আজ জাতীয় কবির জন্মবার্ষিকী
আজ জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৫তম জন্মবার্ষিকী।
প্রথম নিউজ, অনলাইন ডেস্ক: ‘বল বীর, বল উন্নত মম শির! শির নেহারি আমারি নত শির ওই শিখর হীমাদ্রির...।’ জাতীয় কবির এই চরণটুকু চিরভাস্বর হয়ে আছে প্রতিটি মানুষের অন্তরে। আজ জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৫তম জন্মবার্ষিকী। তার জন্মদিন যথাযথ মর্যাদায় পালনের লক্ষ্যে নানা ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- কবির মাজারে পুষ্পস্তবক অর্পণ, আলোচনা সভা ও সংগীতানুষ্ঠান। ‘অসামপ্রদায়িক চেতনা এবং নজরুল’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে এবার জাতীয় কবির জন্মবার্ষিকী উদ্যাপিত হচ্ছে।
বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আজ সকাল সোয়া ৬টায় অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে সমবেত হবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা এবং কর্মচারীবৃন্দ। এরপর সকাল সাড়ে ৬টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামালের নেতৃত্বে শোভাযাত্রা নিয়ে কবির সমাধিতে গমন করবেন তারা। জাতীয় কবির মাজারে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হবে। তার রুহের মাগফেরাত কামনায় সূরা ফাতেহা পাঠ করা হবে। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সভাপতিত্বে কবির সমাধি প্রাঙ্গণে এক আলোচনা সভা ও সংগীতানুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে।
১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দের ২৪শে মে (১১ই জ্যৈষ্ঠ, ১৩০৬ বঙ্গাব্দ) ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার আসানসোল মহকুমার চুরুলিয়া গ্রামে এক বাঙালি মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন কাজী নজরুল ইসলাম। তার বাবা ফকির আহমদ ছিলেন স্থানীয় মসজিদের ইমাম এবং মাজারের খাদেম।
কাজী নজরুল ইসলামের ডাক নাম ছিল ‘দুখু মিয়া’। নজরুল গ্রামের স্থানীয় মসজিদে মুয়াজ্জিনের কাজ করতেন। মক্তবে কোরআন, ইসলাম ধর্ম, দর্শন এবং ইসলামী ধর্মতত্ত্ব অধ্যয়ন শুরু করেন। যখন ১৯০৮ সালে তার পিতার মৃত্যু হয়, তখন তার বয়স মাত্র ৯ বছর। পিতার মৃত্যুর পর পারিবারিক অভাব-অনটনের কারণে নজরুলের শিক্ষাজীবন বাধাগ্রস্ত হয় এবং মাত্র ১০ বছর বয়সে জীবিকা অর্জনের জন্য কাজে নামতে হয় তাকে। এ সময় মক্তব থেকে নিম্ন মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ওই মক্তবেই শিক্ষকতা শুরু করেন নজরুল। তিনি অল্প বয়সেই ইসলামের মৌলিক আচার-অনুষ্ঠানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে পরিচিত হওয়ার সুযোগ পান, যা পরবর্তীকালে তার সাহিত্যকর্মে ব্যাপক প্রভাবিত করে। তিনিই বাংলা সাহিত্যে ইসলামী চেতনার চর্চা শুরু করেছেন। সাহিত্যের নানা শাখায় বিচরণ করলেও নজরুলের প্রধান পরিচয় তিনি কবি।
স্কুলের গণ্ডি পার হওয়ার আগেই ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে কাজী নজরুল ইসলাম ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। মুসলিম পরিবারের সন্তান এবং শৈশবে ইসলামী শিক্ষায় দীক্ষিত হয়েও তিনি বড় হয়েছিলেন ধর্মনিরপেক্ষতার সত্তা নিয়ে। একইসঙ্গে তার মধ্যে বিকশিত হয়েছিল বিদ্রোহী সত্তা। ১৯২২ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ সরকার তাকে রাজ্যদ্রোহিতার অপরাধে কারাবন্দি করে। তৎকালীন সময়ে তিনি ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অধীনে অবিভক্ত ভারতের বিদ্রোহী কবি হিসেবে পরিচিত হন। ১৯৪২ সালে নজরুল স্নায়ুবিক অসুস্থতায় আক্রান্ত হয়ে পড়লে আকস্মিকভাবে তার সকল সক্রিয়তার অবসান ঘটে। ১৯৭৬ সালে মৃত্যু পর্যন্ত দীর্ঘ ৩৪ বছর তাকে সাহিত্যকর্ম থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন থাকতে হয়।