সমস্ত ক্ষমতা সরকার প্রধানের হাতে কুক্ষীগত থাকায় জনগণ অধিকার বঞ্চিত হয়েছে : ড. আকবর আলী

ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ বলেন, যে কোনো শাসন ব্যবস্থার পূর্বশর্ত হলো শাসন কাঠামোর সর্বস্তরে কার্যকর জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা। জবাবদিহিতা নিশ্চিত না হলে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো দুর্বল হয়ে পড়ে।

সমস্ত ক্ষমতা সরকার প্রধানের হাতে কুক্ষীগত থাকায় জনগণ অধিকার বঞ্চিত হয়েছে : ড. আকবর আলী

প্রথম নিউজ, ঢাকা: দেশের সমস্ত ক্ষমতা সরকার প্রধানের হাতে কুক্ষীগত থাকায় জনগণ তাদের অধিকার বঞ্চিত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. আকবর আলী খান।  

নাগরিক সংগঠন সুজন-সুশাসনের জন্য নাগরিক-এর অষ্টম জাতীয় সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। আজ শনিবার ঢাকার কাকরাইলে অবস্থিত ইন্সটিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স-এ অনুষ্ঠিত হয়। সকাল ১০ টায় সমবেত কন্ঠে জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার মধ্যে দিয়ে সম্মেলনের শুভ সূচনা হয়। সুজন সহসভাপতি ড. হামিদা হোসেনের সভাপতিত্ত্বে অনুষ্ঠিত সম্মেলনটির শুভ উদ্ভোধন ঘোষণা করেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ। 
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. আকবর আলী খান বলেন, সকল গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সিভিল সমাজ আছে, যার কাজ হলো জনগণের দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্লেষণ তুলে ধরা। সরকার বলছে, সুজন শুধু সরকারের সমালোচনা করে; সুজন যদি সরকারের প্রশংসা করে তাহলে সমালোচনা করবে কে? দেশে অনেক শক্তিশালী নাগরিক সংগঠন আছে, কিন্তু সুজন হলো একমাত্র নাগরিক সংগঠন যার তৃণমূলে সংগঠন রয়েছে। বাংলাদেশে গণতন্ত্র এখন অনেকগুলো চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। প্রথমত, সরকার গঠিত হয় ভোটের সংখ্যাধিক্যের ভিত্তিতে। পৃথিবীর অনেক দেশ এই পদ্ধতি পরিহার করে প্রপোরশনাল মেজরিটিকে গ্রহণ করছে। দ্বিতীয়ত, আমাদের এককক্ষীয় সংসদীয় ব্যবস্থা। দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ থাকলে সংসদে ভিন্নমতের প্রতিফল হয়। তৃতীয়ত, আমাদের দেশে সমস্ত ক্ষমতা একজনের হাতে কুক্ষীগত। চতুর্থত, আমাদের সরকার প্রধান আবার দলীয় প্রধান। তাকে রাজনৈতিক দল টিকিয়ে রাখার দিকে নজর হয়। ফলে জনগণ অধিকার বঞ্চিত হয়। এসবের কারণে আমাদের নানা সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। এর মধ্যে একটি হলো সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে না। আমাদের নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারছে না। তারা সাহসও দেখাতে পারছেন না। গ্রিসের এক দার্শনিকের একটি কথা আছে- সুখী হওয়ার জন্য আমাদের স্বাধীন হতে হবে, আর স্বাধীন হতে হলে সাহসী হতে হবে। আমি সুজনকে সাহসিকতার সাথে তাদের কাজ অব্যাহত রাখার জন্য  আহ্বান জানাচ্ছি।  

ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ বলেন, যে কোনো শাসন ব্যবস্থার পূর্বশর্ত হলো শাসন কাঠামোর সর্বস্তরে কার্যকর জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা। জবাবদিহিতা নিশ্চিত না হলে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো দুর্বল হয়ে পড়ে। সুজন -এর মতো সংগঠনের নাগরিক সক্রিয়তা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের পেছনে মূলত কাজ করেছে ব্যক্তি উদ্যোগ। বাংলাদেশের মানুষ সাধ্যের মধ্যে যে কোনো উন্নয়ন ধারণা সাদরে গ্রহণ করেছে। কিন্তু বাংলাদেশে সামাজিক উদ্যোগের ক্ষেত্রে পিছিয়ে আছে। সুজন এক্ষেত্রে অনেক বড় ভূমিকা পালন করছে। 

সুজন স¤পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, আমরা ঔপনিবেশিক শাসন থেকে একবার স্বাধীন হয়েছি, পাকিস্তানি শাসন থেকে একবার স্বাধীন হয়েছি। দুইবার স্বাধীন হলেও দুর্ভাগ্যক্রমে আমরা এখনো নাগরিকত্ববোধ তৈরি করতে পারিনি। আমরা নাগরিক হতে পারিনি, আমরা কেবল হয়েছি পেট্রন ক্লায়েন্ট। নাগরিকরা হলো ক্লায়েন্ট এবং রাজনৈতিক নেতা হলো পেট্রন। আমরা যা পাই তা মূলত পাই রাজনৈতিক নেতাদের অনুগ্রহের কারণে, আমাদের অধিকার হিসেবে পাই না। সুজন-এর সৃষ্টি হয়েছে বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে নাগরিকতা ও নাগরিকত্ববোধ তৈরির উদ্দেশ্যে। 

সুজনের নির্বাহী সদস্য বিচারপতি আব্দুল মতিন বলেন, সুজন রাষ্ট্রের তৃতীয় স্তম্ভ। সিভিল সোসাইটি সংগঠন হিসেবে রাষ্ট্রের বিভিন্ন কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করে চলেছে সুজন। সুজন-এর অনেক গুরত্বপূর্ণ অর্জন রয়েছে, যার মধ্যে একটি হলো নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী প্রার্থীদের আটটি তথ্য প্রদানের বিধান প্রণয়নে সুজন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। 

সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার ড. এ টি এম শামসুল হুদা বলেন, দেশে যখন সব প্রতিবাদী সংগঠন গুটিয়ে যাচ্ছে সেখানে সুজন-ই একমাত্র তাদের প্রতিবাদ অব্যাহত রেখেছে। সুশাসন গণতন্ত্রের একটি বড় স্তম্ভ। দেশে সুশাসনের অবক্ষয় হলে গণতন্ত্র কোত্থেকে থাকবে। সুশাসন রক্ষায় তাই সবাইকে কাজ করে যেতে হবে। আরেকটি বিষয় হলো দুর্নীতির বিস্তার। তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহারের ফলে কিছু কিছু ছোটখাটো দুর্নীতি কমে এসেছে, কিন্তু বড় বড় দুর্নীতি আরো আকড়ে ধরেছে। এ দুর্নীতি তথ্য প্রযুক্তি দিয়ে বন্ধ করা যাবে না। এর জন্য সুজন-এর মতো সংগঠনকে কাজ করে যেতে হবে। 
সুজনের সম্মেলনে আরো বক্তব্য রাখেন সুজন  সহস¤পাদক জাকির হোসেন, কোষাধ্যক্ষ সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার আহমেদ, ড. তোফায়েল আহমেদ, আলী ইমাম মজুমদার, অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, ড. শাহনাজ হুদা, প্রকৌশলী মুসবাহ আলীম, অধ্যাপক মুহাম্মদ সিকান্দার খান, ফারুক মাহমুদ চৌধুরী, সফি উদ্দিন আহমেদ, আকবর হোসেন, অধ্যাপক গাজী জাহিদ হোসেন। শোকপ্রস্তাব পাঠ করেন সুজন জাতীয় কমিটির সদস্য একরাম হোসেন। সম্মেলনটি সঞ্চালনা করেন সুজন কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার।   

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:

news.google.com

https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews

https://youtube.com/prothom