সরকার দেশের অর্থনীতিকে মহাবিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিয়েছে: মির্জা ফখরুল
প্রথম নিউজ, ঢাকা: বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সেক্টরে শনির আছর পড়েছে। যার কারণে দেশের অর্থনীতি মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়াতে পারছে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, বর্তমান আওয়ামী সরকার ২০০৯ সালে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেছে। যার পরিণতিতে আজ সমগ্র অর্থনীতি ভয়াবহ নৈরাজ্যকর অবস্থায় পতিত হয়েছে। বর্তমানে দেশের অর্থনীতির প্রতিটি প্রধান সূচকের (মূল্যস্ফীতি, নিম্নমুখী বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, নিম্নমুখী রেমিট্যান্স প্রবাহ, চলতি হিসাবের ঘাটতি, রাজস্ব ঘাটতি এবং বৈদেশিক মুদ্রার বিপরীতে টাকার দরপতন) অবস্থান এতটাই শোচনীয়, যা দেশের সামষ্টিক অর্থনীতিকে এক মহাবিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিয়েছে। অথচ বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক সংকট আগের তুলনায় অনেকটা কমেছে।
শুক্রবার রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, বিশ্ব অর্থনীতি গতি হারালেও থমকে যায়নি। অনেক দেশ মূল্যস্ফীতি কমাতে সফল হচ্ছে। কি ভয়ংকর ও বিপর্যয়কর অর্থনৈতিক অবস্থা থেকে শ্রীলঙ্কা কত দ্রুত ওভারকাম করতে শুরু করেছে। তারা বাংলাদেশের কাছ থেকে ধার নেওয়া কিছু ঋণ ইতিমধ্যে শোধও করেছে।
মূল্যস্ফীতির বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে শ্রীলঙ্কার মূল্যস্ফীতি রেকর্ড ছিল ৬৯.৮ শতাংশ, যা ২০২৩–এর আগস্টে নেমে হয়েছে মাত্র ২.১ শতাংশ। অর্থাৎ ১ বছরের মাথায় ৬৭ শতাংশ পয়েন্ট কমিয়ে এনেছে শ্রীলঙ্কা। অথচ আমাদের অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়ছে তো পড়ছেই। যেভাবে জোড়াতালি দিয়ে অস্বচ্ছ ও সমন্বয়হীনভাবে সমস্যাগুলোর সামাল দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে, তাতে অর্থনীতিতে অনিশ্চয়তা আরও বেড়েছে।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে ব্যাংকিং চ্যানেলে ডলারের দাম আরও বেড়েছে। এখন খোলাবাজারে (কার্ব মার্কেট) এক ডলার কিনতে গ্রাহকদের গুনতে হচ্ছে ১১৭ থেকে ১১৮ টাকা। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, ভবিষ্যতের জন্য ডলার বুকিং দিয়ে রাখলে এক বছর পর প্রতি ডলারে ১২৩ টাকা ৩৫ পয়সা পরিশোধ করতে হবে। বৈদেশিক মুদ্রার মজুতের পতনও ঠেকানো যাচ্ছে না। রিজার্ভ পতনে বিপর্যয়ের মাস সেপ্টেম্বর। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে রিজার্ভ এখন ২১ বিলিয়ন ডলারে নেমেছে। আর আইএমএফ–এর হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে নিট রিজার্ভ ১৭ বিলিয়ন ডলার।
প্রবাসী আয় নিয়ে বিএনপির মহাসচিব বলেন, দেশে টানা ৩ মাস ধরে প্রবাসী আয় কমেছে। ৪১ মাসের মধ্যে সেপ্টেম্বরে সর্বনিম্ন ১৩৪ কোটি ডলার। গত ৩ বছরের মধ্যে সেপ্টেম্বরে একক মাসে সর্বনিম্ন রেমিট্যান্স এসেছে। প্রতি মাসে যেভাবে বৈদেশিক মুদ্রার মজুত কমছে, তাতে বড় ধরনের সংকটের দিকে এগোচ্ছে দেশের অর্থনীতি। ডলারের অভাবে এলসি খুলতে পারছেন না ব্যবসায়ী ও শিল্প মালিকেরা।
বিএনপির এই নেতা বলেন, হতদরিদ্র মানুষ পেট ভরে দুবেলা খেতে পারে না, অন্যদিকে আওয়ামী স্বৈরশাসকেরা উন্নয়নের গালগল্প করে দেশটিকে ঋণের জালে জর্জরিত করে দেউলিয়ার পথে ঠেলে দিয়েছে। উন্নয়নের নামে আওয়ামী লীগ সরকারের সর্বগ্রাসী দুর্নীতি, আর ঋণ করে ঘি খাওয়ার পরিণতিতে দেশ এখন প্রায় ২০ লাখ কোটি টাকা ঋণের চাকায় পিষ্ট। কিন্তু সিদ্ধান্ত গ্রহণে বিলম্ব, ভ্রান্তনীতি গ্রহণ, নীতির সমন্বয়হীনতা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির অভাব, সর্বোপরি লাগামহীন দুর্নীতির কারণে বাংলাদেশ সংকট থেকে বের হতে পারছে না।