সরকারি চাকরিজীবীদের ভাতা বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি, থাকছে যেসব সুবিধা

প্রথম নিউজ, অনলাইন: সরকারি চাকরিজীবীদের বিশেষ সুবিধা (মহার্ঘ ভাতা) বাড়িয়ে নতুন প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, বিশেষ সুবিধা বাবদ চাকরিরত কর্মচারী-কর্মকর্তারা মাসে এক হাজার টাকার বদলে কমপক্ষে এক হাজার ৫০০ টাকা এবং পেনশনভোগীরা ৫০০ টাকার বদলে কমপক্ষে ৭৫০ টাকা পাবেন। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ ৩ জুন এ–সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে। সোমবার (২৩ জুন) তা সংশোধন করে অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রবিধি অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব দিলরুবা শাহীনার স্বাক্ষরে নতুন এ প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮ এর ১৫ ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে জাতীয় বেতনস্কেলের আওতাভুক্ত সরকারি-বেসামরিক, স্বশাসিত ও রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ এবং পুলিশ বাহিনীতে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং পুনঃস্থাপনকৃত পেনশনারসহ পেনশনভোগী ব্যক্তিদের জন্য ১ জুলাই হতে ‘বিশেষ সুবিধা’ প্রদান সংক্রান্ত অর্থ বিভাগের গত ৩ জুনের নং-০৭.০০.০০০০.১৭৩.৩৪.০৮৩.২৪-১৪৭ নম্বর প্রজ্ঞাপনটি নিম্নরূপ সংশোধন করা হয়েছে:
ক) প্রজ্ঞাপনের ১ম অনুচ্ছেদের এ ‘বিশেষ সুবিধা’ চাকরিরতদের ক্ষেত্রে ন্যূনতম এক হাজার টাকা এবং পেনশনভোগীদের ক্ষেত্রে ন্যূনতম ৫০০ টাকা হারে প্রদেয় হবে।’ এই শব্দগুচ্ছের পরিবর্তে নিচের ভাষ্যটি প্রতিস্থাপিত হবে:
‘এ ‘বিশেষ সুবিধা’ চাকরিরতদের ক্ষেত্রে ন্যূনতম ১৫’শ টাকা এবং পেনশনভোগীদের ক্ষেত্রে ন্যূনতম ৭৫০ টাকা হারে দেওয়া হবে।
খ) প্রজ্ঞাপনের ২ নম্বর অনুচ্ছেদের উপ-অনুচ্ছেদ (গ) এর পরিবর্তে প্রতিস্থাপন করা হবে:
‘(গ) পুনঃস্থাপনকৃত পেনশনভোগীসহ সরকার হতে পেনশন গ্রহণকারী যেসব কর্মচারীর প্রাপ্য মাসিক পেনশনের পরিমাণ ১৭ হাজার ৩৮৯ টাকা বা তদূর্ধ্ব, তারা ‘বিশেষ সুবিধা’ ভাতা হিসেবে ১০ শতাংশ হারে এবং যাদের প্রাপ্য মাসিক পেনশন ১৭ হাজার ৩৮৮ টাকা বা তদনিম্ন, তারা ১৫ শতাংশ হারে ‘বিশেষ সুবিধা’ ভাতা পাবেন।
উপদেষ্টা পরিষদে রোববার ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট অনুমোদনের পর অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ এ বিষয়ে সংশোধনী আনার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছিলেন। সিদ্ধান্তের এক দিনের মাথায় প্রজ্ঞাপন জারি হলো।
এ প্রজ্ঞাপনের পাশাপাশি অর্থ বিভাগ আজ চার সচিবের কাছে আলাদা তিনটি চিঠিও পাঠিয়েছে। অর্থ বিভাগ একটি চিঠি প্রতিরক্ষাসচিবকে এবং আরেকটি চিঠি আইন ও বিচার বিভাগের সচিবকে দিয়েছে। অন্যটি পাঠানো হয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিবের কাছে।
প্রতিরক্ষা সচিবের উদ্দেশে পাঠানো চিঠিতে যৌথ বাহিনী নির্দেশনাবলির (জেএসআই) আওতায় বেতন-ভাতা গ্রহণকারী ও পেনশনভোগীদের বিশেষ সুবিধা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়, ওয়ারেন্ট অফিসার বা সমতুল্য পদবি থেকে তদূর্ধ্ব পর্যায়ের সব সদস্য ও ধর্মীয় পরামর্শদানকারী কর্মকর্তারা মূল বেতনের ১০ শতাংশ হারে বিশেষ সুবিধা পাবেন। সার্জেন্ট ও সমতুল্য পদবির এবং তাদের নিচের পর্যায়ের কর্মচারীরা পাবেন মূল বেতনের ১৫ শতাংশ বিশেষ সুবিধা। জেএসআইয়ের আওতায় পেনশনভোগীরা বিশেষ সুবিধা পাবেন সরকারি বেসামরিক কর্মচারীদের মতোই।
আইন ও বিচার বিভাগের সচিবের উদ্দেশে পাঠানো চিঠিতে বিশেষ সুবিধা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস (বেতন ও ভাতা) আদেশ, ২০১৬ অনুযায়ী। এ চিঠিতে ১০ শতাংশ ও ১৫ শতাংশের কথা আলাদা করে বলা নেই। চিঠিতে মূল বেতনের ১০ শতাংশ হারে বিশেষ সুবিধা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
আইন ও বিচার বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস (বেতন ও ভাতা) আদেশ অনুযায়ী যারা বেতন-ভাতা পান, তারা চাকরি শুরুই করেন উচ্চতর গ্রেডে। তারা এখন ১০ শতাংশ হারে বিশেষ ভাতা পাবেন। এর বাইরে যারা কাজ করছেন, তারা মন্ত্রণালয়ের কর্মচারী, যারা ১৫ শতাংশ বিশেষ ভাতাই পাবেন।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিবের কাছে পাঠানো চিঠিতে অর্থ বিভাগ এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বিশেষ সুবিধা দেওয়ার কথা বলেছে।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বেসরকারি মাদ্রাসা ও বেসরকারি কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত জাতীয় বেতনকাঠামোর সঙ্গে তুলনীয় গ্রেড ৯ থেকে তার ওপরের গ্রেডের শিক্ষক-কর্মচারীরা পাবেন ১০ শতাংশ হারে। আর গ্রেড ১০ থেকে তার নিচের গ্রেডের শিক্ষক-কর্মচারীরা পাবেন ১৫ শতাংশ হারে। তবে কেউই এক হাজার ৫০০ টাকার নিচে পাবেন না।
বিচার বিভাগ, যৌথ বাহিনী এবং এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের জন্য ২০২৩ সালের ১৮ জুলাই জারি করা অর্থ বিভাগের আদেশগুলো আজ বাতিল করা হয়েছে বলে তিন চিঠিতে বলা হয়েছে।