সিলেট বিমানবন্দর সড়ক অবরোধ করে চা-শ্রমিকদের বিক্ষোভ
আজ রোববার বেলা ১১টা থেকে সিলেট ভ্যালির চা-শ্রমিকরা কাজে যোগ না দিয়ে ফের আন্দোলন শুরু করেন।
প্রথম নিউজ, সিলেট: দৈনিক মজুরি ১৪৫ টাকা প্রত্যাখ্যান করে ন্যূনতম ৩০০ টাকা করার দাবিতে আবারও আন্দোলনে নেমেছে সিলেটের চা-শ্রমিকরা। আন্দোলনের এক পর্যায়ে তারা সিলেট বিমানবন্দর সড়ক অবরোধ করে মিছিল ও সমাবেশ করেন। আজ রোববার বেলা ১১টা থেকে সিলেট ভ্যালির চা-শ্রমিকরা কাজে যোগ না দিয়ে ফের আন্দোলন শুরু করেন। আন্দোলন শুরুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চা-শ্রমিকের সন্তান ও আন্দোলনকারী দেবাশীষ গোয়ালা। তিনি বলেন, দুপুর ১টা থেকে সিলেট বিমানবন্দর সড়ক অবরোধ করে নানা ধরনের শ্লোগান দিতে থাকেন শ্রমিকরা।
তিনি আরও বলেন, চা-বাগান মালিকরা আমাদের সঙ্গে বৈষম্যমূলক আচরণ করছেন। ১২০ টাকা থেকে ২৫ টাকা বাড়িয়ে ১৪৫ টাকা করে আমাদের দয়া দেখাচ্ছেন তারা। কিন্তু আমরা কারও দয়া চাই না। আমরা আমাদের ন্যায্য দাবি চাই। বর্তমান যুগে কোথাও এই মজুরি নেই। আন্দোলন প্রত্যাহার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যেখানে শ্রমিকের অধিকার বাস্তবায়ন হয় নাই, সেখানে প্রত্যাহার নয় প্রত্যাখ্যান হওয়া জরুরি। তাই আমরা আমাদের দাবিতে অনড় অবস্থায় আবারও মাঠে নেমেছি। আন্দোলনরত আরেক চা-শ্রমিক বিষু লোহার বলেন, কতিপয় নেতাদের বশে এনে আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণা এক ধরনের প্রতারণা। আমরা ১৪৫ টাকা মজুরি নয়, ৩০০ টাকা মজুরির বাস্তবায়ন চাই।
৩০০ টাকা মজুরি দে, নইলে বুকে গুলি দে: আমরা সবাই শ্রমিক সেনা, ভয় করিনা বুলেট বোমা। ৩০০ টাকা মজুরি দে, নইলে বুকে গুলি দে- এমন বিভিন্ন শ্লোগানে শ্লোগানে ফের কর্মবিরতি শুরু করেছেন সিলেট ভ্যালির চা শ্রমিকরা। দৈনিক মজুরি ১৪৫ টাকা প্রত্যাখ্যান করে আবারও আন্দোলনে নেমেছেন সিলেটের চা শ্রমিকরা। ন্যূনতম ৩০০ টাকা মজুরি নির্ধারণ না হওয়া পর্যন্ত কাজে যোগ দেবেন না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন তারা। আজ রোববার সকাল থেকে নানা ধরনের প্ল্যাকার্ড ও নিজ শরীরে বিভিন্ন ধরনের শ্লোগান লিখে মাঠে নেমেছেন তারা। এ সময় নানা ধরনের শ্লোগান দিয়ে তারা সিলেট বিমানবন্দর সড়ক অপরোধ করে রাখেন।
তাদের দেওয়া উল্লেখযোগ্য শ্লোগান সমূহ হলো, বাধা আসবে যেখানে লড়াই হবে সেখানে। দুনিয়ার মজদুর এক হও লড়াই করও।১৪৫ টাকা মজুরি, মানি না মানবো না। ১৪৫ টাকা মজুরি প্রহসনমূলক জানিয়ে রানী গোয়ালা বলেন, মালিকরা কি আমাদের কষ্ট বুঝবে না? আমিরা হাড়ভাঙা খাটুনির জন্য তারা (মালিকপক্ষ) আরাম-আয়েশে থাকে। আমাদের প্রতি কি তাদের ন্যূনতম দায়িত্ববোধ নেই। তারা আমাদের সব দিক দিয়ে বঞ্চিত করে রেখেছে। আমরা ১৪৫ টাকা কোনো দিনই মানবো না। এর থেকে আমাদের গুলি খেয়ে মরে যাওয়া ভালো। আমরা যখন এমনিতেই মরছি তাহলে অমনিতে মরা ভালো।
চা শ্রমিকের সন্তান দেবাশীষ গোয়ালা বলেন, চা-বাগান মালিকেরা আমাদের সঙ্গে বৈষম্যমূলক আচরণ করছেন। ১২০ টাকা থেকে ২৫ টাকা বাড়িয়ে ১৪৫ টাকা করে আমাদেরকে দয়া দেখাচ্ছেন। কিন্তু আমরা কারও দয়া চাই না। আমরা আমাদের ন্যায্য দাবি চাই। বর্তমান যুগে কোথাও এই মজুরি নাই। এ সময় তিনি বলেন, যেখানে শ্রমিকের অধিকার বাস্তবায়ন হয় নাই, সেখানে প্রত্যাহার নয় প্রত্যাখ্যান হওয়া জরুরি। তাই আমরা আমাদের দাবিতে অনড় অবস্থায় আবারও মাঠে নেমেছি।
প্রসঙ্গত, শনিবার (২০ আগস্ট) বিকেলে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে অবস্থিত বিভাগীয় শ্রম দপ্তরের অফিসে চা-শ্রমিক ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠকে চা-শ্রমিকদের নতুন মজুরি ১৪৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়। পরে বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নৃপেন পাল ৩০০ টাকা মজুরির দাবিতে শ্রমিকদের চলমান কর্মবিরতি প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন।
এর আগে চলতি বছরের জুন মাসে বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়ন ও মালিকপক্ষের সংগঠন বাংলাদেশ চা সংসদের বৈঠক হয়। সেখানে শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ৩০০ টাকা করার প্রস্তাব দেন শ্রমিক নেতারা। কিন্তু মালিকপক্ষ ১৪ টাকা বাড়িয়ে ১৩৪ টাকা মজুরির প্রস্তাব দেয়। যে কারণে শ্রমিক নেতারা তা প্রত্যাখ্যান করেন। এরপর আরও এক মাস পার হয়ে যায়। মালিকপক্ষ কোনো সিদ্ধান্ত জানায়নি। এর প্রতিবাদে ৯-১২ আগস্ট পর্যন্ত টানা চার দিন প্রতিদিন দুই ঘণ্টা করে ধর্মঘট পালন করেন চা-শ্রমিকরা। তারপরও মালিকপক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনো কথা না বলায় ১৩ আগস্ট থেকে বাংলাদেশের সব চা-বাগানে অনির্দিষ্টকালের জন্য পূর্ণদিবস কর্মবিরতি শুরু করেন শ্রমিকরা।
Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:
https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews