২১ আগষ্টের হামলা ছিল বিএনপির বিরুদ্ধে দেশি-বিদেশি যড়যন্ত্র :রিজভী

আজ সোমবার বিকেলে নয়াপল্টনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। 

২১ আগষ্টের হামলা ছিল বিএনপির বিরুদ্ধে দেশি-বিদেশি যড়যন্ত্র :রিজভী

প্রথম নিউজ, ঢাকা: আওয়ামী কতৃর্ত্ববাদী সরকার দেশকে তাবেদার রাষ্ট্রে পরিণত করতে দেশে বিদেশে জাতীয়তাবাদী শক্তির ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করতে তারেক রহমানকে জড়িয়ে অপপ্রচারের হাইপার—প্রোপাগান্ডা চালিয়ে আসছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন ২১ আগষ্টের হামলা ছিল বিএনপির বিরুদ্ধে দেশি-বিদেশি যড়যন্ত্র। 

আজ সোমবার বিকেলে নয়াপল্টনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। 

রুহুল কবির রিজভী বলেন, ২০০৪ সালের ২১ আগষ্টের নৃশংস ঘটনায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জড়িয়ে ক্রমাগত মিথ্যাচার—অপপ্রচার চালিয়ে আসছে আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকার। দেশকে তাবেদার রাষ্ট্রে পরিণত করার সুদূরপ্রসারী ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবেই দেশে বিদেশে জাতীয়তাবাদী শক্তির ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করতে একটা ভয়ংকর মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী ২১ আগস্টের নৃশংস মর্মান্তিক ঘটনা ঘটিয়ে তারেক রহমানকে জড়িয়ে অপপ্রচারের হাইপার—প্রোপাগান্ডা চালিয়ে আসছে আওয়ামী কতৃর্ত্ববাদী সরকার। জাতীয়তাবাদী শক্তির প্রধান কন্ঠস্বর তারেক রহমানকে এই বর্বরোচিত ঘটনায় জড়িয়ে সাজা প্রদানের ঘটনা এক চরম চক্রান্তমূলক অবিচার ও ন্যাক্কারজনক প্রহসনগুলোর অন্যতম বলে মনে করে দেশবাসী। তারেক রহমানকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেয়ার এক গভীর ষড়যন্ত্রের হাস্যকর প্রচেষ্টা। শেখ হাসিনা প্রতিহিংসা এবং জিঘাংসার পথরেখা ধরে এগুচ্ছেন মহান স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের পরিবারকে নিশ্চিহ্ন করতে। ২১ আগস্টের নৃশংস ঘটনাটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছিল না। ‘একুশে আগস্ট’ আর ‘ওয়ান ইলেভেন’ একই সূত্রে গাঁথা। এই নিরেট বাস্তবতার প্রামাণ্য আজ তুলে ধরেছেন জনাব তারেক রহমান সাহেব। আজ সকালে ভার্চুয়াল মাধ্যমে প্রদত্ত ভাষণে তারেক রহমান দেশবাসীর সামনে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, বিশেষ করে ২০০৪ সালের ২১ আগষ্টের নৃশংস ঘটনা প্রসঙ্গে কিছু অতি গুরুত্বপূর্ণ, কিছু জিজ্ঞাসা, ২১ আগষ্টের নির্মম ঘটনাটি ঘিরে কিছু প্রশ্ন জনগণের আদালতে উপস্থাপন করেছেন।
তিনি বলেছেন, ২১ আগস্ট সম্পর্কে আলোচনা উঠলেই 'জজ মিয়া' নামে এক ব্যক্তির গ্রেফতার প্রসঙ্গটি সামনে এনে পুরো বিষয়টিকে সম্পূর্ণ ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার অপচেষ্ট চালানো হয়। অথচ, সকল তদন্তেই ২১ আগষ্টের মুখ্য চরিত্র গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ার মুফতি হান্নান। বিএনপি সরকারের আমলেই ২০০৫ সালের পহেলা অক্টোবর মুফতি হান্নানকে গ্রেফতার করা হয়। এর আগে ২০০৫ সালের ৯ জুন গ্রেফতার হয় জজ মিয়া নামে একব্যক্তি। গ্রেফতার হওয়ার সপ্তাহ দুয়েক পর ২৫ জুন 'জজ মিয়া' ২১ আগস্ট মামলায় নিজেকে জড়িয়ে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। 'জজ মিয়া'র স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে 'মুফতি হান্নানের নাম ছিল না। আপনাদের অনেকেরই হয়তো মনে আছে, চাঞ্চল্যকর মামলাগুলো তদারকি করার জন্য বিএনপি সরকারের সময় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি 'জাতীয় মনিটরিং সেল' করা হয়েছিল। জজ মিয়া'র জবানবন্দির আলোকে মামলা এগিয়ে নেয়ার জন্য তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তারা দু'দফায় জাতীয় মনিটরিং সেলের কাছে নির্দেশনা চেয়েছিলো। কিন্তু ২১ আগস্ট মামলার তদন্ত চলাকালে তৎকালীন বিএনপি সরকার শুধু 'জজ মিয়া'র জবানবন্দির উপর তদন্ত সীমাবদ্ধ রাখেনি। বরং জাতীয় মনিটরিং সেলের পক্ষ থেকে আরো গভীরভাবে তদন্ত এগিয়ে নেয়ার জন্য পুলিশের তদন্তকারী কর্মকর্তাদেরকে নির্দেশনা দেয়া হয়। এরই জের ধরে 'জজ মিয়া' গ্রেফতারের পর তিন মাসের মাথায় মুফতি হান্নানের গ্রেফতারে প্রমাণিত হয়, বিএনপি সরকারের তদন্ত সঠিকভাবেই এগুচ্ছিলো। 'জজ মিয়া'কে ব্যবহার করে ২১ আগস্ট মামলা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে চাইলে বিএনপি সরকারের সময় মুফতি হান্নানকে গ্রেফতারের প্রয়োজন ছিল না। 'জজ মিয়া'কে ব্যবহার করে মামলা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে চাইলে বিএনপি সরকারের আমলেই পুলিশ 'জজ মিয়া'কে অভিযুক্ত করে চার্জশীট দিতে পারতো।
২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের সমাবেশে হামলা মামলাটিকে জাতীয় স্বার্থেই বিএনপি সরকার সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছিল। তদন্ত পুরোপুরি শেষ না হওয়ায় তাড়াহুড়ো করে বিএনপি সরকারের আমলে ২১ আগষ্ট হামলা মামলার কোনো চার্জশীট দাখিল করা হয়নি। তারেক রহমান বলেন, যেখানে 'জজ মিয়া'কে অভিযুক্ত করে কোনো চার্জশিটই দাখিল করা হয়নি, যেখানে মামলার ১ নম্বর অভিযুক্ত মুফতি হান্নানকে বিএনপি সরকার—ই গ্রেফতার করেছে। সেখানে 'জজ মিয়া'কে ইস্যু বানিয়ে ২১ আগষ্ট মামলার তদন্ত সম্পর্কে বিএনপির বিরুদ্ধে জনগণকে বিভ্রান্ত করার পেছনে আওয়ামী লীগের অবশ্যই ভিন্ন কারণ রয়েছে। সুতরাং, ২১ আগষ্টের ভয়ঙ্কর হামলার নেপথ্য কারণ বের করতে হলে 'জজ মিয়া' থেকে বেরিয়ে এসে আরো অনেক প্রশ্নের জবাব খুঁজে পেতে হবে। তারেক রহমান বলেন, ২১ আগষ্টের সমাবেশ এবং এর আগে পরের কিছু বিষয় সম্পর্কে আমি আজ কয়েকটি প্রশ্ন তুলে ধরতে চাই। আপনারা জানেন, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের সমাবেশ রাজধানীর 'মুক্তাঙ্গনে' হওয়ার কথা ছিল। সমাবেশের জন্য ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ লিখিতভাবে ঢাকা সিটি কর্পোরেশন থেকে 'মুক্তাঙ্গন' বরাদ্দ নেয়। 'মুক্তাঙ্গন' বরাদ্দ পাওয়ার পর তৎকালীন ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের উপ—দপ্তর সম্পাদক শহিদুল ইসলাম মিলন ২০০৪ সালের ১৭ আগস্ট লিখিতভাবে ঢাকা মহানগর পুলিশকে জানায়। ঢাকা মহানগর পুলিশ যথারীতি আওয়ামী লীগকে ১৯ আগস্ট লিখিতভাবে 'মুক্তাঙ্গনে' সমাবেশের সম্মতিপত্র দিয়ে দেয়। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট প্রায় সকল জাতীয় পত্রিকায় 'আজ মুক্তাঙ্গনে আওয়ামী লীগের সমাবেশ' শিরোনামে সংবাদও প্রকাশিত হয়। ২১ আগস্ট নির্ধারিত সমাবেশের দিন বেলা ১২ টার মধ্যেই পুলিশ প্রশাসন 'মুক্তাঙ্গন' ও এর আশেপাশের এলাকায় প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করে। আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা 'মুক্তাঙ্গনে' দায়িত্ব পালনের জন্য আসার সময় নিয়মানুযায়ী মতিঝিল থানায় জিডি করে। তবে পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্যরা 'মুক্তাঙ্গনে'র আসার কিছু সময় পর জানতে পারেন সমাবেশের স্থান কাউকে না জানিয়েই হঠাৎ করেই 'মুক্তাঙ্গন' থেকে গুলিস্তানে আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ের সামনে স্থানান্তর করা হয়েছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী থানায় ফিরে গিয়ে ভেন্যু স্থানান্তরের বিষয়ে বেলা দেড়টার দিকে মতিঝিল থানায় জিডি করে। প্রশ্ন হলো, যেই সমাবেশের প্রধান অতিথি সেই সময়কার বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনা, সেই সমাবেশের 'ভেন্যু' কার সিদ্ধান্তে পরিবর্তন করা হয়েছে ? কে পরিবর্তন করেছে ? তর্কের খাতিরে যদি ধরে নেয়া হয়, ২১ আগস্ট শেখ হাসিনার সমাবেশে হামলার আশংকায় 'মুক্তাঙ্গনে'র পরিবর্তে সমাবেশের স্থান তাৎক্ষণিকভাবে পরিবর্তন করে 'বঙ্গবন্ধু এভিন্যু' এলাকায় স্থানান্তর করা হয়েছিল। তাহলে সেই 'ভেন্যু' পরিবর্তনের তথ্য কি আইন শৃংখলা বাহিনীকে জানানো হয়েছিল ? তিনি বলেন, ২১ আগষ্ট শেখ হাসিনার সমাবেশে হামলার ঘটনা দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে অবশ্যই অত্যন্ত ভয়ঙ্কর এবং নৃশংস ঘটনা। এমন একটি ভয়ঙ্কর হামলার ঘটনা সাধারণত 'পূর্ব পরিকল্পনা ও নিখুঁত নিশানা নির্ধারণ' ছাড়া হতে পারেনা। সেক্ষেত্রে সমাবেশে গ্রেনেড হামলাকারীদের অবশ্যই 'ভেন্যু' সম্পর্কে আগেভাগেই স্বচ্ছ ও সুস্পষ্ট ধারণা থাকবে এটাই স্বাভাবিক। পুলিশ এবং হামলাকারিদের জবানবন্দির বরাতে পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হয়, 'আবু জান্দাল এবং কাজল' সমাবেশে প্রথম গ্রেনেড ছুড়ে মারে। আওয়ামী লীগের সমাবেশে হামলাকারীদের কয়েকজনের জবানবন্দির আলোকে 'যারা যেভাবে পরিকল্পনা ও হামলা করেছিল' শিরোনামে ২০১৮ সালের ২১ আগস্ট দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায় একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। রিপোর্টে বলা হয়, 'হামলার আগের দিন ২০ আগস্ট কাজল ও আবু জান্দাল 'বঙ্গবন্ধু এভিন্যু'তে গিয়ে এলাকা পর্যবেক্ষণ (রেকি) করে আসেন'। রহস্যটি এখানেই। হামলাকারী জঙ্গি—সন্ত্রাসীরা সমাবেশেস্থল 'মুক্তাঙ্গনে'র পরিবর্তে কেন 'বঙ্গবন্ধু এভিন্যু' পর্যবেক্ষণ করলো ? ২১ আগস্ট দুপুরে হঠাৎ করেই আওয়ামী লীগের সমাবেশের ভেন্যু 'মুক্তাঙ্গন' থেকে পরিবর্তন করে 'বঙ্গবন্ধু এভিন্যু'তে নেয়া হলো ? তাহলে হামলাকারীরা আগেই কিভাবে জানলো, 'মুক্তাঙ্গনে' নয় 'বঙ্গবন্ধু এভিনিউ’তে সমাবেশ হবে ? হামলাকারীদেরকে ভেন্যু পরিবর্তনের তথ্য আগেই কে জানিয়ে দিয়েছে ?
তারেক রহমান আরেকটি তথ্য তুলে ধরে বলেছেন, ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলা ‘স্মৃতির পাতা থেকে জানা—অজানা দুই একটি কথা’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল জাতীয় প্রেসক্লাবে। ২০২১ সালের ২০ আগস্ট অনুষ্ঠিত সভায় সাবেক মেয়র সাঈদ খোকন ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের সমাবেশে হামলার ব্যাপারে একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রকাশ করেছে। সভায় সাঈদ খোকন অন রেকর্ড বলেছে, '২০০৪ সালে ২১ আগষ্ট শেখ হাসিনার সমাবেশে হামলার কথা তারা দুই দিন আগেই জানতে পেরেছিলেন'। জানার সঙ্গে সঙ্গেই পিতা মোহাম্মদ হানিফের নির্দেশে সাঈদ খোকন নিজে সুধাসদনে গিয়ে শেখ হাসিনাকে দুই দিন আগেই হামলার আশংকার তথ্যটি পেঁৗছে দিয়েছেন'। তারেক রহমান প্রশ্ন রেখে বলেন, প্রয়াত সাবেক মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ২১ আগষ্ট আওয়ামী লীগের সমাবেশে হামলার কথা জানতে পেরেছিলেন সেটি কোন ভেন্যুতে ? 'মুক্তাঙ্গন' নাকি 'বঙ্গবন্ধু এভিন্যু' ? শেখ হাসিনাকে তার সমাবেশে হামলার আশংকার কথা দুই দিন আগে জানানোর পর শেখ হাসিনা কি পদক্ষেপ নিয়েছিলো ? এমন ভয়ঙ্কর তথ্য জানার পর শেখ হাসিনা তথ্যটি কি আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে জানিয়েছিল ? শেখ হাসিনা, প্রয়াত মেয়র মোহাম্মদ হানিফ কিংবা সাবেক মেয়র সাঈদ খোকন কিংবা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কেউ কি আওয়ামী লীগের সমাবেশে হামলার আশংকার তথ্যটি জানিয়ে থানায় জিডি করেছিলেন ? এমন একটি চাঞ্চল্যকর তথ্য সম্পর্কে সিআইডির তদন্তকারী কর্মকর্তারা সাবেক মেয়র সাঈদ খোকনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিলেন ? তারেক রহমান বলেন, ২১ আগষ্টের ঘটনার নেপথ্য কারণ জানতে হলে এইসব প্রশ্নের জবাব জানা প্রয়োজন। হীন দলীয় স্বার্থের চেয়ে দেশের স্বার্থ বড় করে না দেখলে কখনোই এ সব প্রশ্নের জবাব মিলবেনা।
তিনি বলেন, আপনারা দেখেছেন, সরকার সাংবাদিক দম্পতি সাগর—রুনি হত্যা মামলার পর একযুগ পেরিয়ে গেলেও বর্তমান মাফিয়া সরকার একটি তদন্ত প্রতিবেদনও এখন পর্যন্ত আদালতে দাখিল করতে সক্ষম হয়নি। আট বছরের বেশি সময় পার হয়ে গেলেও আদালতে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ ফান্ড ডাকাতি মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে পারেনি কিংবা করেনি। অথচ, ২১ আগষ্টের মতো ভয়াবহ হামলা মামলার প্রধান আসামি মুফতি হান্নানকে গ্রেফতারের মধ্য দিয়ে মাত্র বছর দু'য়েকের মধ্যেই তৎকালীন বিএনপি সরকার ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটনের দোরগোড়ায় পেঁৗছে গিয়েছিলো। মেয়াদ শেষে বিএনপি সরকারের পদত্যাগের পর ষড়যন্ত্রের পথ ধরে ক্ষমতা দখল করে কথিত ওয়ান ইলেভেন সরকার। বিএনপি সরকার 'জজ মিয়া'র জবানবন্দী আমলে না নিয়ে ২১ আগস্ট হামলা মামলার সঠিক তদন্ত অব্যাহত রেখেছিলো। একইভাবে বিএনপি পরবর্তী সরকারও 'জজ মিয়া'র জবানবন্দী আমলে নেয়নি। সুতরাং, 'জজ মিয়া'কে বাদ দিয়ে মুফতি হান্নানকে এক নম্বর আসামি করে ২০০৮ সালের ৯ জুন আদালতে ২১ আগস্ট হামলা মামলার চার্জশিট দাখিল করা হয়। এতে মোট ২২ জনকে অভিযুক্ত করা হয়। ওই চার্জশিটের উপর ভিত্তি করে ২১ আগস্ট হামলা মামলার বিচার কায্ক্রর্মও শুরু হয়। বিচার শুরুর পর কমপক্ষে ৬১ জনের সাক্ষ্যও গ্রহণ করা হয়। এ পর্যায়ে কথিত ওয়ান ইলেভেন সরকারের বিদায়ের পর ২০০৯ সালে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করে আওয়ামী লীগ। ক্ষমতার অপব্যবহার করে তারা মাঝপথেই আদালতে ২১ আগস্ট হামলা মামলার চলমান বিচার কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। ২১ আগস্ট হামলা মামলার অভিযোগপত্র নিজেদের ইচ্ছেমতো বানাতে কিশোরগঞ্জের স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল কাহহার আকন্দকে পুলিশে ফিরিয়ে এনে তাকে ২১ আগস্ট মামলার অধিকতর তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়। আপনাদের অনেকেই জানেন, চাকুরী থেকে অবসরে গিয়ে আব্দুল কাহহার আকন্দ আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যক্রমে সক্রিয় হয়েছিল। ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নও চেয়েছিলো। আওয়ামী লীগ তাকে 'এমপি' না বানালেও ক্ষমতায় এসে পুলিশের 'এসপি' বানায়। 'এসপি' পদ পেয়ে আব্দুল কাহহার আকন্দ '২১ আগস্ট মামলা'কে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে শুরু করে। ২০১১ সালের তেশরা জুলাই আদালতে পুনরায় ২১ আগস্ট মামলার সম্পূরক চার্জশিট দাখিল করে। সেখানে ২২ জনের পরিবর্তে এসপি আকন্দ চার্জশিটে ৫২ জনের নামে অভিযোগ আনে। ৫২ জনের নামের তালিকায় এসপি আকন্দ ২০১১ সালে আমার নামও জড়িয়ে দেয়। বিএনপি পরবর্তী ওয়ান ইলেভেন সরকারের সময়ে প্রথমবারের মতো দায়ের করা ২১ আগস্ট হামলা মামলার চার্জশীটে আমার নাম জড়ানো হয়নি। এমনকি মামলার বিচার কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর ৬১ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছিল। এই ৬১ জনের মধ্যেও কেউ আমার নাম উল্লেখ করেনি। ২১ আগষ্টের ঘটনার সঙ্গে আমাকে জড়িয়ে কেউ কোনো অভিযোগ তুলেনি। অথচ, অধিকতর তদন্তের নামে এসপি আকন্দ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আমার নাম জড়িয়ে দিয়েছে। এমনকি শেষ পর্যন্ত এসপি আকন্দের সাজানো কল্প—গল্প অনুসারে বিচারের নামে প্রহসনের নাটক মঞ্চস্থ হয়েছে। ২১ আগস্ট হামলা মামলায় কোনভাবেই আমাকে জড়ানোর কোনো তথ্য প্রমাণ না পেয়ে শুধুমাত্র এই মামলায়ই এসপি আকন্দ মুফতি হান্নানকে ৪১০ দিন রিমান্ডে নেয়। রিমান্ডের নামে আকন্দের নির্যাতন সেল থেকে মুক্ত হয়ে ২০১১ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর আদালতকে মুফতি হান্নান লিখিতভাবে জানায়, নির্মম নির্যাতনের মাধ্যমে তার কাছে ২১ আগস্ট মামলায় তার মুখ থেকে 'আমার নাম' আদায় করা হয়েছে। এটি বলার অপেক্ষা রাখেনা, শুধুমাত্র ২১ আগস্ট মামলায় আমার নামটি যেকোনোভাবে জড়ানোর জন্যই 'এমপি না বানিয়ে ফ্যাসিস্ট হাসিনা তার বিশ্বস্ত কর্মী আব্দুল কাহহার আকন্দকে এসপি' বানিয়েছে। অপ্রিয় বাস্তবতা হচ্ছে, একমাত্র মুফতি হান্নানের মুখ থেকে জোর করে 'আমার নাম' বের করে ২১ আগস্ট মামলায় আমাকে জড়ানো হয়েছে। এটি অবশ্যই তদন্তের নামে অনাচার ও একটি পরিকল্পিত ফরমায়েশী সাজা দেয়ার চক্রান্ত। তবে আমি একটি প্রশ্ন করতে চাই, যার মুখ থেকে আমার নাম বের করে ২১ আগস্ট মামলায় আমাকে জড়ানো হয়েছে, সেই মুফতি হান্নানকে অবশ্যই আদালতের কাঠগড়ায় আমার আইনজীবী 'ক্রস এক্সামিন' করার সুযোগ পাবে, এটিই আইনের নিয়ম। ২১ আগস্ট মামলায় আমার আইনজীবীকে আদালতের কাঠগড়ায় 'মুফতি হান্নান'কে 'ক্রস এক্সামিন' করার সুযোগ না দিয়ে কি কারণে অন্য একটি মামলায় মুফতি হান্নানকে তড়িঘড়ি করে ফাঁসি দেয়া হলো ? তারেক রহমান বলেন, ‘এই তথ্যগুলো বিভিন্নভাবে আপনাদের অনেকেই হয়তো অল্পবিস্তর জানেন। তারপরও বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের সামনে এইসব প্রশ্ন ও প্রসঙ্গ আমি আবারো তুলে ধরলাম। কারণ, বর্তমান মাফিয়া সরকার একদিকে আদালতকে ব্যবহার করে জাতীয় গণমাধ্যমে আমার বক্তব্য প্রচার বাধাগ্রস্থ করছে অপরদিকে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যাচার—অপপ্রচার—কুৎসা অব্যাহত রেখেছে। সুতরাং, সচেতন জনগণের সামনে এইসব তথ্যগুলো থাকুক।’
তিনি বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, সময়ের পরিক্রমায় সত্য উদ্ভাসিত হয়ে উঠবে তার আপন আলোয়। দেশের জনগণ বিশ্বাস করে, দেশকে তাবেদার রাষ্ট্রে পরিণত করার সুদূরপ্রসারী ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবেই দেশে বিদেশে জাতীয়তাবাদী শক্তির ইমেজ ক্ষুন্ন করতেই ২০০৪ সালে ২১ আগষ্টের ঘটনা ঘটানো হয়েছে। ২১ আগস্ট ছিল স্পষ্টতঃই দেশের জাতীয়তাবাদী শক্তির বিরুদ্ধে এক গভীর ষড়যন্ত্র। ২১ আগস্টের নৃশংস ঘটনাটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছিল না’। ‘একুশে আগস্ট’ আর ‘ওয়ান ইলেভেন’ একই সূত্রে গাঁথা। ২১ আগস্ট ছিল ২০০৭ সালের কথিত ‘ওয়ান ইলেভেন’ সৃষ্টির প্রাক—মহড়া।
‘এ প্রসঙ্গে পিলখানায় ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাকে নারকীয় কায়দায় হত্যার কথা তুলে ধরে তারেক রহমান বলেন, প্রতি বছর ২১ আগষ্টের জঘন্যতম ঘটনা নিয়ে রাষ্ট্রীয়ভাবে ব্যাপক আলোচনা হয়, নানারকম অনুষ্ঠান হয়। হতেই পারে। তবে ২১ আগষ্টের চেয়ে আরো ভয়াবহ ঘটনা ঘটেছিল ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে। পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহের নামে ৫৭ জন চৌকষ দেশপ্রেমিক সেনা কর্মকর্তাকে হত্যা করা হয়েছিল। আমার প্রশ্ন, কেন রাষ্ট্রীয় আয়োজনে প্রতিবছর পিলখানায় বর্বরতম সেনা হত্যাযজ্ঞ দিবসে কোনো আলোচনা হয় না ? আমি মনে করি, ২১ আগস্ট, ওয়ান ইলেভেন, পিলখানায় সেনা হত্যাযজ্ঞের একটি ঘটনাকে আরেকটি ঘটনা থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেখার সুযোগ নেই। বাংলাদেশের পক্ষের শক্তি, গণতন্ত্রের পক্ষের শক্তির সামনে, ৭৫ সালের ৭ নভেম্বরের পরাজিত অপশক্তির ষড়যন্ত্র এখন স্পষ্ট হয়ে পড়েছে। ফলে ঘুরে দাঁড়িয়েছে দেশের গণতন্ত্রকামী জনগণ। অপরদিকে বিশ্বের কোনো গণতান্ত্রিক শক্তিই এখন আর বাংলাদেশের মাফিয়া চক্রের অপকর্মের ভার বইতে রাজি নয়। তারেক রহমান দেশের জনগণকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, বাংলাদেশে গণতন্ত্র—মানবাধিকার—ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার চলমান আন্দোলন অচিরেই চূড়ান্ত বিজয় লাভ করবে ইনশাআল্লাহ।’
সাংবাদ সম্মেলনে রিজভী বলেন, তারেক রহমান বলেন, ‘দেশের ১৮ কোটি মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার, ১২ কোটি ভোটারের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য মাফিয়া চক্রের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন করছে বাংলাদেশের পক্ষের শক্তি, গণতন্ত্রের পক্ষের শক্তি, দেশপ্রেমিক জাতীয়তাবাদী শক্তি। আন্দোলনকে বাধাগ্রস্থ করতে মাফিয়া সরকার নির্যাতন নিপীড়ন হামলা মামলায় জড়িয়ে বিরোধী দল ও বিরোধী মতের নেতা—কর্মীদের দমিয়ে রাখার অপচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। তবে হামলা মামলা করে আন্দোলন দমিয়ে রাখা যায়না, সা¤প্রতিক বাংলাদেশ তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ। আমি এজন্য সর্বাগ্রে বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী—সাহসী—সংগ্রামী জনগণকে অভিনন্দন জানাই। আপনাদের সাহসী আন্দোলনে, মাফিয়া চক্রের বুকে কাঁপন ধরেছে। ইতোমধ্যেই তারা ভারসাম্য হারিয়ে আবোল তাবোল বকতে শুরু করেছে। ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা ছিল বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে দেশী—বিদেশী ষড়যন্ত্র। আজকেও ২১ আগস্ট নিয়ে অবান্তর, অসত্য, বিভ্রান্তিকর বক্তব্য রেখেছেন প্রধানমন্ত্রী। শেখ হাসিনা বিএনপি, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও দেশনায়ক তারেক রহমানকে গ্রেনেড হামলার জন্য দায়ী করে আবোল—তাবোল বক্তব্য রেখেছেন। আসলে এই মূহুর্তে আওয়ামী লীগের ঝুলিতে জনসমর্থন শুণ্যের কোঠায় বলেই বিকারগ্রস্ত হয়ে প্রতিহিংসামূলক বক্তব্য রাখছেন। হিংসার রাজনীতিতে ঠাসা আওয়ামী লীগ ও তার নেত্রী শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনা দেশকে বিপজ্জনক পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিতে চান। তবে বর্তমানে ঐকবদ্ধ জনগণ সকল প্রহসন ও মিথ্যাচারকে পদদলিত করে কতৃর্ত্ববাদের অবসান ঘটিয়ে অতিসত্বর গণতন্ত্রের যুগ শুরু করবে।

সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, নির্বাহী কমিটির সদস্য মেখ মোহাম্মাদ শামীম, আব্দুস সাত্তার পাটোয়ারী প্রমুখ।