশ। ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি’র সদস্য আবুল হোসেনকে বাসায় না পেয়ে তার দুই পুত্র আব্দুর রহমান রনি ও আহাদুল ইসলাম বাদলকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এছাড়া রামপুরা থানা বিএনপি’র সাবেক সহ-সভাপতি সোবহান পাটোয়ারী ও ইয়াসিন আলী রনিকে সাদা পোশাকধারী পুলিশ আটক করে।
গত ১৭ই মে রাতে জামালপুর জেলার মেলান্দহ উপজেলায় ইউনিয়ন বিএনপি’র রেজাউল করিম বুলবুল, গোলাম কিবরিয়া, মামুনুর রশীদ, বেলালকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। বিএনপি’র কেন্দ্রীয় নেতা মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল জানান, তাদের কারো বিরুদ্ধেই কোনো মামলা ছিল না। পুরনো মামলায় তাদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। এসব মামলা ও গ্রেপ্তারের বাইরে খুলনা, পটুয়াখালী, রাজবাড়ীসহ বিভিন্ন জেলায় কর্মসূচি পালনে বাধা দেওয়া হয়েছে, হামলা করা হয়েছে। নেতাকর্মীদের আটক করা হয়েছে।
বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী অভিযোগ করে বলেন, নির্বাচন সামনে রেখে সারা দেশে মিথ্যা ও গায়েবি মামলার হিড়িক পড়েছে। বিএনপি’র কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচি বাতিল করতে সরকার গায়েবি মামলা, মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার এবং নির্বিচারে গুলি চালিয়ে অসংখ্য মানুষকে হত্যা, অন্ধ ও পঙ্গু করে যাচ্ছে। নেতাকর্মীদের পুলিশ আটক করলেও স্বীকার কিংবা কোনো হদিস দিচ্ছে না। ঢাকা মহানগরে বিএনপি’র নেতাকর্মীদের বাসায় বাসায় পুলিশ হানা দিচ্ছে। গত কয়েক দিন ধরে খুলনা, পটুয়াখালী, ফরিদপুর, নেত্রকোনা, ফেনীসহ বেশকিছু জেলায় বিএনপি’র শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে পুলিশসহ আওয়ামী লীগের কর্মীরা আক্রমণ চালিয়েছে। এ ছাড়া যশোর, সিলেট, ঝিনাইদহ ও রাজশাহীতে নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে গ্রেপ্তার, তল্লাশি, আসবাবপত্র ভাঙচুর করছে। সরকার বেপরোয়া হয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যবহার করছে।
এদিকে গতকাল গণমাধ্যমে পাঠানো এক বার্তায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা হারানোর ভয়ে এখন বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। তাদের ব্যর্থতা ঢাকতেই সরকার বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর জুলুম-নিপীড়ন চালাচ্ছে। গণতন্ত্রকামী মানুষ প্রতিনিয়ত নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন। ক্ষমতা হারানোর ভয়ে সরকার বিএনপি’র জাতীয় নেতৃবৃন্দসহ তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার করতে এখন বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। সরকারের বিরুদ্ধে কোনো আওয়াজ উঠলেই তারা বেসামাল হয়ে পড়ে। তিনি বলেন, দলীয় চেতনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সাজিয়ে ‘প্রাইভেট বাহিনী’র ন্যায় ব্যবহার করা হচ্ছে। এরা আইনশৃঙ্খলার কাজে লিপ্ত না থেকে বিএনপিসহ বিরোধী দলের কর্মসূচির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ছে।