সংবিধান নিয়ে তামাশা করছে সরকার : নজরুল ইসলাম
বর্তমান সরকার সংবিধান নিয়ে তামাশা করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। আজ শুক্রবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এক মানববন্ধন কর্মসূচিতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এ মন্তব্য করেন।
প্রথম নিউজ, ঢাকা: বর্তমান সরকার সংবিধান নিয়ে তামাশা করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। আজ শুক্রবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনেদিনকাল বন্ধসহ অন্যান্য বন্ধ মিডিয়ি খুলে দেওয়ার দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচিতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এ মন্তব্য করেন।
নজরুল ইসলাম খান বলেন, আগামী দিনে আমরা বিজয়ী হব। যেসব পত্রিকা আওয়ামী লীগ অন্যায়ভাবে বন্ধ করেছে, সব খুলে দেয়া হবে। যেসব টিভি চ্যানেল বন্ধ করা হয়েছে সেগুলোও খুলে দেয়া হবে। ইনআশাল্লাহ।
তিনি আরও বলেন, কী শুরু করেছেন আপনারা (সরকার)? সংবিধানের কথা বলেন। সংবিধান নিয়ে তো আপনারা তামাশা করতেছেন। আপনারা সংবিধানে লিখে রাখেন সমাজতন্ত্র কায়েম করবেন আর চর্চা করেন মুক্তবাজার অর্থনীতি। এই দুইটা কী এক সঙ্গে যায়। বইতে লিখে রাখবেন, রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম। আবার বলবেন আপনারা ধর্ম নিরপেক্ষ। এই কী যায়? আপনারা যে সংবিধান নিয়ে রঙ-তামাশা করেন এ সংবিধানের দোহাই দিয়ে জনগণের আন্দোলন প্রতিহত করতে চান। অসম্ভভব। পারবেন না। কেউ পারে নাই। আপনারাও পারবেন না। ইনশাআল্লাহ আগামী দিনে আমরা এগিয়ে যাব।
সরকার যেসব সংবাদপত্র-টিভি চ্যানেল ‘অন্যায়ভাবে বন্ধ করছে’ক্ষমতার পরিবর্তনের পর তা খুলে দেওয়া হবে বলে অঙ্গীকার করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির এ সদস্য।
যারা টিভি চ্যানেলে বসে বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া উল্টা-পাল্টা সব প্রচারণা করছেন কিংবা সরকারের পক্ষে নির্লজ্জ দালালি করছেন তা ‘সৎ সাংবাদিকতার স্বার্থে বন্ধ’করা উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি।
‘মানুষ এখন ভয় পায় না’মন্তব্য করে নজরুল ইসলাম খান বলেন, লাখো মানুষের রক্তের বিনিময় যে দেশটা আমরা অর্জন করেছি সেই দেশটা ওরা শেষ করে ফেলবে, আর আমরা বসে থাকব, এটা হতে পারে না। আজকাল সারা দেশের মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। মানুষ আগে ভয় পেত এখন আর ভয় পায় না।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের (বিএসপিপি) উদ্যোগে ‘মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর নগ্ন হস্তক্ষেপ বন্ধ এবং দৈনিক দিনকালসহ বন্ধ মিডিয়া খুলে দেওয়া, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ সব কালাকানুন বাতিলের দাবিতে এ পেশাজীবী সমাবেশ হয়।
নজরুল বলেন, গত কয়েকটি উপ-নির্বাচনে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ভোট পড়েছে ২৪ থেকে ২৫ ভাগ। পরে নির্বাচন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, আওয়ামী লীগেরও অনেক কর্মী ভোট দিতে যায়নি। কারণ, সারাদেশের মানুষের মতো তারাও বিশ্বাস করে, ভোট দেয়া-না দেয়া একই কথা। প্রশ্ন রেখে নজরুল আরো বলেন, এ দেশে ‘৭৫ সালে যারা একদলীয় স্বৈরশাসনব্যবস্থা কায়েম করেছিল, ওই সরকারের একজন মন্ত্রী গলা উঁচু করে বলছেন, না না, একদল না। আমরা সব দল নিয়েই জাতীয় সরকার গঠন করেছিলাম। কিন্তু প্রশ্ন হলো, ওই সময় কি বাংলাদেশে আরো কোনো রাজনৈতিক দল ছিল?
আর কোনো দল ছিল না। বরং হয় বাকশাল না হয় নকশাল করেছিল। গেল ১৪ বছরে আওয়ামী লীগ সেটারই বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। বহু রাজনৈতিক দল আছে কিন্তু তাদের কার্যক্রম করতে দেয়া হয় না। নজরুল খান বলেন, চাটার দল সব খায়, যিনি বলেছিলেন, তিনি তো আর নেই। কিন্তু চাটার দল তো রয়েছে। যেখানে যা পায়, তারা সব খায়, কাবিখা, গরিব মানুষের ভাতা, শেয়ার মার্কেট ও ব্যাংক সব খেয়েছে। এখন বাংলাদেশ ব্যাংকও খাচ্ছে।
বিএনপির এ সিনিয়র নেতা বলেন, এদেশের মানুষ এখন আর ভয় পায় না। তারা দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলা শুরু করেছে। আওয়ামী লীগ বইয়ে লেখে, সমাজতন্ত্র কায়েম করবে। অথচ প্রকাশ্যে চর্চা করে মুক্তবাজার অর্থনীতি। বইতে লেখে, রাষ্ট্র ধর্ম ইসলাম। কিন্তু চর্চা করবেন ধর্মনিরপেক্ষতা। এগুলো আপনাদের তামাশা। আপনারা যে সংবিধান নিয়ে তামাশা করেন, ওই সংবিধান দোহাই দিয়ে কি আপনারা জনগণের আন্দোলন প্রতিহত করতে চান! অসম্ভব। কেউ পারেনি, আপনারা পারবেন না। ইনশাআল্লাহ, আগামী দিনে আমরা বিজয়ী হব। যেসব পত্রপত্রিকা আপনারা অন্যভাবে বন্ধ করেছেন। সব পত্রিকা খুলে দেয়া হবে। যেসব টিভি চ্যানেল বন্ধ করেছেন, সেগুলো খুলে যাবে। ইনশাল্লাহ।
ডা এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, সাগর রুনি হত্যার পর ৫০ জন সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে। আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে মামলা দিয়ে দেশের বাইরে থাকতে বাধ্য করা হয়েছে। এই আওয়ামী লীগ একেকবার একেক চেতনার কথা বলে। কখনো বলে ভাষার চেতনার কথা। কখনো বলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কথা। আওয়ামী লীগ আইনের শাসনের কথা বললেও তারা তাতে বিশ্বাসী না। আমরা এ সমাবেশে যারা বসে আছি, কেউ নিরাপদ না। যেমন নিরাপদ ছিলেন না কাউন্সিলর চৌধুরী আলম, ইলিয়াস আলী, মাহমুদুর রহমান, আমার দেশ।
মিডিয়ার উদ্দেশে তিনি বলেন, যদি সত্য প্রকাশ করেন, তবেই আপনাদের পাশে জনগণ থাকবে। কারণ, কে কখন বন্ধ হয়, তা কেউ জানে না। যেমন দিগন্ত টিভি, ইসলামিক টিভি এ সরকারের গ্রাসের মুখে পড়ে আজ বন্ধ।
সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের আহ্বায়ক অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেনের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব কাদের গণি চৌধুরীর সঞ্চালনায় মানববন্ধন কর্মসূচিতে দৈনিক দিনকালের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী অ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, পেশাজীবী নেতা অধ্যাপক সিরাজ উদ্দিন আহমেদ, সাংবাদিক আবদুল হাই শিকদার, এম এ আজিজ, অধ্যাপক লুতফর রহমান, অধ্যাপক গোলাম হাফিজ কেনেডি, অধ্যাপক শামসুল আলম সেলিম, অধ্যাপক নুরুল ইসলাম, রফিকুল ইসলাম, আমিরুল ইসলাম কাগজী, দিনকালের বার্তা সম্পাদক রাশেদুল হক প্রমুখ বক্তব্য দেন। এ সময় অধ্যাপক ড. আবুল কালাম আজাদ, কৃষিবিদ এ কে এম জোনায়েদ উল নুর টিটু, যুব-জাগপার সভাপতি মীর আমির হোসেন আমু উপস্থিত ছিলেন।
Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel: