‘সরকারের চাল না পেলে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে নদীতে নামতে বাধ্য হব’

ইলিশ ধরা নিষেধাজ্ঞার সাত দিন পেরিয়ে গেলেও এখনও পুনর্বাসনের চাল পাননি ভোলার বেশিরভাগ জেলে

‘সরকারের চাল না পেলে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে নদীতে নামতে বাধ্য হব’
‘সরকারের চাল না পেলে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে নদীতে নামতে বাধ্য হব’

প্রথম  নিউজ, ভোলা : ইলিশ ধরা নিষেধাজ্ঞার সাত দিন পেরিয়ে গেলেও এখনও পুনর্বাসনের চাল পাননি ভোলার বেশিরভাগ জেলে। অভাব-অনটন ও অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটছে বেকার জেলেদের। দেনা আর কিস্তি পরিশোধের দায় মাথায় নিয়ে কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন তারা। চাল না পেলে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে নদীতে নামতে বাধ্য হবে বলে জানিয়েছেন অনেক জেলে। 

মার্চ-এপ্রিল এ দুই মাস জাটকা সংরক্ষণ ও মাছের উৎপাদন বাড়াতে ভোলার মেঘনা ও তেতুলিয়া নদীর ১৯০ কিলোমিটার এলাকায় মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন সরকার। এ জেলায় ১ লাখ ৫৭ হাজার নিবন্ধিত জেলে রয়েছেন। নিবন্ধনের বাইরে রয়েছেন অর্ধলাখ জেলে। বরাদ্দকৃত ভিজিএফ-এর চাল দ্রুত তাদের মাঝে বিতরণের দাবি জানিয়েছেন জেলেরা। এছাড়া অনিবন্ধিত জেলেদের দাবি তাদেরকে নিবন্ধনের আওতায় আনাসহ দুই মাস এনজিওর কিস্তি বন্ধ রাখার দাবি অধিকাংশ জেলের।

মঙ্গলবার (৭ মার্চ) সকালে জেলার ভোলার খাল, তুলাতুলি মাছঘাটে, ইলিশ মাছঘাটে গেলে এ দাবিগুলোর কথা জানান জেলেরা।

ভোলার খাল মাছঘাটের জেলে মো. ফারুক বলেন, ২৫ বছর ধরে জেলে পেশায় আছি। সংসারে আমার এক ছেলে দুই মেয়ে আছে। নদীতে মাছ শিকার করে সংসার চালাই। নৌকা করতে  ১১/১২ লাখ টাকার মতো লাগছে। এতে ২ লাখ ৬০ হাজার টাকার লোন লইছি। তাতে প্রতি মাসে ৪৩ হাজার টাকা কিস্তি পরিশোধ করতে হয়। এই দুই মাস নদীতে মাছ ধরা নিষেধ। তাই এহন বাধ্য হয়ে অন্যের নৌকা মেরামতের কাজ করছি। তাতে দৈনিক ৫শ টাকা পাই। চিন্তায় আছি এই টাকা দিয়ে সমিতির কিস্তি টাকা পরিশোধ করমু না সংসারের জন্য চাল কিনমু। আমার জেলে কার্ড আছে। সরকার যদি এহন চাল দিত তাহলে উপকারে হতো। 

সদর উপজেলার শিপপুর ইউনিয়ন ৩ নম্বর ওয়ার্ডের জেলে মো. সাকিল (২৬) জানান, তিনি ১৫ বছর ধরে নদীতে মাছ ধরেন। কিন্তু এখনও জেলে কার্ড পায়নি। নদীতে অভিযান থাকায় তিনি এখন বেকার হয়ে পড়েছেন। তার সংসারে আড়াই বছরের একটি মেয়ে আছে। সরকার যদি তাদেরকে সহায়তা না করে তাহলে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে নদীতে নামতে বাধ্য হবেন তিনি।

ইলিশ মাছঘাটের জেলে হালান (৩০) জানান, নদীতে মাছ ধরার ওপরে ২ মাসের নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সরকার। কিন্তু সরকার যদি একটু সহায়তা না করে, তাড়াতাড়ি আমাদেরকে চাল না দেয় তাহলে আমরা নদীতে নামতে বাধ্য হব।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোল্লা এমদাদুল্ল্যাহ জানান, কিছু কিছু ইউনিয়নে ভিজিএফ বিতরণ সম্পন্ন হয়েছে। আর কিছু কিছু ইউনিয়নে এখনো প্রক্রিয়াধীন আছে। আমরা আশা করছি খুব দ্রুত ভিজিএফ-এর চাল বিতরণ সম্পন্ন হবে।

প্রসঙ্গত, ১ মার্চ থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত টানা এ দুই মাস ভোলার মেঘনা ও তেতুলিয়া নদীর ১৯০ কিলোমিটার এলাকায় মাছ ধরার ওপরে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এতে গত ৬ দিনে ৮ জেলেকে আটক করে ৩৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে এবং ৩৫ হাজার মিটার জাল ও ২শ কেজি মাছ জব্দ করেছে মৎস্য বিভাগ।

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel: