অক্টোবরে ইউরোপের বাজারে পোশাক রপ্তানি বেড়েছে ৩৪ শতাংশ
প্রথম নিউজ, অনলাইন: বাংলাদেশের পোশাক খাতে নানা ধরনের অস্থিরতার মধ্যেও ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজারে অন্য দেশের তুলনায় প্রবৃদ্ধি বেড়েছে। অক্টোবর মাসে ইউরোপের বাজারে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি বেড়েছে ৩৪ শতাংশ। তবে এ মহাদেশে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি বাড়লেও দাম কমেছে ৪ শতাংশের বেশি। ইউরোপীয় পরিসংখ্যান সংস্থা ইউরোস্ট্যাটের সর্বশেষ প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে। ইউরোস্ট্যাটের তথ্য বলছে, অক্টোবরে ইউরোপীয় ইউনিয়নের টেক্সটাইল ও পোশাক আমদানির চাহিদা বেড়েছে। এ দেশগুলোর চাহিদা বাড়ায় সুযোগ সবচেয়ে বেশি নিয়েছে বাংলাদেশ। এ দেশগুলোয় পোশাক রপ্তানির ক্ষেত্রে সবচেয়ে দ্রুত প্রবৃদ্ধি বাংলাদেশের। সেখানে পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ছাড়িয়েছে ৩৪ শতাংশ। অথচ বাংলাদেশের প্রতিযোগী দেশগুলোর মধ্যে ভিয়েতনাম, ভারত, পাকিস্তান এবং চীনের প্রবৃদ্ধি প্রায় ২০ থেকে ২৩ শতাংশের মধ্যে।
ইইউতে রপ্তানি করা পোশাকের প্রধান বাজারগুলোর মধ্যে ইইউতে মোট আমদানির প্রায় এক-তৃতীয়াংশই চীনের। এরপরই অবস্থান করছে তুরস্ক। ১৩.১ শতাংশ শেয়ার নিয়ে দেশটি রয়েছে দ্বিতীয় অবস্থানে। ১১.৪ শতাংশ শেয়ার নিয়ে সেখানে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। অক্টোবরে ইউরোপীয় ইউনিয়নে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩৩.৭৮ শতাংশের উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি পেয়েছে। এটি চলতি বছরের প্রথম ১০ মাসে রেকর্ড করা সবচেয়ে শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি।
ইইউ’র পরিসংখ্যান অফিস ইউরোস্ট্যাটের প্রকাশিত তথ্যানুযায়ী, ইইউ অক্টোবরে বাংলাদেশ থেকে ১৮২ কোটি ডলারের পোশাক আমদানি করেছে; যা ২০২৩ সালের একই মাসে ১৩৬ কোটি ডলার থেকে বেশি। রপ্তানিকারকরা রপ্তানির এই উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধির কারণ হিসেবে বলছেন, বৈশ্বিক ক্রেতাদের কাছ থেকে ক্রয়াদেশ বাড়ার কারণে তাদের এ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। তবে তারা উল্লেখ করেছে, অক্টোবরে প্রায় ৩৪ শতাংশ বৃদ্ধি অস্বাভাবিক বলে মনে হয়েছিল। জুলাই এবং আগস্ট মাসে বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা এবং শ্রম অসন্তোষে শিপমেন্ট বিলম্বের কারণে আংশিকভাবে এ উত্থান ঘটেছে। ফলে সেপ্টেম্বরে ক্রয়াদেশের ক্ষতি কিছুটা পূরণ হয়েছে এবং পরে অক্টোবরের শক্তিশালী পরিসংখ্যানে অবদান রেখেছে। অক্টোবরে চিত্তাকর্ষক প্রবৃদ্ধি সত্ত্বেও ইইউতে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক (আরএমজি) রপ্তানি চলতি বছরের শুরুর দিকে বড় পতনের মুখোমুখি ছিল। এ খাতটি আগস্ট মাসে ৪.২ শতাংশ প্রবৃদ্ধির দেখা পেয়েছিল। পরে সেপ্টেম্বরে ৭.৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
তবে প্রথম ১০ মাসে ইইউতে মোট পোশাক রপ্তানির গতি শ্লথ। এ অঞ্চলে প্রবৃদ্ধি মাত্র ০.৭৬ শতাংশ। ২০২৩ সালের একই সময়ের মধ্যে যেখানে রপ্তানি হয়েছিল ১৫.৬৭ বিলিয়ন ডলারের, এ সময়ে তা পৌঁছেছে মাত্র ১৫.৭৯ বিলিয়নে।ইউরোপের বাজারে সর্বশেষ দ্বিতীয়ার্ধে পোশাকের চাহিদা বাড়লেও এ প্রবণতা অব্যাহত থাকবে কিনা, শঙ্কা এখনো থেকে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে ইউরোস্ট্যাট। উদ্যোক্তারা বলেন, ইইউতে সামগ্রিক আমদানি মূল্য এবং পরিমাণ সামান্য বৃদ্ধি পেলেও বিভিন্ন সোর্সিং দেশগুলোর একটি জটিল চিত্র এটি। ওই বাজারে প্রধান সরবরাহকারী চীনের পোশাক আমদানির মূল্যে সামান্য প্রবৃদ্ধি মাত্র ১.১৪ শতাংশ। তবে সেখানে বাংলাদেশের পোশাকের দাম কমেছে ৪.৯২ শতাংশ। তিনি বলেন, ২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে বেশির ভাগ সরবরাহকারীদের জন্য ইউনিটের দাম কমেছে। ফলে বিশ্বব্যাপী পোশাক শিল্পের মধ্যে প্রতিযোগিতামূলক চাপও বেড়েছে। উল্লিখিত সময়ের মধ্যে চীন থেকে ইইউ’র আমদানি মূল্য ৮.৬৩ শতাংশ কমেছে।
এদিকে একক দেশ হিসেবে বাংলাদেশি তৈরি পোশাকের সবচেয়ে বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্র। চলতি বছরের ১০ মাসে অর্থাৎ জানুয়ারি থেকে অক্টোবরে বাংলাদেশ থেকে দেশটির পোশাক আমদানি কমেছে। একই সময় বাংলাদেশের প্রতিযোগী দেশ ভিয়েতনাম ও ভারত থেকে বেড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য বিভাগের অফিস অব টেক্সটাইলস অ্যান্ড অ্যাপারেলসের (ওটিইএক্সএ) হালনাগাদ পরিসংখ্যানে এ তথ্য উঠে এসেছে। প্রাপ্ত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৪ সালের জানুয়ারি-অক্টোবর পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের আমদানি করা পোশাকের অর্থমূল্য ছিল ৬১৪ কোটি ৬০ লাখ ডলার, ২০২৩ সালের একই সময় ছিল ৬৩৫ কোটি ৮০ লাখ ডলার। এ হিসেবে চলতি বছরের ১০ মাসে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পোশাক আমদানি কমেছে ৩.৩ শতাংশ।