সড়কের নৈরাজ্যে রাজনৈতিক প্রভাব জড়িত: নাহিদ
শনিবার (২১ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর রমনায় বাংলাদেশ প্রেস ইন্সটিটিউটে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন আয়োজিত সড়ক পরিবহন খাতে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থাপনা ও কাঠামোগত সংস্কার শীর্ষক জাতীয় সংলাপে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ মন্তব্য করেন।
প্রথম নিউজ, অনলাইন: সড়ক ও পরিবহন খাতে যে নৈরাজ্য চলছে, তার সাথে একটি পলিটিক্যাল (রাজনৈতিক) প্রভাব জড়িত বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম। সড়কে বিভিন্ন সময়ে দুর্ঘটনার সাথে জড়িত সমাজের উচ্চপর্যায়ের ব্যক্তিদের বিচার হয় না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
শনিবার (২১ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর রমনায় বাংলাদেশ প্রেস ইন্সটিটিউটে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন আয়োজিত সড়ক পরিবহন খাতে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থাপনা ও কাঠামোগত সংস্কার শীর্ষক জাতীয় সংলাপে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ মন্তব্য করেন।
নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘বুয়েটের একজন মারা গেল। একটা ধারণা যে সমাজের উচ্চপর্যায়ের সঙ্গে যারা আছেন তাদের বিচার হয় না, জবাবদিহিতা হয় না। এখানে সাধারণ মানুষদের জীবনটাই আসলে যায়। এই চিত্র আমাদের সমাজে আছে। এটার পরিবর্তন দরকার। সবাইকে বিচারের আওতায় আনা দরকার। এখানে কাঠামোগত সংস্কার প্রয়োজন। উন্নয়ন নীতিতে মৌলিক পরিবর্তন আনতে হবে।’
পরিবহন সেক্টরের দুর্নীতি চলমান আছে উল্লেখ করে উপদেষ্টা নাহিদ বলেন, ‘আগের দল দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ছিল আবার এখন আরেক দল রয়েছে। এই দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে। এখানে রাজনৈতিক দলগুলোর ভূমিকা প্রয়োজন। কারণ রাজনৈতিক কর্মীরাই এগুলোতে জড়িত।’
পরিবহন সেক্টরের সমস্যা বহুমুখী বলে মনে করেন উপদেষ্টা নাহিদ। তিনি বলেন, ‘এখানে দুর্নীতির সমস্যা রয়েছে। রাজনীতিকরণের সমস্যা রয়েছে। শিক্ষা ও জনসচেতনতার সমস্যা রয়েছে। আমাদের অদক্ষতা ও নিয়ম নীতি না মানার বাস্তবতা আছে। এখানে একটা সুবিধাভোগী গোষ্ঠী জড়িত। এখানে বহুমাত্রিক সমস্যা, তাই এটার সমাধানও চ্যালেঞ্জের। সব অংশীজনদের একত্রে আনতে হবে। এখানে রাজনৈতিক চাপ থাকবে।’
নাহিদ বলেন, ‘এখন রাস্তায় বের হয়ে মানুষ মারা গেলে সেটাকে কাঠামোগত হত্যাকাণ্ড বলা হচ্ছে। কারণ এটা প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতার কারণে হচ্ছে। এমন একটা ব্যবস্থা তৈরি করে রাখা হয়েছে-রাস্তায় মানুষ বের হলে মারা যেতে পারে। এখানে ব্যবস্থাপনাতেই সমস্যা রয়েছে। যে ধরনের প্রতিষ্ঠান সড়কের নিরাপত্তা দিতে পারে, সেটাই তৈরি হয়নি।’ উপদেষ্টা বলেন, ‘২০১৮ সালের কোটা সংস্কার ও নিরাপদ সড়ক আন্দোলন ছিল আমাদের জন্য মূল ভিত্তি। সে সময় স্কুল-কলেজের দুজন সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হলে এই আন্দোলন শুরু হয়।’
তিনি বলেন, বিগত সরকারের উন্নয়ন জনবান্ধন ছিল না বলেই মানুষ সুবিধা পায়নি। এগুলো কাঠামোগত উন্নয়ন দেখানো হচ্ছ। সেই সব উন্নয়ন শিক্ষা, স্বাস্থ্যের, নিরাপদ সড়কের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল না। ভবিষ্যতে জনবান্ধন উন্নয়নের জন্য সাধারণ মানুষের প্রয়োজনকে প্রাধান্য দিয়ে পলিসি ডেভেলপ করা হবে।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) চেয়ারম্যান মো. ইয়াসীন বলেন, ‘বিআরটিএ ও পুলিশ সড়কে শৃঙ্খলা আনতে হিমশিম খাচ্ছে। কিছুতেই নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে না। ফুটপাত দখলমুক্ত করার পরই আবার দখল হয়ে যাচ্ছে। সিটি কর্পোরেশনের সঙ্গে কথা বলেছি-সিটি করপোরেশন বলেছে-তারা সকালে দখল মুক্ত করলে আবার বিকেলে দখল হয়। তাহলে এমন দখল মুক্ত করে কিছু হচ্ছে না। এটা যেন সাস্টেইন করে সেটা করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘রাস্তায় কোনো পুরোনো গাড়ি থাকবে না। বিআরটিএর সব ম্যাজিস্ট্রেট আজ রাস্তায় রয়েছে। কালো ধোয়ামুক্ত গাড়ি চলাচলের দিকেও নজর দেওয়া হচ্ছে। ইলেকট্রনিক ভেইক্যাল হলে ভালো হবে। বিশ্ব ব্যাংকের সহায়তায় ভেইক্যাল ইন্সপেকশন সেন্টার করবে। তারা গাড়ির কালো ধোয়ার বিষয়টি দেখবে।’
জাতীয় সংলাপে অংশ নিয়েছেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্পোরেশনের (বিআরটিসি) চেয়ারম্যান মো. তাজুল ইসলাম, ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) নির্বাহী পরিচালক নীলিমা আখতার, বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ফারুক ওয়াসিফ, অ্যাক্সিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক আরমানা সাবিহা হকসহ অন্যান্যরা।
