গণতন্ত্র ও মানুষের অধিকার ফিরিয়ে আনতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিকল্প নেই: দুদু

গণতন্ত্র ও মানুষের অধিকার ফিরিয়ে আনতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিকল্প নেই: দুদু

প্রথম নিউজ, ঢাকা: বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেছেন,আমরা আওয়ামী লীগকে শত্রু মনে করি না, আমরা আওয়ামী লীগকে প্রতিদ্বন্দি মনে করি। আমরা আওয়ামী লীগকে পরাজিত করতে চাই ভোটের মধ্য দিয়ে। আমরা নতুন আদর্শিক মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে চাই দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে ধানের শীষের বিজয়ের মধ্য দিয়ে। আমরা কাউকে নিশ্চিহ্ন করতে চাই না, ধ্বংস করতে চাই না।

শুক্রবার (১২ অক্টোবর) প্রেসক্লাবের সামনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী সংগ্রাম পরিষদ কর্তৃক অবৈধ সরকারের পদত্যাগ, তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা ও খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে আয়োজিত অবস্থান কর্মসূচিতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

দুদু ব‌লেন,বেগম খালেদা জিয়ার সময় দেশে নিরাপত্তা ছিল। এমনকি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সে সময় তার (খালেদা জিয়া) বিরুদ্ধে যে আন্দোলন-সংগ্রাম করেছিল, সেজন্য এমন কোনো পদক্ষেপ দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া নেয়নি, যে তাদের বিচার করে জেলখানায় পাঠিয়েছিল। তখনও গাড়িতে আগুন দেওয়া হতো, মানুষ মারা গেছে, লুটপাট করা হয়েছে, দুর্নীতি করা হয়েছে। এমন ঘটনা সে সময় সংগঠিত হয়েছে, যার প্রতিটির বিচার করলে সে সময় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী এবং আন্দোলনকারীদের চিহ্নিত করে বিচার করে জেল দেওয়া যেতো। কিন্তু সহনশীল নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া কিছুই করেননি।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে কোনো সরকারের সময় যদি সহনশীল অবস্থা থেকে থাকে, সেটি বেগম খালেদা জিয়ার সরকারের সময় ছিল। তিনি (খালেদা জিয়া) জীবনে কখনো কোনো নির্বাচনে পরাজিত হননি। তাকে আজ পাঁচটি বছর জেলখানায় আটকে রাখা হয়েছে তথাকথিত একটি মিথ্যা মামলায় বিচারের নামে দন্ডিত বলে।

বিচার বিভাগ নিয়ে কথা বলা খুব কঠিন মন্তব্য করে ছাত্রদ‌লের সা‌বেক এই সভাপ‌তি বলেন, বিচার বিভাগ নিয়ে সত্য-মিথ্যা বলা যায় না। তারা খুব মাইন্ড করে। কিন্তু গত পরশু দিন একটি রায় দেখলাম, সকালে দন্ডিত, দুপুরে মামলার জামিন এবং সন্ধ্যা বা বিকালে সেটি খারিজ। কোনো এক সময় জজ ছিলেন, যিনি এই সুবিধা পেয়েছেন। আরেকটি মামলায় দেখলাম শুধু সমালোচনা করার কারণে একজন মেয়রকে জেল দেওয়া হয়েছে এক মাস, সঙ্গে এক লক্ষ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। কোনটা কি কারণে হচ্ছে সেটি ভেবে নেওয়াই কঠিন। সেজন্য আদালত, বিচার-বিভাগ, বিচারালকে আমেরিকা ভিসানীতির আওতায় এনেছে কিনা তা আমি জানি না।

বিএনপির তত্ত্বাবধায়ক সরকার চাওয়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, বর্তমান সরকার প্রধান সংবাদ সম্মেলনে প্রধান প্রতিদ্বন্দী ও তার পরিবার সম্পর্কে যেভাবে আক্রমণাত্মক কথা বলেছেন, উপেক্ষা করেছেন, ঘৃণা প্রকাশ করেছেন, তাতে বুঝা যায় তিনি তার প্রতিপক্ষকে শত্রু মনে করেন, প্রতিদ্বন্দি মনে করেন না। সুতরাং তার ক্ষমতার চেয়ারে বসে থাকা অবস্থায় কোনো নির্বাচন স্থিতিশীল, স্বাভাবিক, গ্রহণযোগ্য হবে এটা বলা যায় না।

তিনি আরো বলেন, যে সংকট বাংলাদেশে তৈরি হয়েছে, যে সংকটের কারণে পুরো পশ্চিমা বিশ্ব আমাদের উপর নাখোশ হয়েছে, সেটি স্বাভাবিক করতে হলে, বাংলাদেশে গণতন্ত্র-স্বাধীনতা-মানুষের অধিকার ফিরিয়ে আনতে হলে, ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কোনো বিকল্প নেই। এই কেয়ারটেকার সরকার যত তাড়াতাড়ি বর্তমান সরকার পুণঃপ্রতিষ্ঠা করবে, তত তাড়াতাড়ি অনেক কিছুর মিমাংসা হয়ে যাবে। এটি তারা বিবেচনায় নিতে পারে।

সা‌বেক এই সংসদ সদস‌্য বলেন, আমরা আওয়ামী লীগকে শত্রু মনে করি না, আমরা আওয়ামী লীগকে প্রতিদ্বন্দি মনে করি। আমরা আওয়ামী লীগকে পরাজিত করতে চাই ভোটের মধ্য দিয়ে। আমরা নতুন আদর্শিক মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে চাই দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে ধানের শীষের বিজয়ের মধ্য দিয়ে। আমরা কাউকে নিশ্চিহ্ন করতে চাই না, পতন ঘটাতে চাই না, ধ্বংস করতে চাই না।

কৃষকদ‌লের সা‌বেক এই আহবায়ক বলেন, ওবায়দুল কাদের বলেনছেন, বিএনপি ক্ষমতায় এলে এক রাতে আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করে দেবে। ওবায়দুল কাদের সাহেব এত ভয় পাওয়ার কিছু নেই। বিএনপি সব সময় গণতন্ত্র, নির্বাচন, আন্দোলনে বিশ্বাসী। আমরা আপনাদেরকে পরাজিত করতে চাচ্ছি, ধ্বংস বা নিশ্চিহ্ন করতে চাচ্ছি না।

জাতীয়তাবাদী সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি গোলাম সরোয়ার সরকারের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল আলম মাহমুদের সঞ্চালনায় অবস্থান কর্মসূচিতে বিএনপির গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক অধ্যক্ষ সেলিম ভূইয়া,বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক কাজী রওনকুল ইসলাম টিপু,নির্বাহী কমিটির সদস্য ইকবাল হোসেন শ্যামল,ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রদলের সহ-সভাপতি জসিম শিকদার রানা,কৃষকদলের সহ-সাধারণ সম্পাদক এম জাহাঙ্গীর আলম প্রমুখ বক্তব্য দেন।