শ্রীলঙ্কায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ২১ সেপ্টেম্বর
এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
প্রথম নিউজ, অনলাইন ডেস্ক: প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেছে শ্রীলঙ্কা। দেশটিতে আগামী ২১ সেপ্টেম্বর নির্বাচনের তারিখ চূড়ান্ত করা হয়েছে। শুক্রবার শ্রীলঙ্কার সরকারি এক বিজ্ঞপ্তিতে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হয়। সম্প্রতি অর্থনৈতিক দিক থেকে খুবই বাজে পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে এশিয়ার ওই দেশটি। ভঙ্গুর অর্থনীতিকে সচল করতে এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন এর আগের যে কোনো নির্বাচনের চেয়ে অধিক গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
এতে বলা হয়, নির্বাচনে মনোনয়ন জমা দেয়ার শেষ তারিখ আগামী ১৫ আগস্ট। দেশটির বর্তমান প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে নির্বাচন কমিশনে অ-ফেরতযোগ্য জামানত প্রদানের মাধ্যমে প্রথম প্রার্থী হয়েছেন বলে জানিয়েছে তার কার্যালয়। ২০২২ সালের জুলাই মাসে শ্রীলঙ্কার ক্ষমতা গ্রহণ করেন ৭৫ বছর বয়সী বিক্রমাসিংহ। সেসময় দেশটির আর্থিক সঙ্কটের চরম পর্যায়ে উপনীত হয়েছিল। যারফলে দেশটিতে ব্যাপক জনবিক্ষোভ শুরু হয় এবং জনরোষে দেশ ছাড়তে বাধ্য হন সাবেক প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসেকে।
পরবর্তীতে প্রেসিডেন্ট পদ থেকে পদত্যাগও করেন তিনি। ২০১৯ সালে দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন রাজাপাকসেকে। তার পদত্যাগের পর বাকি মেয়াদের জন্য প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন বিক্রমাসিংহ।
কলম্বো ভিত্তিক সেন্টার ফর পলিসি অল্টারনেটিভসের সিনিয়র গবেষক ভাবানি ফনসেকা বলেছেন, এবারের নির্বাচন শ্রীলঙ্কার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়। যখন দেশের অর্থনীতি ভয়ঙ্কর বিপর্যয়ের মুখে পতিত রয়েছে। ভাবানি ফনসেকা আরও বলেছেন, নির্বাচন গণতন্ত্রের জন্য অপরিহার্য। কিন্তু এখন নির্বাচনের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে নির্বাচন কমিশনকে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন বাস্তবায়ন করা। দেশটির মোট জনসংখ্যা ২ কোটি ২০ লাখ। এরমধ্যে এবারের নির্বাচনে ভোটার সংখ্যা প্রায় ১ কোটি ৭ লাখ।
বিক্রমাসিংহ দেশটির ভঙ্গুর অর্থনীতিকে কিছুটা স্থিতিশীল করার চেষ্টা করছেন। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছ থেকে প্রায় ২৯০ কোটি ডলার ঋণ পেয়েছেন তিনি। এতে করে দেশটির উচ্চ মূল্যস্ফীতির লাগাম টানতে কিছুটা সফল হয়েছেন বিক্রমাসিংহ। তিনি শ্রীলঙ্কার দায়িত্ব নেওয়ার আগে ২০২২ সালে দেশটির মূল্যস্ফীতি ছিল ৭০ শতাংশ। কিন্তু তার দায়িত্ব নেয়ার পর দেশটির অতি উচ্চ মূল্যস্ফীতি নেমে আসে মাত্র ১ দশমিক ৭ শতাংশে। এছাড়া দেশটির মুদ্রাকে তিনি শক্তিশালী করেছে এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ পুনর্গঠনেও তিনি বিশেষ ভূমিকা পালন করেছেন। ২০২৩ সালে দেশটির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি যেখানে ২ দশমিক ৩ শতাংশে ছিল তা ২০২৪ সালে বেড়ে ৩ শতাংশে উন্নীত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
গত মাসে দেশটিকে জাপান, চীন এবং ভারত প্রায় এক হাজার কোটি টাকা ঋণ দিতে সম্মত হয়েছে। এ বিষয়ে ইতোমধ্যেই শ্রীলঙ্কার সঙ্গে নতুন চুক্তি স্বাক্ষর করেছে ওই দেশগুলো। আগামী ৪ বছরের জন্য ঋণ পরিশোধ মওকুফ করা হয়েছে। তবে চলতি বছর শেষের দিকে আইএমএফ-এর তৃতীয় পর্যালোচনার আগেই দেশটিকে আরও ১ হাজার ২৫০ কোটি ডলারের ঋণ সংগ্রহ করতে হবে। বিশ্ব মুদ্রা তহবিলের অধীনে আরোপিত উচ্চ কর এবং দীর্ঘায়িত মূল্যস্ফীতি ও ভয়াবহ আর্থিক সঙ্কটের মধ্যে দেশটিতে বেকারত্ব বেড়েছে আরও কয়েক গুন। দেশটির এমন আর্থিক সঙ্কটের ফলে সেখানের হাজার হাজার জনগণ দেশ ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন। সুতরাং শ্রীলঙ্কার এবারের নির্বাচন গত কয়েক দশকের মধ্যে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেননা যেই দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হোক তাকে দেশটির আর্থিক খাতে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে ব্যাপক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হবে।