আওয়ামী লীগ নয়, দেশ চালাচ্ছে অদৃশ্য শক্তি
যুবদলের সমাবেশে মির্জা ফখরুল
প্রথম নিউজ, অনলাইন: নিজ দেশে থেকে আমরা পরবাসী হয়েছি মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আওয়ামী লীগ দাবি করে তারা দেশ চালাচ্ছে। আসলে কী তারা দেশ চালাচ্ছে? তারা দেশ চালায় না। এক অদৃশ্য শক্তি দেশ চালাচ্ছে। আর তাদের নির্দেশেই আজকে বাংলাদেশে তারা (আওয়ামী লীগ) মানুষের অধিকারগুলোকে কেড়ে নিয়েছে। শনিবার রাজধানীর নয়াপল্টন বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে যুবদলের উদ্যোগে ‘বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসাসহ নিঃশর্ত মুক্তি, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং সংগঠনের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকুসহ সকল রাজবন্দির নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে’ বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
আন্দোলন প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, সাময়িকভাবে আন্দোলন কিছুটা ভাটা পড়তে পারে। অনেকে বলেন, আবার আন্দোলন শুরু। আন্দোলন চলছে। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া যখন বন্দি, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশে ফিরতে পারেন না, টুকু (সুলতান সালাউদ্দিন টুকু) জেলে তখন তো আন্দোলন চলছেই। প্রতিটি কারারুদ্ধ নেতাকর্মী আন্দোলন করছেন। আওয়ামী লীগের নেতাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, লজ্জা করে না।
শরম বলতে তো আর কিছু নাই। লজ্জা শরমের মাথা খেয়ে ফেলেছেন। এমনভাবে কথা বলেন, এটাকে তারা তাদের পৈতৃক সম্পদ মনে করেন। তারা যেভাবে খুশি সেভাবে ব্যবহার করবেন। জনগণ যে চাহিদা সেদিকে তাকান না। আমরা এখনো বলি, এখনো সময় আছে, জনগণের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। সেই জনগণকে বেরিয়ে আসতে বাধ্য করবেন না উত্তাল তরঙ্গ সৃষ্টি করে আপনাদের মসনদকে ভেঙে চুরমার করে দিতে। ২৮শে অক্টোবরের সমাবেশ পণ্ড করার ঘটনা তুলে ধরে ফখরুল বলেন, আজকেও চেষ্টা করেছিলেন। আজকে একটা পটকা ফুটিয়েছেন। সেটা কে ফুটিয়েছে আমরা বুঝি না? দেশের মানুষ বুঝে না? আবারো সরকারি দলীয় লোকেরা সেই অবস্থা তৈরি করতে চেয়েছে। তরুণ ও যুবকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, কোনো দেশের মুক্তি হয় না, যদি তরুণ ও যুবকরা এগিয়ে না আসে। শুধু ঠিক বললে এবং জেল খাটলে চলবে না। আপনাদের বেরিয়ে আসতে হবে। রাজপথে জনগণকে নিয়ে চলে আসতে হবে।
সেই জনগণকে নিয়ে আরও শক্তিশালী দৃঢ় প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। অন্যথায় স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব জলাঞ্জলে যাবে। তাই আর বিলম্ব নয়। নিজেদেরকে শক্তিশালী করতে হবে। আজকে ডাক এসেছে দেশ থেকে, দেশমাতৃকা থেকে। নেতাকর্মীদের সাজা দেয়ার প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব বলেন, কোনো শুনানি ছাড়া ২ হাজার মানুষকে সাজা দিয়েছেন। এটা কোনো আইনের শাসন হতে পারে না। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নাই। আপনারা (সরকার) কেড়ে নিয়েছেন। নির্বাচন ব্যবস্থাকে সরকার সম্পূর্ণভাবে গিলে ফেলেছে বলেও মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল। বলেন, আওয়ামী লীগের নেতারা অনেক কথা বলেন। শুক্রবারই তাদের সম্মানিত সাধারণ সম্পাদক (ওবায়দুল কাদের) বলেছেন, আবার সন্ত্রাস সৃষ্টি চেষ্টা করবেন না। তাহলে এবার ডাবল শিক্ষা দিয়ে দিবো। বিএনপি কখনোই সন্ত্রাস করে না। বিএনপি’র সন্ত্রাসের ইতিহাস নেই। সন্ত্রাসের ইতিহাস আপনাদের। সন্ত্রাসের মধ্যে দিয়েই আপনাদের জন্ম। তিনি আরও বলেন, যখন আওয়ামী লীগে মওলানা ভাসানী সভাপতি ছিলেন। মওলানা ভাসানীকে আপনারা বিতাড়িত করে দিয়ে, মেরে তাড়িয়ে দিয়ে তাকে রূপমহল সিনেমা হল থেকে বের করে দিয়েছিলেন। তারপরে সেদিন মওলানা ভাসানী ন্যাপ গঠন করেছিলেন। সেই ইতিহাস আমরা ভুলে যাই নাই। পূর্ব পাকিস্তান আমলে প্রাদেশিক পার্লামেন্ট ছিল, সেই পার্লামেন্টে ডেপুটি স্পিকারকে আপনারাই পিটিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেছিলেন। আমরা ভুলে যাইনি। আমরা ভুলে যাইনি, আপনারা সন্ত্রাসের মধ্যদিয়ে এদেশের জনগণের ন্যায়সঙ্গত দাবির আন্দোলনকে গত ১৮ বছর ধরে দমিয়ে দিচ্ছেন।
ফখরুল বলেন, এই সরকারের নির্যাতনের অন্যতম হাতিয়ার হচ্ছে বিচারব্যবস্থাকে দলীয়করণ করার মধ্যদিয়ে। এই সরকার টিকেই আছে শুধু এসমস্ত মিথ্যা মামলা করে। আদালতকে তারা তাদের নির্যাতনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে চায়। এভাবে তারা আজকে শাসনব্যবস্থায় টিকে থাকতে চায়। ইতিমধ্যে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে জনগণের ন্যায়সঙ্গত দাবির আন্দোলনকে নিদারুণভাবে গত ২৮শে অক্টোবর তারা (সরকার) পণ্ড করে দিয়েছে। কিন্তু একটা কথা তাদেরকে মনে করে দিতে চাই, নির্যাতন, দমন, গুম, খুন ও হত্যা করে কখনো গণতন্ত্র, স্বাধিকার এবং মুক্তির যে আন্দোলন, সেই আন্দোলনকে স্তিমিত করে রাখা যাবে না। অতীতেও যায়নি, এখনো যাবে না। ২৮শে অক্টোবের ঘটনার প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, এটা বিনা ভোটের সরকার। জনসমর্থন নাই। সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই সরকারকে দূর করতে হবে। তাহলেই এই দেশের মুক্তি আসবে। অন্যথায় আসবে না। স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, সবেচেয়ে বড় পয়জন এই আওয়ামী লীগ। সবকিছু ধ্বংস করতে পারে। আর যদি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে চান তাহলে আগে বাংলাদেশকে বিদেশি তাঁবেদারির হাত থেকে মুক্ত করতে হবে।
সেদিন সবাই মুক্ত হবে। সমাবেশে অংশ নিতে ব্যানার ও ফেস্টুনসহ মিছিল সহকারে বেলা আড়াইটা থেকে যুবদলের হাজার হাজার নেতাকর্মী নয়াপল্টনে জড়ো হতে শুরু করেন। খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে আসেন তারা। এসময় তাদেরকে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিসহ সরকারবিরোধী বিভিন্ন স্ল্লোগান দিতে দেখা গেছে। এদিকে সমাবেশকে ঘিরে নয়াপল্টন ও এর আশপাশের এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। পাশাপাশি সাদা পোশাকেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের দেখা গেছে। ওদিকে সমাবেশ শুরুর আগে নয়াপল্টনে হোটেল মিডওয়ের পেছনে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় একজন আহত হয়েছে। আহত ব্যক্তিকে পল্টন থানা পুলিশ আটক করেছে। তবে তার নাম জানা যায়নি। বেলা ২টা ৪০ মিনিটের দিকে এ ঘটনা ঘটে বলে জানা গেছে। যুবদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি মামুন হাসানের সভাপতিত্বে সমাবেশে বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি’র সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মোনায়েম মুন্না, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানী, কৃষক দলের সভাপতি হাসান জাফির তুহিনসহ ঢাকা বিভাগীয় বিভিন্ন জেলা যুবদলের নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।