শেখ হাসিনা নয়, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই নির্বাচন হবে: রিজভী

শেখ হাসিনা নয়, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই নির্বাচন হবে: রিজভী

প্রথম নিউজ, যশোর: বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নয়, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই নির্বাচন সুষ্ঠু হবে। সুষ্ঠু ভোট হলে আর ক্ষমতায় যেতে পারবে না আওয়ামী লীগ। তাই আওয়ামী লীগ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনে যেতে চায় না। 
শনিবার (২৭ মে) বিকালে যশোর শহরের ভোলা ট্যাংক রোডে ১০ দফা দাবিতে বিএনপির কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে এক জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, হাসিনার আমলে বাড়ি আর কারাগারের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। বিএনপির নেতা-কর্মীদের সবসময় পুলিশের নজরদারির মধ্যে থাকতে হয়। রাতে বাড়িতে অভিযান চালাচ্ছে। নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারে না। মুক্ত পরিবেশে বাইরে থাকলেও আমরা কারাগারেই বন্দি রয়েছি। 
রিজভী বলেন, দেশের জনগণ শেখ হাসিনাকে আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না। তাই জেলায় জেলায় আন্দোলন শুরু করেছে। কিন্তু সেই আন্দোলন আওয়ামী লীগ শুনতে পায় না। কারণ তাদের কানে শীর্ষা ঢোকানো। আন্দোলনে প্রশাসনকে নিয়ে আওয়ামী লীগ বিএনপির কর্মসূচিতে সন্ত্রাসী হামলা করছে। তারা জানে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করতে পারলে শেখ হাসিনার ক্ষমতায় টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়বে। তিনি আরো বলেন, আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে বলে বেড়াচ্ছেন। এটি বলে তারা নির্বাচনে অংশ নিতে বিএনপিকে টোপ দিচ্ছেন। অথচ গাজীপুরে ৫৪ শতাংশ মানুষ কেন্দ্রেই যায়নি। একজন বৃদ্ধার কাছে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হেরেছে দেখেই বোঝা যায় তাদের অবস্থান বর্তমানে কোথায়। সংবিধানের দোহাই দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনা যাবে না বলে আওয়ামী লীগ বার বার বলছে। সংবিধান কি ভারী কোনো পাথর যে সংশোধন করা যাবে না। সংবিধান মানুষের প্রয়োজনে। এ কারণে রাষ্ট্রের নাগরিকদের প্রয়োজনে এটি সংশোধন করে হলেও তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা চালু করতে হবে।
রুহুল কবীর রিজভী বলেন, আমেরিকার ভিসানীতি চেপে রেখেছিল সরকার। কিন্তু তাতে পার পায়নি। আর এ কারণে প্রতিহিংসায় রাষ্ট্রদূতদের প্রটোকল প্রত্যাহার করেছেন। অথচ আমাদের গার্মেন্ট শিল্পে অধিকাংশ পণ্য আমেরিকা ও মধ্যপ্রাচ্যে যায়। প্রধানমন্ত্রীর প্রতিহিংসার কারণে হাজার হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে যেতে পারেন।
তিনি আরো বলেন, দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় জনগণ জেগে উঠেছে। এখন নেতৃত্ব দিতে হবে বিএনপি ও সমমনা দলগুলোকে। আওয়ামী লীগ এই দেশকে তাদের পৈতৃক সম্পত্তি মনে করে। এ কারণে পুলিশ দিয়ে অত্যাচার করাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, এই সরকার জগদ্দল পাথরের মতো চেপে রয়েছে। তারা জুলুম করে শাসন করে ক্ষমতায় থাকতে চায়। আওয়ামী লীগ গুণ্ডা-সন্ত্রাসী দিয়ে এ দেশ শাসনের সঙ্গে সব অপকর্মও করে যাচ্ছে। এই সন্ত্রাসী দল না হটানো পর্যন্ত আমরা রাজপথে থাকবোই। গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে অটুট থাকবো।  নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মূল্য বৃদ্ধির সমালোচনা করে রুহুল কবির রিজভী বলেন, আলোর গতির মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বাড়ছে। সরকার একের পর এক দেশ ভিজিট (সফর) করছে; দেশে ফিরে এসে উন্নয়নের গল্প শোনান। ৯০০ টাকায় গরুর মাংস খেতে হচ্ছে, চিনি তো পাওয়াই যাচ্ছে না। বাংলাদেশে চিনি বিদেশিনী গানের মতো হয়ে গেছে। যেখানে মানুষ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে পারছে না সেখানে এত উন্নয়নের গল্প কিসের। সরকার উন্নয়নের নামে দেশের মানুষকে ধোকা দিচ্ছে।

যশোর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক নার্গিস বেগমের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য বিষয়ক সহসম্পাদক জাহানারা সিদ্দিকী, কেন্দ্রীয় বিএনপির সাবেক দপ্তর সম্পাদক মফিকুল হাসান তৃপ্তি, কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য সাবিরা নাজমুলসহ আরও অনেকে।