রাশিয়ার অর্থনীতিতে মন্দার শঙ্কা
ইতোমধ্যেই দেশটির বৃহত্তম রপ্তানি পণ্য গ্যাসও বড় বড় তেল আমদানিকারকদের হারিয়েছে। রাজস্ব আয় কমতে শুরু করেছে।
প্রথম নিউজ, ডেস্ক : ইউক্রেন হামলার পর থেকেই বিশ্বব্যাপী তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির কারণে মস্কোর মুনাফা বেড়েছিল। কিন্তু সেই দিন এখন আর নেই। যুদ্ধ দ্বিতীয় বছরে গড়াতেই পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার জোরালো প্রভাব পড়তে শুরু করেছে দেশটির অর্থনীতিতে। ইতোমধ্যেই দেশটির বৃহত্তম রপ্তানি পণ্য গ্যাসও বড় বড় তেল আমদানিকারকদের হারিয়েছে। রাজস্ব আয় কমতে শুরু করেছে। প্রবৃদ্ধি দীর্ঘমেয়াদে নিম্নগামী হচ্ছে। সরকারের কোষাগারেও চাপ পড়ছে। সব মিলিয়ে ভয়ংকর এক শঙ্কা ছড়িয়ে পড়েছে দেশটির অর্থনীতিতে।
বুধবার প্রকাশিত মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে রুশ রাজকোষের এ চরম চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। পরদিন বৃহস্পতিবারই পত্রিকাটির মস্কো প্রতিনিধিকে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে গ্রেফতার করেছে রাশিয়া। রুশ অর্থনীতির মন্দাবস্থা নিয়ে করা প্রতিবেদনটিই ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে প্রকাশিত তার সর্বশেষ প্রতিবেদন। ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল, আলজাজিরা, সিএনএন।
অনুসন্ধানীতে বলা হয়েছে, নভেম্বর থেকে ডলারের বিপরীতে রুশ মুদ্রা রুবলের দরপতন হয়েছে ২০ শতাংশের বেশি। তরুণদের সেনাবাহিনীতে নিয়োগ বা দেশ ছেড়ে পালানোর কারণে শ্রমশক্তি কমে গেছে। ব্যবসায় বিনিয়োগে ছড়িয়ে পড়েছে অনিশ্চয়তা। রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক সাবেক কর্মকর্তা আলেক্সান্ডার প্রকোপেঙ্কো বলেন, রাশিয়ার অর্থনীতি দীর্ঘমেয়াদের মন্দার দিকে ঝুঁকছে। অবশ্য অর্থনীতি এমন খারাপ বা স্বল্পমেয়াদি হুমকি হয়ে দেখা দেয়নি যার ফলে রাশিয়া যুদ্ধ চালিয়ে যেতে ব্যর্থ হবে। কিন্তু রাষ্ট্রীয় রাজস্ব কমে যাওয়া ইঙ্গিত দিচ্ছে ক্রমেই জটিল হচ্ছে পরিস্থিতি।
একদিকে যুদ্ধের বিশাল ব্যয় চালিয়ে যাওয়া অন্যদিকে বেসামরিকদের দুর্ভোগে পড়া থেকে সহযোগিতা করা সামাজিক ব্যয় ও ভর্তুকি চালিয়ে যাওয়ার মতো কঠিন পরিস্থিতি বিরাজ করছে। রুশ ধনকুবের ওলেগ ডেরিপাস্কা চলতি মাসে সতর্ক করে বলেছেন, রাশিয়ার নগদ অর্থ ফুরিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, আগামী বছর কোনো অর্থ থাকবে না, আমাদের বিদেশি বিনিয়োগকারী প্রয়োজন। ইউরোপীয় বাজার হারানো ও পশ্চিমা বিনিয়োগকারীদের চলে যাওয়ার কারণে রাশিয়াকে আরও বেশি চীনের ওপর নির্ভরশীল হতে হচ্ছে।
এতে আশঙ্কা বাড়ছে, রাশিয়া একসময় চীনের অর্থনৈতিক উপনিবেশে পরিণত হতে পারে। লন্ডনের ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ থিংক ট্যাংকের সিনিয়র ফেলো মারিয়া শাগিনা বলেন, চলমান পরিস্থিতিতে স্বল্পমেয়াদে রাশিয়া টিকে থাকার সক্ষমতা থাকলেও দীর্ঘমেয়াদে তা কঠিন। মস্কোকে আরও বেশি বেইজিংয়ের ওপর নির্ভরশীল হতে হবে। এই পরিস্থিতির জন্য রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের একটি ভুল বাজি দায়ী হতে পারে।
গত বছর পুতিন ধারণা করেছিলেন, পশ্চিমাদের জ্বালানি সরবরাহ কমিয়ে দিলে তারা ইউক্রেনকে সমর্থন দেওয়া থেকে বিরত থাকবে। কিন্তু বাস্তবে তা ঘটেনি। কিয়েভের প্রতি সমর্থন প্রত্যাহার করার বদলে ইউরোপীয় সরকারগুলো দ্রুত প্রাকৃতিক গ্যাস ও তেলের নতুন উৎসের সন্ধান বের করে। ইউরোপগামী বেশির ভাগ রুশ গ্যাসের প্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়। শুরুতে দাম বাড়লেও কিছু দিনের মধ্যেই তা কমে যায়।
এখন মস্কো তেলের উৎপাদন কমাতে বাধ্য হচ্ছে। জুন মাস থেকে নিজেদের তেলের উৎপাদন ৫ শতাংশ কমানোর ঘোষণা দিয়েছে দেশটি। বিভিন্ন দেশের কাছে সস্তায় তেল বিক্রি করছে তারা। এর ফলে গত বছরের তুলনায় চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে রাশিয়ার জ্বালানি রাজস্ব কমেছে প্রায় অর্ধেক। বেড়েছে বাজেট ঘাটতি। প্রথম দুই মাসে এই ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৩৪ বিলিয়ন ডলার। যা দেশটির মোট অর্থনৈতিক উৎপাদনের দেড় শতাংশের সমান বা সামান্য বেশি। এতে দেশটি নিজের সার্বভৌম সম্পদ তহবিলের দ্বারস্থ হচ্ছে।
যা দেশটির সংকট মোকাবিলার প্রধান তহবিল। রুশ সরকার এখনো দেশের ভেতর থেকে ঋণ সংগ্রহ করতে সক্ষম। সার্বভৌম সম্পদ তহবিলে এখনো রয়েছে ১৪৭ বিলিয়ন ডলার। যদিও যুদ্ধের পর এই তহবিল থেকে ২৮ বিলিয়ন ডলার কমেছে। চীন ও ভারতের তেল বিক্রির উপায় পেয়েছে মস্কো। পশ্চিমাদের কাছ থেকে আমদানি করা যন্ত্রাংশের কিছু সরবরাহ করছে চীন। রুশ কর্মকর্তারা পরিস্থিতি কঠিন বলে স্বীকার করছেন। কিন্তু তারা দাবি করছেন তাদের অর্থনীতি দ্রুত খাপ খাইয়ে নিতে পারবে।
Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel: